ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরে রোনাল্ডো-মেসির চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৯

নতুন বছরে রোনাল্ডো-মেসির চ্যালেঞ্জ

ব্যক্তিগত সাফল্য বিবেচনা করলে সদ্য বিদায়ী ২০১৮ সালটা মোটেও ভাল কাটেনি সময়ের দুই সেরা তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসির। দুই তারকার এক যুগের রাজত্বে হানা দিয়েছেন লুকা মডরিচ। শুরু হয়ে গেছে নতুন বছর ২০১৯। এ বছরে তাই শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ জুভেন্টাসের পর্তুগীজ ও বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের। বিশ্বকাপ, উয়েফা বর্ষসেরা, ফিফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি’অর-বছরে চারটি ব্যক্তিগত বড় পুরস্কারের তালিকায় গেল বছর ছিলেন না রোনাল্ডো ও মেসি। অবাক করার মতো হলেও সত্য, হতাশা দিয়েই বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় দুই তারকার বছর শেষ হয়েছে। রাশিয়া বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক, মেসি-রোনাল্ডোকে একেবারেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। গ্রুপ পর্বে স্পেনের সঙ্গে ৩-৩ গোলের ড্র দিয়ে পর্তুগালের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল, ম্যাচটিতে রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকের কথা দীর্ঘদিন ফুটবলবিশ্ব মনে রাখবে। শুরুটা যেভাবে করেছিলেন সি আর সেভেন, শেষটা সেভাবে ভাল হয়নি। তার দলও বিশ্বকাপে ভাল করতে পারেনি। শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেয়। একই অবস্থা হয়েছে মেসির আর্জেন্টিনারও। ফ্রান্সের কাছে হেরে তারাও শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়ে। বিশ্বকাপে রোনাল্ডো কিছুটা উজ্জ্বলতা ছাড়ালেও একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন মেসি। খুবই হতাশ করেছেন তিনি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। অবশ্য বিশ্বকাপের আগে দুজনই নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে সাফল্য পেয়েছেন। বার্সিলোনার হয়ে মেসি স্প্যানিশ লিগ ও কাপ শিরোপা জয় করেন। অন্যদিকে জুভেন্টাসে পাড়ি জমানোর আগে রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা এনে দেন রোনাল্ডো। তাঁদের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে আলো ছড়িয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার লুকা মডরিচ। তাই তিনি জিতে নিয়েছেন ব্যালন ডি’অরের পাশাপাশি ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার। তিনি অনেকটা একাই ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে দেন। পাশাপাশি রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জেতাতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। রাশিয়া বিশ্বকাপেও তিনি সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল জয় করেছিলেন। এর পাশাপাশি আরও তরুণ তুর্কির দেখা পেয়েছে ফুটবলবিশ্ব। বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে। তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের কল্যাণে রাশিয়া বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ফ্রান্স। শেষ ষোলোতে মেসির আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে ফ্রান্স শুধু কোয়ার্টার ফাইনালেই যায়নি, শেষ পর্যন্ত শিরোপাটাও ঘরে তুলেছে। বিশ্বকাপে প্রায় সব ম্যাচে এমবাপের পারফরম্যান্স বিশ্বকে এক নতুন তারকা উপহার দিয়েছে। ১৯৫৮ সালে পেলের পর বিশ্বকাপে এক ম্যাচে দুই গোল করা প্রথম টিনএজার খেলোয়াড় হিসেবে কৃতিত্ব গড়েন ১৯ বছর বয়সী এমবাপে। ফাইনালে মডরিচের ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতে ফ্রান্স। মস্কোর ফাইনালে গোল করে পেলের পর এমবাপ্পে টিনএজার হিসেবে আরেকটি রেকর্ড গড়েন। সব মিলিয়ে অনেক স্মরণীয় ম্যাচ উপহার দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ ছিল আধুনিক ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম উপভোগ্য একটি টুর্নামেন্ট। ১৯৬৬ সালের পর এবারের বিশ্বকাপে সমর্থকরা দেখেছে সর্বোচ্চ গোল। গেল বছর মন্দ গেলেও নতুন বছরের শুরুটা ভাল হয়েছে রোনাল্ডোর। দিনকয়েক আগে রেকর্ড টানা তৃতীয়বারের মতো গ্লোব সকার এ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছেন জুভেন্টাসের পর্তুগীজ সুপারস্টার। অবশ্য ২০১৮ সালের পারফরমেন্সের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এ খেতাব জিতেছেন। