ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির মামলা করতে কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

রিজার্ভ চুরির মামলা করতে কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আগামী ২৫ দিনের (৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করা হবে। তবে ১৫ জানুয়ারির আগেও মামলা হতে পারে। মামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ফার্ম দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। ওই প্রতিনিধি দলে যোগ দিতে ৮ জানুয়ারি রাতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান। নিয়ম অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এ মামলা করতে হবে। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সংরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গবর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদ বদল। জানা গেছে, চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। কিন্তু ফিলিপিন্সে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনও ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত আসেনি। এই ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়ার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। এ জন্য দেশটিতে দুটি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের ফি নিয়ে একটি প্রাথমিক চুক্তিও করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, চুরি যাওয়া ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধার করে দিতে পারলে ল’ ফার্ম দুটিকে সেই অর্থের ১০ ভাগ দেয়া হবে। সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে প্রধান আসামি করা হবে ফিলিপিন্সে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংককে (আরসিবিসি)। তবে দ্বিতীয় আসামি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে করা হবে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে ল’ ফার্মের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপের পর। এর আগে গত নবেম্বরে ফেডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড) বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। ফেডের পক্ষ থেকে এ ধরনের আশ্বাস পাওয়ার ব্যাপারটি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার পার্ক জিনের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ করে এফবিআই। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে পার্ক জিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনেরও নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশের চুরি যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছে। সূত্রমতে, ল’ ফার্মের আইনী মতামত নতুন অর্থমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে মামলায় আসামি হিসেবে ফেডের নাম থাকবে কি থাকবে না। এর আগে, গত বছরের এপ্রিলে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড) এবং ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, চুরি যাওয়া প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার (২৪৪ কোটি টাকা) গেছে সোলারি ক্যাসিনিওতে। এই পরিমাণ অর্থ ফিলিপিন্সের সুপ্রীমকোর্টের আদেশে ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। আর ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার এবং আরসিবিসি ব্যাংকে জমা ৭০ হাজার ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া যায়নি ১ কোটি ৪২ লাখ ডলারের। বাকি অর্থের মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার আছে ফিলিপিন্সের রেমিটেন্স কোম্পানি ফিলরেমোর হিসাবে। ৬০ লাখ ডলার এখনও রয়েছে কিম অং-এর কাছে। এছাড়া ১২ লাখ ডলারের সন্ধান পাওয়া গেছে কিম ওয়াংয়ের দুজন কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে। বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা এই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি অর্থমন্ত্রীর কাছে অনেক আগে প্রতিবেদন জমা দিলেও এ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি।
×