ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিটাগংকে হারিয়ে প্রথম জয় সিলেটের

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

চিটাগংকে হারিয়ে প্রথম জয় সিলেটের

মিথুন আশরাফ ॥ চিটাগং ভাইকিংস ও সিলেট সিক্সার্স ম্যাচে চরম উত্তেজনা তৈরি হলো। শেষ ওভারে নাটকীয়তার দেখা মিলেই যাচ্ছিল। শেষের এক ওভারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও দেখা গেল। কিন্তু ৫ রানে জিতল সিলেট। জিতে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল ডেভিড ওয়ার্নারের দল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দিনের ম্যাচে রান হয় না, ঢাকা ডায়নামাইটসের পর সিলেট সিক্সার্সও এই অপবাদ দূর করল। তাতে যোগ হলো চিটাগংও। ডেভিড ওয়ার্নারের ৫৯, নিকোলাস পুরানের অপরাজিত ৫২, আফিফ হোসেন ধ্রুবর ৪৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৮ রান করে সিলেট। বড় স্কোরই গড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার রবি ফ্রাইলিঙ্ক ৩ উইকেট নেন। এই স্কোরের সামনে পড়ে নুয়ে পড়েনি চিটাগং ব্যাটসম্যানরা। তারাও দলকে জেতানোর একেবারে কাছাকাছি নিয়ে যান। শুরুতে ক্যামরন ডেলপোর্ট (৩৮), মোহাম্মদ আশরাফুল (২২) ও পরে সিকান্দার রাজা (৩৭) ও রবি ফ্রাইলিঙ্ক (৪৪*) মিলেতো ম্যাচই জিতিয়ে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলেছিলেন। শেষ ওভারে জিততে ৬ বলে ২৪ রান লাগে। ফ্রাইলিঙ্কতো দলকে জয়ের কাছাকাছিই নিয়ে যান। কিন্তু ১৮ রানের বেশি করা যায়নি। ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৩ রান করতে পারে চিটাগং। তাসকিন একাই নেন ৪ উইকেট। সিলেটও শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। মোহাম্মদ শাহজাদ দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। তাসকিন আহমেদের করা দ্বিতীয় বলেই কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কাও হাঁকান শাহজাদ। কিন্তু চতুর্থ বলেই ওয়ার্নারের কাছে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় শাহজাদকে। তবে শাহজাদের অভাব দূর করে দেন ক্যামরন ডেলপোর্ট। টানা ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডেলপোর্ট। তাসকিনের এক ওভারে এক ছক্কা ও দুই চার হাঁকান ডেলপোর্ট। নাসির হোসেনকেও ছাড় দেননি। দেখতে দেখতে পাওয়ার প্লেতে ৫৮ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়ে যায়। মোহাম্মদ আশরাফুলও যেন ডেলপোর্টের ধুন্ধুমার ব্যাটিং থেকে অনুপ্রাণিত হন। আল-আমিনের করা ষষ্ঠ ওভারে টানা দুই বলে দুই চার হাঁকান। দ্বিতীয় বলে যখন বাউন্ডারি হাঁকান তখন পাঁচ বছর পর আবার বিপিএলে আশরাফুলের ব্যাট থেকে বাউন্ডারির দেখা মিলে। ডেলপোর্ট ও আশরাফুল মিলে দ্রুতই ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। খুব বেশিদূর অবশ্য এই ধারা বজায় রাখতে পারেননি ডেলপোর্ট ও আশরাফুল। দলের ৬৩ রানের সময় ডেলপোর্ট (২২ বলে ৩৮ রান) রান আউট হয়ে যান। ডেলপোর্ট-আশরাফুলের জুটি ৫৭ রানেই থেমে যায়। কিছুক্ষণ পর দলের ৬৯ রানে গিয়ে আশরাফুলও (২৩ বলে ২২ রান) আউট হয়ে যান। দল বিপদে পড়ে যায়। ৭৪ রানে গিয়ে যখন মুশফিকুর রহীমও আউট হলে খেলা সিলেটের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সিকান্দার রাজা ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। রানের গতিও মোটামুটি সচল থাকে। কিন্তু আরেকদিকে উইকেট পড়তে থাকে। অলক কাপালীর লেগ স্পিনে মুশফিক ধোঁকা খাওয়ার পর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও বোল্ড হন। ৯৪ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ৪২ বলে চিটাগংয়ের জিততে ৭৫ রান লাগে। রবি ফ্রাইলিঙ্ককে সঙ্গে নিয়ে এরপর অনেকদূর এগিয়ে যান সিকান্দার। কিন্তু দলের ১৩১ রান হতেই তাসকিনের বলে বোল্ড হয়ে যান সিকান্দার (২৮ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৭ রান)। চিটাগংয়েরও জয়ের সব আশা যেন শেষ হয়ে যায়। ১৪ বলে জিততে যখন ৩৮ রান লাগে তখন টানা দুই বলে সিকান্দার ও নাঈম হাসানকে আউট করে দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করে নেন তাসকিন। শেষ পর্যন্ত ৬ বলে জিততে ২৪ রান লাগে চিটাগংয়ের। শেষ মুহূর্তে নাটকীয়তার সৃষ্টি হতে থাকে। ম্যাচে উত্তেজনা তৈরি হয়ে যায়। আল-আমিনের