ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ও নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী ও সাভার ॥ বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বুধবার গাজীপুরে বিভিন্নস্থানে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং মহাসড়ক অবরোধ করেছে। এসময় একাধিক পয়েন্টে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সাংবাদিক ও পুলিশসহ অন্ততঃ ২৮ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে এদিনও বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। জেলার শিল্পাঞ্চলে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি ভ্রান্ত ধারণা থেকে শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে গত কয়েকদিন ধরে এ আন্দোলন করে আসছে। এদিকে, এদিন সাভারের ১২টি স্থানে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। গাজীপুর থেকে পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামোয় বৈষম্যের অভিযোগে তা দূর করে ন্যূনতম বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে বুধবারেও গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এদিন ওই দাবিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গাজীপুরা এলাকার হোপলোন এ্যাপারেলস, নাওজোড়ের দিগন্ত সোয়েটার, ভোগড়া, ইসলামপুর, সাইনবোর্ড ও বোর্ডবাজার এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সকালে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসে। বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে পরিত্যক্ত বস্তা ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাংচুর শুরু করে। এতে মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মহাসড়কের ওপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মোঃ এমদাদুল হক জানান, সকাল ৯টার দিকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরা এলাকার ম-ল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে আশপাশের কারখানার সামনে সড়কের ওপর গিয়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আশপাশের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের আহ্বান জানায়। এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় লোপা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিলসহ পাশর্^বর্তী গাজীপুরা এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গিয়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মহাসড়কের ওপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়। সময় টিভির স্থানীয় প্রতিনিধি সৈয়দ মনিরুল আলম এ সময় ভিডিও ফুটেজ নেয়ার সময় পুলিশের লোকজন তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বলে জানিয়েছেন ওই সাংবাদিক। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মোঃ কামাল হোসেন জানান, একই দাবিতে এদিন সকালে টঙ্গীর বিসিক এলাকায় বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে কারখানা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসে এবং কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা অংশ নেয়। এসময় কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা লোহার রড, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে বিভিন্ন পোশাক কারখানা সামনে গিয়ে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে ওইসব কারখানার শ্রমিকদের আহ্বান জানায়। এসময় টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকার নর্দান গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ না দিয়ে বরং আন্দোলনরত শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে বিসিক পানির ট্যাংকি পর্যন্ত নিয়ে গেলে দুই পক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে টিকতে না পেরে নর্দানের শ্রমিকরা তাদের কারখানায় ভেতরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এসময় বহিরাগত শ্রমিকরা নর্দানে হামলা চালাতে গেলে সেখানকার শ্রমিকরা কারখানার ছাদ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বাইরে গরম পানি ছুঁড়তে থাকে। পরে তারা বিকল্প পথে নর্দান কারখানা থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার সময় উত্তেজিত বহিরাগত শ্রমিকরা নর্দানে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজিত শ্রমিকরা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও কর্মীদের বাধা দেয়। এর আগে পার্শ্ববর্তী প্যাট্টিয়ট ইকো এ্যাপারেলস নামের একটি নতুন কারখানায় ব্যাপক ভাংচুর চালায় বহিরাগত শ্রমিকরা। কারখানার প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে ভাংচুরের পর সেখানে একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দমকল বাহিনীর কর্মীরা যেতে না পারায় অবশেষে কারখানার নিজস্ব অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে টিয়ার শেল শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এদিকে একই দাবিতে এদিন সকাল হতে গাজীপুর মহানগরের নাওজোর এলাকায় দিগন্ত সোয়েটার কারখানাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা বিক্ষোভ করে কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর অবস্থান নেয়। এসময় তারা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন পরিত্যক্ত বস্তা ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে মহাসড়কের উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শ্রমিকদের হামলায় চ্যানেল টোয়েন্টিফোর-এর গাজীপুর প্রতিনিধি মোঃ রফিকুল ইসলাম আহত হয়। উত্তেজিত শ্রমিকরা তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও ভাংচুর করে। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ওই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। এছাড়াও প্রায় একই সময় ভোগড়া, ইসলামপুর, সাইনবোর্ড, বোর্ডবাজার, কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা এদিন কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। এসময় তারা কারখানা ও গাড়িসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর এবং বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে। অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তারা জানান, কারখানার কর্তৃপক্ষ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বেতন ভাতা শ্রমিকদের দিচ্ছে। কিন্তু বহিরাগত কিছু শ্রমিক বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের জোরপূর্বক কারখানা থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে সড়কে গ-গোল করেছে। ভুল ধারণা থেকে শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে এ আন্দোলন করছে। সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামোয় পোশাক কারখানার সিনিয়র-জুনিয়র অপারেটরদের মূল বেতনসহ আনুষঙ্গিক খাতের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারের আগের ঘোষিত গেজেটে কর্মীদের দক্ষতা অনুযায়ী তাদের গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের বেতন ভাতা কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বেতনের টাকা হাতে পেলেই শ্রমিকদের ভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। কিন্তু বিভিন্ন মহল সিনিয়র অপারেটরদের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়নি বলে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনে ইন্দন দেয়। