ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইলে রেমিটেন্স আহরণ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৯

মোবাইলে রেমিটেন্স আহরণ বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছে। শুধু টাকা পাঠানোই নয়, বিদ্যুত, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, রেমিটেন্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। ফলে প্রতি মাসেই এ সেবায় হাজার হজার গ্রাহক অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। এতে বাড়ছে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণও। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৮ সালের নবেম্বর শেষে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭০ লাখ। অন্যদিকে, নবেম্বর মাসে এ সেবায় দৈনিক লেনদেন হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোবাইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বা অতিদ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। দিন দিন গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ যুক্ত হচ্ছে। ফলে মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নবেম্বর পর্যন্ত মোট নিবন্ধিত হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৭৩ হাজার। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৭ জন। এদিকে নবেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেন সামান্য বাড়লেও মোট লেনদেন কমে গেছে। তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ নবেম্বর মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৩১ হাজার ৫২৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অক্টোবরে এর পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৪৭৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ অক্টোবরের তুলনায় নবেম্বরে লেনদেন কমেছে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। এ মাসে গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি ৯১ লাখ টাকা; যা অক্টোবরে ছিল ১ হাজার ৪৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে অক্টোবরের তুলনায় নবেম্বর দৈনিক লেনদেন বেড়েছে দশমিক ৩ শতাংশ। তবে নবেম্বর মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে টাকা জমা ও উত্তোলন উভয়ই কমেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, নবেম্বর মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে (ক্যাশ ইন) ১২ হাজার ৫৭৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। অক্টোবরে যার পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ২৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ মাসে মোট উত্তোলন করা (ক্যাশ আউট) হয়েছে ১১ হাজার ৯৪৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অক্টোবর মাসজুড়ে উত্তোলন করা হয়েছিল ১২ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নবেম্বর মাসে ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ৫ হাজার ১১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের মাস অক্টোবরে এর পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ১০৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ৫৮৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা অক্টোবরে ছিল ৫৮৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ মাসে বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৩০১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা আগের মাসে ছিল ৩৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। নবেম্বরে কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৩৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা অক্টোবরে ছিল ৩২৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এছাড়া নবেম্বরে সরকারী পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা অক্টোবরে ছিল মাত্র ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে নবেম্বর মাসজুড়ে অন্যান্য বাবদ লেনদেন হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা অক্টোবরে ছিল ৫৩৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারী খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
×