ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি

একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু ৩০ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু ৩০ জানুয়ারি

সংসদ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি বুধবার। ওই দিন বিকেল ৩টায় যাত্রা শুরু করবে নতুন এই সংসদ। সংসদের প্রথম ও বছরের শুরুর অধিবেশন হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী ওই দিন প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। আগামী ২৮ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ। বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ শীতকালীন এ অধিবেশন আহ্বান করেন। সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখা থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। শুরুর দিন ৩০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- জাতির সামনে তুলে ধরবেন। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব জানাতে সাধারণ আলোচনা হয়। আবার চলমান সংসদের কোন এমপি মারা গেলে অধিবেশন শুরুর পর মুলতবি করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলেও শপথ নিতে পারেননি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাই অধিবেশন শুরুর পর সৈয়দ আশরাফের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আলোচনার পর সংসদের বৈঠক কিছুক্ষণের জন্য মুলতবি করা হবে। এরপর অধিবেশনে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনেই আগামী পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় সংসদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার নির্বাচন করতে হয়। এজন্য কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে নোটিস দিতে হয়। একজন প্রস্তাবক, একজন সমর্থক ও প্রার্থীর সম্মতি লাগে। নানা সূত্রেই জানা গেছে, জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আগামী পাঁচ বছরের জন্য স্বপদে বহাল থাকছেন। বর্তমান স্পীকারকে আবারও একই পদে রাখার বিষয়ে রংপুরের পীরগঞ্জের জনসভায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ডেপুটি স্পীকার কে হবেন, সে বিষয়ে এখনও ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, স্পীকার-ডেপুটি স্পীকার নির্বাচনের পর অধিবেশন কিছু সময় মুলতবি রাখা হবে। এ সময় সংসদে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছ থেকে নতুন স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার শপথ নেবেন। পর নবনির্বাচিত স্পীকারের সভাপতিত্বে শুরু হবে সংসদ অধিবেশন। অধিবেশন শুরুর পর নতুন স্পীকার সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। একাদশ সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ অন্যদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব তোলা হবে। বর্তমান সংসদের কোন সদস্য মারা গেলে শোক প্রস্তাবের আলোচনা শেষে অধিবেশন মুলতবির রেওয়াজ আছে। তবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে কিছু সময়ের জন্য অধিবেশন মুলতবি রাখা হবে। এরপর আবার সংসদের বৈঠক শুরু হলে স্পীকার রাষ্ট্রপতিকে ভাষণ দেয়ার জন্য আহ্বান জানাবেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর অধিবেশন রেওয়াজ অনুযায়ী মুলতবি করা হবে। স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার নির্বাচন ছাড়াও প্রথম অধিবেশনে সংসদের সভাপতিম-লীর মনোনয়ন, শোক প্রস্তাব, অধ্যাদেশ উত্থাপন (যদি থাকে), সংসদীয় কমিটি গঠন (যদি থাকে), সংবিধান বা আইন অনুযায়ী কোন রিপোর্ট উপস্থাপন (যদি থাকে)। তবে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রশ্নকাল থাকে না। এদিকে অধিবেশন শুরুর আগে স্পীকারের সভাপতিত্বে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে শীতকালীন এ অধিবেশন কতদিন চলবে। কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উপস্থিত থাকবেন। তবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা থাকায় শীতকালীন এ অধিবেশনটি দীর্ঘ হবে। গতবারের মতো এবারও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। তবে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের চেয়ারে বসছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্বে থাকবেন এরশাদের ভাই ও দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। আর বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্ব যাচ্ছে মশিউর রহমান রাঙ্গার কাছে। গতবার বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ছিল জাতীয় পার্টি। তবে এবার জাতীয় পার্টি বা আওয়ামী লীগের অন্য শরিকদের কেউই এখন পর্যন্ত সরকারে নেই। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। গত বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে চার ধাপে ২৮৯ জন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য শপথ নেন। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবিধান ও কার্যপ্রণালীবিধি অনুযায়ী নিজে শপথ গ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। পরে অন্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান তিনি। তবে বিএনপির নির্বাচিত ৫ সংসদ সদস্য এবং ঐক্যফ্রন্টের দুই জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য এখনও শপথ নেননি। বিধান অনুযায়ী সংসদ অধিবেশন শুরুর পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তাঁরা শপথ গ্রহণ না করলে তাদের সংসদ সদস্যপদ শূন্য ঘোষিত হবে। এসব আসনগুলোতে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ৩০ ডিসেম্বর ২৯৯ সংসদীয় আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। আর নির্বাচনের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় ওই আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবেই পায় ২৫৭টি আসন। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২২টি আসন। এছাড়া বিএনপি পাঁচটি, গণফোরাম দুইটি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাসদ দুইটি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ২টি, তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি করে আসন পায়। আর তিনটি আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
×