ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জড়িত ভূমি কর্মকর্তা

অভিনব কায়দায় ভূমি ক্ষতিপূরণের ২২ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

অভিনব কায়দায় ভূমি ক্ষতিপূরণের ২২ লাখ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৯ জানুয়ারি ॥ মাদারীপুরে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অভিনব কায়দায় জমির ক্ষতিপূরণের প্রায় ২২ লাখ টাকা উত্তোলন চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ করা হয়েছে শিবচরের দ্বিতীয়াখ- ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মাহমুদ বেপারি ও তার স্ত্রী রাবেয়ার বিরুদ্ধে। শিবচর দাদাভাই উপশহরের অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের জন্য এরই মধ্যে মাদারীপুর এলএ শাখায় বিল জমা দেয়া হয়েছে। জমির মালিক শিবচর পৌর এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের খানকান্দি গ্রামের মৃত আঃ রহমানের ছেলে মোঃ আনোয়ারুল কবির খান জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতারক মাহমুদ বেপারি ও তার স্ত্রী রাবেয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগ করেছেন। তবে অফিসে গিয়ে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদ বেপারিকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ২০১৭ সালে শিবচর উপজেলায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আওতায় দাদাভাই উপশহর প্রকল্পে দ্বিতীয়াখ- ইউনিয়নের ঠেঙ্গামারা মৌজার ৪৬নং খতিয়ানের জেএল নং-৭৮, দাগ নম্বর-২২২/৭৯০ দাগে ৩২ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৯ টাকা ৩৪ পয়সা মূল্য নির্ধারণ করে। জেলা প্রশাসকের পক্ষে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আল মামুন গত বছর ১১ ডিসেম্বর জমির মালিক মৃত আবদুর রহমান খানের মেজ ছেলে মৃত জুনু খানের নামে (রেজাউল কবির খান) নোটিস প্রদান করেন। জুনু খান গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এছাড়া আবদুর রহমান খান ওরফে হাসমত আলী খান ২০০১ সালের ২২ জানুয়ারি মারা যান। অথচ মৃত আবদুর রহমান খান ওরফে হাসমত আলী খানের নামে ভুয়া পরিচয়পত্র (নং ৫৪২৮৭০৭৬৫৪২২৫) তৈরি করা হয়। কিন্তু সে সময় পরিচয়পত্রের কোন প্রচলন ছিল না। এলএ শাখার চিঠি গোপন রেখে দ্বিতীয়াখ- ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদ বেপারি তার স্ত্রী রাবেয়ার নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের আবেদন করেন। দাখিলকৃত কাগজপত্রে দেখা গেছে, আবেদনকারিনী রাবেয়ার আইডি নং- ৫৪১৪০১১৬২৮১২৭। তার স্বামীর নাম মোহাম্মদ মাহমুদ বেপারি। পিতা হারেজ হাওলাদার, মাতা সেলিমা বেগম, জন্ম তারিখ ০১ মে ১৯৮২ উল্লেখ করা হয়। পরিচয়পত্রে ঠিকানায় কালকিনি উপজেলার উত্তর কানাইপুর গ্রাম উল্লেখ রয়েছে। রাবেয়ার পরিচয়পত্রে উল্লেখিত স্বামী মোহাম্মদ মাহমুদ বেপারি শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়াখ- ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা। জমির মালিক আনোয়ারুল কবির বলেন, আমার বাবা আঃ রহমান খান ওরফে হাসমত খান ২০০১ সালে ২২ জানুয়ারি এবং মেঝভাই রেজাউল কবির খান ওরফে জুনু খান গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান। কিন্তু আবেদনকারী রাবেয়া আমার পিতার ভুয়া পরিচয়পত্র বানিয়ে অজ্ঞাতনামা এক বৃদ্ধের ছবি সংযুক্ত করে আমার বাবা তাকে টাকা উত্তোলনের ক্ষমতা দিয়েছে বলে ভুয়া ক্ষমতাপত্র প্রস্তুত করেন। সেই ক্ষমতাপত্র ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেছেন। এই প্রতারণার সঙ্গে এলএ শাখার এক কর্মচারী জড়িত। ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদ বেপারি মোবাইলে বলেন, আবদুর রহমান নামের এক বৃদ্ধ আমার স্ত্রীকে টাকা উত্তোলনের ক্ষমতা প্রদান করেন। ক্ষমতাপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করে আমি এলএ অফিসের সার্ভেয়ার রাসেলের কাছে জমা দেই। কাগজপত্র দেখে সার্ভেয়ার রাসেল রাবেয়ার নামে বিল পরিশোধ করবে বলে আমাকে আশ^াস দেয়। পরে অন্য একটি পক্ষ টাকা দাবি করে আবেদন করে। এ কারণে কথিত ওই আবদুর রহমান কয়েকদিন আগে সার্ভেয়ার মহিউদ্দিনের কাছে আসে। সার্ভেয়ার মহিউদ্দিন তখন বৃদ্ধকে (ক্ষমতা প্রদানকারী) কয়েকদিন আগে এডিসির কাছে নিয়ে যায়।
×