ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উপকূলীয় বাঁধের কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

উপকূলীয় বাঁধের কাজ শুরু

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৯ জানুয়ারি ॥ বঙ্গোপসাগর ও নদীঘেঁষা ৩৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের পুনরাকৃতিকরণে বদলে যাবে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার দৃশ্যপট। এর মধ্যে ২২ কিমি হবে মেরিন ড্রাইভ রোড। ফলে একদিকে সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গনের কবল থেকে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরের মানুষ ও তাদের সম্পদ রক্ষা পাবে। অপরদিকে দীর্ঘ এলাকা পর্যটকের ভ্রমণের আকর্ষণে পরিণত হবে। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৪৮ নম্বর পোল্ডারের মিরাবাড়ির দুটি, মাঝিবাড়ি ও খাজুরার এই ভাঙ্গন কবলিত স্পটগুলোতে ভাঙ্গন রোধের পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষিকাজের সুবিধার্থে এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনটি স্লুইস মেরামত এবং আটটি স্লুইস নতুন করে নির্মিত হবে। ২০১৭ সালে এ কাজ শুরু হয়েছে। আশাখালী পয়েন্টের একটি স্লুইস নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। শেষের পথে ফাঁসিপাড়া স্লুইসের নির্মাণ কাজ। আর বাকি তিনটির কাজ চলমান রয়েছে। আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর ছাড়াও সাগর উপকূলের মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষাসহ কৃষিকাজের নিরাপত্তায় এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ বাঁধটির নির্মাণ কাজ করছে চায়নার চংচিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন। কাজটি সম্পন্ন হলে দীর্ঘপথ দেখতে হবে দৃষ্টিনন্দন। কুয়াকাটা পৌরশহরসহ গোটা পর্যটন এলাকা অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবন থেকে রক্ষা পাবে। শঙ্কা কেটে যাবে জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা থেকে। লগ্নিকারকসহ হোটেল-মোটেল মালিকদেরও কেটে যাবে বিনিয়োগ উৎকণ্ঠা। বদলে যাবে সৈকতের চেহারা। প্রকল্পের পরামর্শক পাউবোর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী দিদারুল আলম জানান, সাগরঘেঁষা লতাচাপলী ও ধুলাসার দুই ইউনিয়সহ কুয়াকাটা পৌর এলাকার রক্ষাকবচ ৩৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আধুনিকভাবে বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধের মতো করে পুনঃনির্মাণ করা হবে। বাঁধটির সাগর ঘেঁষা ২২ কিলোমিটার এলাকার টপ চওড়া হবে ছয় মিটার। রিভার সাইটের এক ফুট উঁচু করা হলে সাত ফুট থাকবে স্লোপ। কান্ট্রি সাইটের এক ফুট উচ্চতায় স্লোপ হবে দুই ফুট। টোটাল ২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধটি মেরিন ড্রাইভ রোড করা হবে। যার উচ্চতা হবে সাড়ে ২৪ ফুট। এ অংশে সিসি ব্লক প্লেসিং করে দেয়া হবে। পর্যটকের বসার জন্য বেঞ্চ করা হবে। যেখানে বসে আগতরা জমিয়ে আড্ডার পাশাপাশি স্বল্পকালীন বিশ্রামও নিতে পারবেন। বাঁধটির আধুনিকায়নের মধ্যে টপে পর্যটকের ভ্রমণের জন্য ওয়াকিং জোন থাকছে। এক কথায় দীর্ঘ বাঁধটি হবে দৃষ্টিনন্দন। এ বাঁধটির বাকি অংশ যেভাবে আছে সেভাবেই পুনরাকৃতিকরণ করা হবে। ২০২১ সালে এ কাজটি শেষ হওয়ার কথা। বর্তমানে স্লুইসগুলো নির্মাণের কাজ চলছে। এর আগে বাঁধের দুইদিকের স্লোপে তোলা স্থাপনার মালিকসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা বসবাস করত তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করা হয়েছে। এ প্রকল্পের পরামর্শক আরও জানান, শুধু জলোচ্ছ্বাস ঠেকানো উদ্দেশ্য নয়। কুয়াকাটাকে পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় করতে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় এমন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, সাগরের অব্যাহত তীব্র ভাঙ্গনে সৈকতের বেলাভূমি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। এমনকি মানুষ ও তাদের সম্পদ রক্ষাকবচ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের চারটি স্পটে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। রিভার সাইটের স্লোপসহ মূলবাঁধের টপ এক তৃতীয়াংশ বিলীন হয় মাঝিবাড়ি ও মিরাবাড়ি স্পটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে সিসি ব্লক দিয়ে ভাঙ্গন রোধে প্রটেকশন দেয়া হয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, এই কাজটি শেষ হলে কুয়াকাটার সকল মানুষসহ পর্যটকের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। এছাড়া লগ্নিকারকরাও আগ্রহ পাবে বিনিয়োগে। কুয়াকাটার সৌন্দর্যও বাড়বে বহুগুণে।
×