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে তারা অযৌক্তিকভাবে বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে ভাংচুর করে আসছে। শ্রমিক অসন্তোষ পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কারখানা দেখা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কয়েকটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব কারখানা খুলে দেয়া হবে। গাজীপুরের শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান জানান, সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গাজীপুরের ইতোমধ্যে কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে নোটিস টানিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব কারখানা বন্ধ থাকার কথা ওই নোটিসে উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গী, গাজীপুরা, হোতাপাড়া, কোনাবাড়ী ও কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকসহ জেলার শিল্পাঞ্চল এলাকায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত বিজিবি মোতায়েন থাকবে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বুধবার (৯ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। গত চারদিন ধরে ঢাকার মিরপুর, সাভার-আশুলিয়াসহ গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও মহাসড়ক অবরোধ করছেন। সাভার ॥ নতুন ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে টানা চতুর্থদিনের মতো ১২টি স্থানে বিক্ষোভ করেছে শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক ও বিশমাইল-জিরাবো সড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পোশাক কারখানার সামনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার সকালে সাভারের উলাইল, কাঠগড়া, আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো ও ধামরাইয়ের কচমচ এলাকায় এ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, জলকামান ও লাঠিচার্জ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এদিন সকাল আটটা থেকে শুরু করে দুপুর দুটা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত ২০টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ কয়েকটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জানা গেছে, নতুন ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে বৈষম্য করা হয়েছে- এমন অভিযোগ কয়েকদিন ধরে তা সংশোধনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে আসছে বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বুধবার সকাল ৮টায় সাভারের উলাইল এলাকার স্ট্যান্ডার্ড স্টিচেচ লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদানের জন্য কারখানায় আসে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা জানিয়ে একটি নোটিস ঝুলিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কারখানাটির সুইং অপারেটর আল-আমিন বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগদান করতে এলেও কর্তৃপক্ষ তাদের ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। উল্টো কারখানার ভাড়াটে লোকজন দিয়ে ছাদ থেকে তাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানাটিতে ভাংচুরের চেষ্টা করলে কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট সড়কটি অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল, জলকামান ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় শ্রমিক বিক্ষোভের আশঙ্কায় স্থানীয় আল-ইসলামসহ কয়েকটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্ট্যান্ডার্ড স্টিচেচ লিমিটেড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার লুৎফর রহমান বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বাড়ি চলে যান। শনিবার পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। রবিবার কারখানা খুলার পর আপনাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে। এদিকে একই দাবিতে সকাল থেকেই গে-া এলাকার আল-মুসলিম গ্রুপের প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কারখানার ভিতরে কর্মবিরতি পালন করে। কিন্তু মালিকপক্ষ দাবির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না দেয়ায় সকাল নয়টার দিকে সকল শ্রমিক একযোগে কারখানা থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহসড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে সড়কটিতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে পুলিশ সদস্যরা শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, জলকামান ও লাঠিচার্জ করে। এ সময় শ্রমিকরা পিছু হটলেও পরবর্তীতে গে-া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আবারও সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে তারা সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এভাবে সকাল নয়টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় সড়ক অবরোধ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। আল-মুসলিম গ্রুপের নারী শ্রমিক মালেকা বলেন, নতুন মজুরি কাঠামোতে হেলপারদের বেতন ৩ হাজার টাকা বাড়লেও অপারেটরদের বেড়েছে মাত্র এক হাজার টাকা। কারখানার ভিতরে মোবাইল নিতে না দেয়ায় আমরা অসুস্থ হলে কিংবা কেউ মারা গেলেও খবর পাই না। অপরদিকে একই দাবিতে আশুলিয়া থানাধীন কাঠগড়া, আমতলা, জামগড়া, নরসিংহপুর, ঘোষবাগ, নিশ্চিন্তপুর, সরকার মার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের চলে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক সানা শামিনুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি জলকামান ও সাঁজোয়াযানের মহড়া অব্যাহত আছে। উল্লেখ্য, চলমান শ্রমিক বিক্ষোভের মঙ্গলবার শ্রমিক পুলিশ সংঘর্ষের সময় মঙ্গলবার দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে সুমন মিয়া খাঁ (২২) নামে আনলিমা পোশাক কারখানার এক শ্রমিক মারা যায়। নারায়ণগঞ্জ ॥ স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে ওয়েস্ট নিট ওয়্যার লিঃ ও পিএম নিট টেক্সটাইল নামে দুটি কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সড়ক অবরোধ করেছে। খবর পেয়ে থানা ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের বিষয়টি সমস্যার সমাধানের আশ্বস্ত করা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। অবশ্য শিল্পাঞ্চল পুলিশের দাবি শ্রমিকরা ৫-৭ মিনিটের মতো রাস্তায় অবস্থান করেছিল। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। বুধবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আদমজীর সুমিলপাড়ার ওয়েস্ট নিট ওয়্যার এবং বেলা ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গোদনাইলের পিএম নিট টেক্সটাইল কারখানা শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, বুধবার বেলা ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া এলাকার ওয়েস্ট নিট ওয়্যার কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কাজ বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় কিছু শ্রমিকরা নারায়ণণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কে এসে অবরোধ করে। খবর পেয়ে থানা ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ গিয়ে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। পরে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশ মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। অপরদিকে সিদ্ধিরগঞ্জের চৌধুরীবাড়ি এলাকায় পিএম নিট ওয়্যার গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেলা বারোটায় কাজ বন্ধ করে দিয়ে কারখানার সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় থানা ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তা থেকে সরিয়ে কারখানার ভেতরে নিয়ে যায়। পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বস্ত করা হলে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। দুটি কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শিল্পাঞ্চল পুলিশ-৪, নারায়ণগঞ্জ জোনের পরিচালক পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দুটি কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছিল। খবর পেয়ে পুলিশ কারখানায় গিয়ে ৫-৭ মিনিটের মধ্যে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। পরে তাদের কারখানার ভেতরে নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
×