ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিটাগংকে হারাল সিলেট

মিরাজ ঝলকে রাজশাহীর প্রথম জয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

মিরাজ ঝলকে রাজশাহীর প্রথম জয়

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান কি দুর্দান্ত ব্যাটিংটাই না করলেন। তার ৩২ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় করা অপরাজিত ৫২ রানে জয়ের ধারায় ফিরেছে সিলেট সিক্সার্স। পুরানে যেন নতুনরূপে ধরা দিয়েছে ডেভিড ওয়ার্নারের সিলেট। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার রবি ফ্রাইলিঙ্কের শেষ মুহূর্তের ঝলকে ম্যাচ হাতছাড়া হতে চলেছিল। শেষ পর্যন্ত চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে ৫ রানে হারিয়ে দেয় সিলেট। মেহেদী হাসান মিরাজের (৫১) অসাধারণ ব্যাটিং ঝলকে খুলনা টাইটান্সকে টানা তৃতীয় ম্যাচে হারের স্বাদ দিয়ে ৭ উইকেটে জিতে রাজশাহী কিংস। দুই ম্যাচে প্রথম জয় পেল রাজশাহী। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় সিলেট। বুধবারের আগ পর্যন্ত কোন দল যে কাজটি করেনি, সেই কাজ করেছে সিলেট। টস জিতে এর আগে সব দলই ফিল্ডিং নেয়াতেই বেশি মনোযোগী ছিল। কারণও আছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটে যে রানই হচ্ছিল না। তাই অল্পতে প্রতিপক্ষকে বেঁধে রাখা গেলে জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি জেগে যায়। যদিও সেই কাজটি পরে ব্যাটিং করা দল বেশিরভাগ সময়ই করতে পারেনি। সিলেট আগেই ব্যাটিং করতে পছন্দ করেছে। তাতে স্কোরবোর্ডে রানও অনেক বেশিই জমা করেছে। পুরানের সঙ্গে ডেভিড ওয়ার্নারের ৫৯ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর ৪৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৮ রান করেছে সিলেট। চিটাগং ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬৩ রান করতে পেরেছে। ফ্রাইলিঙ্ক অপরাজিত ৪৪ রান করেন। তাসকিন আহমেদ নেন ৪ উইকেট। রাজশাহী-খুলনা ম্যাচে খুলনাও টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু দুই পেসার শ্রীলঙ্কার ইসুরু উদানা (৩/১৫) ও মুস্তাফিজুর রহমানের (২/১৮) দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১১৭ রান করে খুলনা। জুনায়েদ সিদ্দিকী ২৩ রান করেন। জবাব দিতে নেমে মিরাজের ৫১ ও মুমিনুল হকের ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৮.৫ ওভারে ১১৮ রান করে জিতে রাজশাহী। প্রথম ম্যাচে শুরুতে আফিফ হোসেন ধ্রুব মারমুখী হয়ে খেলেছেন। ডেভিড ওয়ার্নার ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছেন। যেই ধ্রুব ৪৫ রান করে আউট হয়েছেন, ওয়ার্নার নিজের খোলস ছেড়ে বের হয়েছেন। ওয়ার্নারের সঙ্গে পুরানতো আরও বিধ্বংসী হয়ে ধরা দিয়েছেন। ৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর ওয়ার্নার ও ধ্রুব মিলে হাল ধরেন। ৭৭ রানে ধ্রুব আউট হওয়ার পর পুরান এসে এমন ব্যাটিংই করেন, চিটাগং বোলারদের বারোটা বাজিয়ে ছাড়েন। দলের ১৪৭ রানের সময় ওয়ার্নার (৫৯) আউট হলেও পুরান তার ব্যাটিং জৌলুস দেখাতেই থাকেন। পুরান যদি এমন মুহূর্তে নিজেকে মেলে না ধরতেন তাহলে হয়তো সিলেট ১৭০ রানের কাছাকাছি রান করতে পারত না। পুরানকে আউটই করতে পারলেন না চিটাগং বোলাররা। আবু জায়েদ রাহীর করা ২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গিয়ে স্কুপ শট খেলে থার্ডম্যান দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন পুরান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। দলকেও ১৬৮ রানে নিয়ে গিয়ে মাঠ ছাড়েন। চিটাগংও চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে। যদিও সব প্রতিদ্বন্দ্বিতা, উত্তেজনা