ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে আলুর বাম্পার ফলনের আশা চাষীদের

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

যশোরে আলুর বাম্পার ফলনের আশা চাষীদের

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ততা বেড়েছে যশোরের আলু চাষীদের। চলতি মৌসুমে ব্যাপক হারে আলুর চাষ করেছেন এ অঞ্চলের কৃষক। আবহাওয়া বিরূপ না হলে এবার আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন যশোরের ৮ উপজেলার চাষীরা। গত মৌসুমে আলুর ফলন বিপর্যয় ও দাম না পেয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েন চাষীরা। পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বছরও বিপুল পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করেছেন চাষীরা। জেলার সাতমাইল, খাজুরা, নোঙরপুর, তীরের হাট, আব্দুল্লাহপুরসহ কয়েকটি এলাকার মাঠজুড়ে দেখা যায় আলুরক্ষেত। ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলনের সময় কাক্সিক্ষত দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় চাষীরা। যশোর সদরের নোঙরপুর গ্রামের আলু চাষী মমরেজ আলী জানান, খারাপ আবহাওয়া ও আলুর বাজারদর কম থাকায় গতবার বিঘা প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়। এ বছর বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রম ব্যয়। সঙ্গে যোগ হয়েছে বীজের দামও। সব মিলিয়ে হেক্টর প্রতি এবারের উৎপাদন ব্যয় ৫০ হাজার টাকা। তাই সামনে কাক্সিক্ষত দাম না পেলে ভবিষ্যতে আর আলু চাষ করবেন কিনা তা ভাবতে হবে। কৃষি অধিদফতর বলছে, এ বছর যশোরে আলুর বাম্পার ফলন হবে। চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরে ক্ষেতে ভাইরাসজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিলেও এ বছর তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি কৃষককে। যে কারণে কৃষকদের অনেক বেশি আশাবাদী মনে হয়েছে। মনিরামপুর উপজেলার বেগারীতলা এলাকার কৃষক রমজান আলী জানান, এ বছর ক্ষেতের লক্ষণ দেখে ভাল মনে হচ্ছে। আর কিছুদিন পর এসব জমি থেকে আলু তোলা হবে। ইতোমধ্যে কিছু জমির আলু বাজারে তোলা হয়েছে। কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন বাজারে আলুর দাম ভাল থাকলেও সামনে আলু তোলার উপযুক্ত সময়ে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আলু সংরক্ষণের জন্য জেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে যোগাযোগ করছি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগেভাগে বুকিং দেয়ায় আমরা সুযোগ পাচ্ছি না। কৃষক শরাফৎ আলী বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গত কয়েক বছর আলু চাষে লোকসান হচ্ছে। তবে এ মৌসুমে উপযুক্ত আবহাওয়ায় ভাল ফলনের আশা করছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে বুঝতে পারছি না। কোল্ড স্টোরেজগুলো বড় বড় ব্যবসায়ীরা দখলে নেয়ায় সমস্যা হতে পারে। তারা অতীতের মতো কৃষককে জিম্মি করে পানির দরে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে মজুদ রাখার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। কৃষকরা জানান, আলুর দাম মণ প্রতি যদি ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা হলে লাভবান হওয়া যাবে। কিন্তু দাম পাওয়া যায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। সেক্ষেত্রে তাদের অনেক ক্ষতি হয়। যশোর সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবু ছায়াদ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, এ বছর আলুর চারা খুব ভাল হয়েছে। তবে, চাষীদের মনে একটু ক্ষোভ রয়েছে যে, আলুর দাম যেভাবে কমে আসছে এভাবে কমলে তাদের অনেক ক্ষতি হবে। আমরা কৃষকদের সুসম মাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, শীত বাড়লে আলুর ফলনও ভাল হয়। এ জেলায় কার্ডনাল, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদরে রেকর্ড সংখ্যক জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। এছাড়া চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুরসহ অন্য উপজেলাতেও আলুর আবাদ ভাল হয়েছে। সামনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে কৃষক আলুতে লাভের মুখ দেখবেন বলে তিনি জানান।
×