করা শেষ ওভারে ফ্রাইলিঙ্কতো সিলেট ক্রিকেটারদের ভেতর হারের ভয়ই ঢুকিয়ে দেন। শেষ ওভারের প্রথম চার বলে দুই ছক্কায় ১৫ রান নিয়ে নেন ফ্রাইলিঙ্ক। ২ বলে জিততে লাগে ৯ রান। পঞ্চম বলে ২ রান নেন। শেষ বলে জিততে লাগে ৭ রান। ১ রানের বেশি নিতে পারেননি ফ্রাইলিঙ্ক। শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৪৪ রান করেন ফ্রাইলিঙ্ক। ম্যাচ জেতাতে পারেননি তিনি। তবে এত বড় স্কোরেও ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এনে দেয়ার পেছনে ফ্রাইলিঙ্কই সবচেয়ে আসল ভূমিকা রাখেন। সিলেট অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার টস জিতলেন, কিন্তু আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ৬ রান হতেই নেই ৩ উইকেট। লিটন কুমার দাস, একাদশে সুযোগ পাওয়া নাসির হোসেন ও সাব্বির রহমান রুম্মন হতাশ করলেন। এমন অবস্থা হওয়ার পর ওয়ার্নার ও আফিফ হোসেন ধ্রুবতেই ভরসা খোঁজা হয়। ধ্রুবতো দুর্দান্ত ব্যাটিংও করতে থাকেন। তিন উইকেট পড়ার পর ব্যাট হাতে নেমে প্রতি ওভারেই ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। ৩ ওভারে যেখানে ৩ উইকেট হারিয়ে ৭ রান থাকে। সেখানে পরের তিন ওভারে ৩৩ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়ে যায়। ধ্রুবই এর মধ্যে ১৩ বলে ২২ রান করে ফেলেন। মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। ওয়ার্নার নিজেকে সামলে রাখেন। যেহেতু ধ্রুব ধুন্ধুমার ব্যাটিং করছিলেন। সাফল্যও মিলে। তাই ওয়ার্নার বারবার ধ্রুবকেই ব্যাটিং করার সুযোগ করে দেন। অষ্টম ওভারের সময় ৩১ বলেই ওয়ার্নার-ধ্রুব জুটি ৫০ রান জমা করে ফেলে। ১০ ওভারে গিয়ে ৭৪ রান করে ফেলে সিলেট। ৪৫ রান করে ফেলেন ধ্রুব। আর বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি তিনি। খালেদ আহমেদের করা ১১তম ওভারের তৃতীয় বলে গিয়ে আউট হয়ে যান ধ্রুব (২৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৫ রান)। ৭৭ রানে সাজঘরে ফেরেন অসাধারণ ব্যাটিং করা ধ্রুব। তাতে ওয়ার্নারের সঙ্গে ধ্রুবর জুটি ৭১ রান পর্যন্ত টিকে। ধ্রুবর আউটের পর যেন রানের গতি আরও বেড়ে যায়। নিকোলাস পুরান ব্যাট হাতে নেমেই বিধ্বংসী নৈপুণ্য উপহার দেন। ওয়ার্নারও নিজের খোলস ছেড়ে বের হন। দুইজন মিলে বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি মারতে থাকেন। রানও দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। ওয়ার্নার এর মধ্যে ৪১ বলে ৫০ রান করে ফেলেন। বিপিএলে প্রথমবার খেলতে নেমে দ্বিতীয় ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান ওয়ার্নার। নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন ওয়ার্নার। আরেকদিকে পুরানতো চিটাগং বোলারদের বারোটা বাজিয়ে ছাড়েন। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের করা দলের ১৭তম ওভারে দুই ছক্কা হাঁকান পুরান। রবি ফ্রাইলিঙ্কের করা ১৯তম ওভারেও এক ছক্কা, চার মারেন পুরান। তার এমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সিলেটের স্কোরবোর্ডও মজবুত হতে থাকে। এর মধ্যে ওয়ার্নার (৪৭ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রান) অবশ্য আউট হয়ে যান। তবে ওয়ার্নার-পুরান মিলে গুরুত্বপূর্ণ জুটিটিই (৭০ রানের) গড়েন। ওয়ার্নার দলের ১৪৭ রানে আউট হলেও পুরান শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই থাকেন। শুধু কি অপরাজিত থাকেন, ৩২ বলে ৩ ছক্কা ও ৩ চারে ৫২ রানও করেন পুরান। দলও শেষ পর্যন্ত ১৬৮ রানের বড় স্কোরই গড়ে। যেখানে ৬ রানে ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল সেখানে সিলেট ১৭০ রানের কাছাকাছি চলে যায়। তা সম্ভব হয় ধ্রুব, ওয়ার্নারের পর পুরানের ঝলক দেখানো ব্যাটিংয়ে। জয়ও মিলে। সিলেট জয়ের ধারায় ফিরে। স্কোর ॥ সিলেট সিক্সার্স- ১৬৮/৫; ২০ ওভার (লিটন ০, ওয়ার্নার ৫৯, নাসির ৩, সাব্বির ০, আফিফ ৪৫, পুরান ৫২*, কাপালী ২*; ফ্রাইলিঙ্ক ৩/২৬)। চিটাগং ভাইকিংস- ৬৩/৭; ২০ ওভার (শাহজাদ ৬, ডেলপোর্ট ৩৮, আশরাফুল ২২, মুশফিক ৫, সিকান্দার ৩৭, সৈকত ৭, ফ্রাইলিঙ্ক ৪৪*, নাঈম ০, সানজামুল ২*; তাসকিন ৪/২৮, কাপালী ২/৬)। ফল ॥ সিলেট সিক্সার্স ৫ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নিকোলাস পুরান (সিলেট সিক্সার্স)।
×