শেষ ওভারেই গিয়ে দেখা গেছে। তাসকিন আহমেদ ও অলক কাপালী মিলে চিটাগংয়ের ইনিংসের মাজা আগেই ভেঙ্গে দেন। ৯৪ রানে ৫ উইকেট হারায় চিটাগং। মোহাম্মদ শাহজাদ, মোহাম্মদ আশরাফুলকে তাসকিন ও মুশফিকুর রহীম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে কাপালী সাজঘরে ফেরান। যিনি বিপদ আনছিলেন, সেই ক্যামরন ডেলপোর্ট (৩৮) হন রান আউট। ৫ উইকেট পড়ার পর সিকান্দার রাজা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ৩৭ রান করা সিকান্দারকেও বোল্ড করে দেন তাসকিন। দলের ১৩১ রানে যখন সিকান্দার আউট হন তখনই চিটাগংয়ের হারের সম্ভাবনা জোরালো হয়ে ওঠে। শেষ দুই ওভারে ১২ বলে জিততে ৩৮ রান লাগে। চিটাগংয়ের জয় অসম্ভবই ধরা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই ফ্রাইলিঙ্ক ঝড় তুলেন। মোহাম্মদ ইরফানের করা ১৯তম ওভারে গিয়ে ফ্রাইলিঙ্কের হাঁকানো দুই ছক্কার সঙ্গে ওভারটিতে ১৪ রান আসে। তাতে ৬ বলে জিততে ২৪ রান লাগে। তখনও জেতা কষ্টসাধ্যই। আল-আমিনের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে সানজামুল ১ রান নিয়ে দেন। দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকান ফ্রাইলিঙ্ক। পরের ২ বলে ১ ছক্কা ও ২ রান নিয়ে ৮ রান করে ফেলেন ফ্রাইলিঙ্ক। খেলায় উত্তেজনা এসে পড়ে। চিটাগংয়ের জয়ের আশা দেখা দেয়। নাটকীয়তার তৈরি হতে পারে। সেইদিকেই সবার নজর থাকে। ২ বলে জিততে ৯ রান যে লাগে। যেভাবে ফ্রাইলিঙ্ক ঝড় উঠেছে, তাতে এক ছক্কা ও এক চার হলেইতো ম্যাচ জিতে যাবে চিটাগং। কিন্তু হলো না। পঞ্চম বলে ২ রান নেয়ায় এক বলে জিততে ৭ রান লাগে। ছক্কা হাঁকালে হবে টাই। তখন ‘সুপারওভারে’ খেলার ফয়সালা হবে। ফ্রাইলিঙ্ক ১ রানের বেশি নিতে পারলেন না। শেষ ওভারে ১৮ রান আসে। ম্যাচ হেরে যায় চিটাগং। ফ্রাইলিঙ্ক নিজের শেষ ১০ বলে ৩০ রান করেন। শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৪৪ রান করেন ফ্রাইলিঙ্ক। তাতে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও দেখা যায়। কিন্তু সিলেট জয় পায়। জয়ের ধারায় ফিরে। পুরান যে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে দেন তাতেই জয় মিলে। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারা দুই দলের লড়াইটা তেমন জমেনি। খুলনার ব্যাটসম্যানরা যে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। উদ্বোধনী উইকেটে পল স্টারলিং ও জুনায়েদ সিদ্দিকী ৪০ রানের জুটি গড়েন। এমন সময় স্টারলিং আউট হওয়ার পর থেকেই যে উইকেট পড়তে থাকে ২৪ রানের মধ্যে, দলের ৬৪ রানে ৪ উইকেট পড়ে। এরপর ডেভিড মালান ও আরিফুল হক মিলে ২৮ রানের জুটি না গড়লে ১২০ রানের কাছেও যেতে পারতো না খুলনা। দলের ৯২ রানে গিয়ে আরিফুল আউট হওয়ার পর ২৫ রানে আরও ৫ উইকেট হারায় খুলনা। ১১৭ রানের বেশি যখন হয়নি তখনই ম্যাচে যে রাজশাহীই জিততে যাচ্ছে তা বোঝা হয়ে যায়। রাজশাহীর ইনিংসেতো চমক মিলে। মোহাম্মদ হাফিজ দ্রুত আউট হতেই অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট হাতে নেমে যান। দুর্দান্ত ব্যাটিংও করেন। মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে ৮৯ রানের জুটিও গড়েন। জিততে যখন ১৮ রান দরকার এমন মুহূর্তে মুমিনুল (৪৩ বলে ৪৪ রান) আউট হতে এ জুটির অবসান ঘটে। দলের ১০০ রানে মুমিনুল আউটের পর ৪৩ বলে ৫০ রান করে ফেলেন মিরাজ। দেশীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এবার বিপিএলে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন। আর ১ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতেই বোল্ড হয়ে যান মিরাজ। শেষ পর্যন্ত সৌম্য সরকার (১১*) ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
×