ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন আবারও সংশোধন হবে ॥ জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

জামায়াতের বিচার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী সংগঠন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

জামায়াতের বিচার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী সংগঠন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন আবারও সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যারা মানবতাবিরোধী ব্যক্তি তাদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালের আইনটি করা হয়েছিল। তখনই আইনটাতে দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করার জন্য করা হয়নি। তবে ১৯৭২ সালে যখন সংবিধান প্রণয়ন করা হয় তখন জামায়াতকে ‘ব্যান্ড’ (বাতিল) করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের বিচার এবং তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যুনাল আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে তা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। এ সংক্রান্ত আইনটি অধিকতর যাচাই-বাছাই ও মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর বুধবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে লজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী এ তথ্য জানান। এ সময় বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা হত্যাকা-ের নেপথ্যের ব্যক্তিদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা হবে। এ জন্য বিশেষ কমিশন গঠন করা হবে। সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়নি। যারা প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে তার অপব্যবহার করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই এই আইন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন বিভিন্ন দাবির বিরোধিতা করে জামায়াত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ নামে বিভিন্ন দল গঠন করে জামায়াত ও এর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ। সে সময় তারা সারাদশে ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটায়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ৩৫টি মামলায় ৮০ জনকে দ- প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে ৫৪ জনকে, আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে ২৪ জনকে। আর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ-, একজনকে ৯০ বছরের দ-, একজনকে ২০ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এ রায় ঘোষণার পরেও বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে আরও ৩২ মামলায় ১৩৪ রাজাকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে। একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করে আদালতের একটি রায়ে বলা হয়, দেশের কোন সংস্থার শীর্ষ পদে স্বাধীনতাবিরোধীদের থাকা উচিত নয়। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার আদেশ হলে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন। তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও ছিল। এদিকে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করলে দলটির নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তার পাঁচ বছর পর গত অক্টোবরে নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম হান্নান খান গত ১ জানুয়ারি এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বিচার কেন হচ্ছে না, এটা আমার প্রশ্ন। এটা প্রসিকউশনকে জিজ্ঞেস করেন আপনারা। এক সময়ে এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছিল, তার জন্য এই মামলাটির ওপর আমাদের চাপ ছিল। আমারা তাড়াহুড়ো করে তদন্ত করে দিয়েছি ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ। প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইন সংশোধনের অগ্রগতি জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ লেজিসলেটিভ ভাষা আবারও একটু পর্যালোচনা করার জন্য বলেছে, আইনটি আমাদের কাছে আছে। আমরা চেষ্টা করব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে আবারও আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেব, যাতে এটা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়।
×