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালের সেরা গোলের পুরস্কারও পেয়েছেন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। বিশ্বকাপ জয়ী দুই ফরাসী ফরোয়ার্ড এ্যান্টোনিও গ্রিজম্যান ও কিলিয়ান এমবাপেকে পেছনে ফেলে গৌরবময় পুরস্কার জিতেছেন সি আর সেভেন। দুবাইয়ে জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেয়া হয় সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকার হাতে। ২০১১ সালের পর থেকে মোট পাঁচবার পুরস্কারটি জিতলেন রোনাল্ডো। গ্লোব সকারে অন্যান্য বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন যথাক্রমে সেরা কোচ দিদিয়ের দেশম, সেরা এজেন্ট জর্জ মেন্ডেজ, সেরা গোল রোনাল্ডো। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে বাইসাইকেল কিকে করা গোলটির জন্য পুরস্কার পান সি আর সেভেন। ক্যারিয়ারে সেরা অগ্রগতির পুরস্কার জিতেছেন ব্লেইস মাতুইদি। সেরা স্পোর্টিং ডিরেক্টর ফ্যাবিও প্যারাটিসি, সেরা ক্লাব এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, বিশেষ খেলোয়াড় এ্যাওয়ার্ড জবেনোমির বোবান ও আরব ক্যারিয়ার এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন সামির আল জাবের। গত বছরের শুরুতেও প্রায় সব পুরস্কারই নিজের নামে করে নিয়েছিলেন রোনাল্ডো। ২০১৮ সালের শুরুতে জিদান-রোনাল্ডো জুটি মিলে দুবাই থেকে গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ডের সবগুলো পুরস্কার জয় করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ মৌসুমে ‘গুরু জিদান’ না থাকলেও নিজে দুটি পুরস্কার হাতে নিয়েছেন। পুরস্কার জিতে উচ্ছ্বসি রোনাল্ডো বলেন, এর চেয়ে ভাল আর কিভাবে নতুন বছর শুরু করা যায়। আমি যে প্রশংসা ও ভালবাসা পেয়েছি সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ। অন্যদিকে রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর একরকম ঘোষণা দিয়েই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের বাইরে আছেন লিওনেল মেসি। এরপর অনেকে সংশয় প্রকাশ করেন, আর বোধহয় বিখ্যাত আকাশি-নীল জার্সিতে ফিরবেন না বার্সিলোনা অধিনায়ক। তবে সব সংশয়ের অবসান ঘটতে চলেছে শীঘ্রই। আগামী মার্চেই আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে জড়াতে পারেন দেশটির অধিনায়ক। ফ্রান্সের কাছে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায়ের পর সাময়িক অবসরে যান মেসি। তখন শোনা গিয়েছিল আগামী জুনে ব্রাজিলে হতে যাওয়া কোপা আমেরিকাতে ফিরবেন তিনি। তবে নতুন খবরে জানা গেছে, তার আগেই প্রীতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে ফিরছেন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। জানা গেছে, আগামী ২২ অথবা ২৬ মার্চ ভেনিজুয়েলা-আর্জেন্টিনা প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের চেষ্টা করছেন ফিফা ম্যাচ এজেন্ট গুইলার্মো টোফোনি। বার্সিলোনার মাঠ ন্যূক্যাম্পে হওয়ার সম্ভাবনা আছে ম্যাচটি। তা না হলে হবে এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে। কোপা আমেরিকার প্রস্তুতি হিসেবে ম্যাচটি খেলবে আর্জেন্টিনা। ১৪ জুন ব্রাজিলে শুরু হবে কোপা আমেরিকার ৪৬তম টুর্নামেন্ট। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরের আগে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা আছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে না পারা মেসির সামনে এবার আরেকটি সুযোগ। তাই অনেকেই বলছেন, ২০১৯ সালটা মেসির জন্য চ্যালেঞ্জের।
×