ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মঞ্চে আসছে ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ জানুয়ারি ২০১৯

মঞ্চে আসছে ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৈয়দ জামিদ আহমেদ মানেই যেন নাট্যমঞ্চের আলোড়ন। সর্বশেষ রিজওয়ান নামের নাটক দিয়ে দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করেছিলেন এই নির্দেশক। নন্দিত এই নির্দেশক দর্শকদের সামনে নিয়ে আসছেন আরেকটি নতুন নাটক। মুক্তিযুদ্ধের গল্পকে আশ্রিত করে নির্মাণ করছেন প্রযোজনাটি। সে নাটকের মাধ্যমে উঠে আমকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধপূর্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক ও সমাজ ঘটনাপ্রবাহ। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শহীদুল জহিরের উপন্যাস ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে নাটকটি। নাটকটি মঞ্চে আনছে প্রযোজনাভিত্তিক নাট্য সংগঠন স্পর্ধা। গত পয়লা জানুয়ারি থেকে শিল্পকলা একাডেমির মহড়া কক্ষে চলছে নাটকটির চূড়ান্ত মহড়া। স্বাধীনতা সাক্ষ্যবহ আগামী মার্চ মাসে নাটকটি মঞ্চে আসার কথা জানিয়েছেন নাটকটির সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিনয়শিল্পীরা। সৈয়দ জামিল আহমেদের নির্দেশনায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার চার নম্বর মহড়া কক্ষে চলছে নাটকটির মহড়া। রবিবার বাদে সপ্তাহের ছয়দিন মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন প্রযোজনাটির জন্য নির্বাচিত কুড়িজন অভিনয়শিল্পী। প্রযোজনাটি মঞ্চে আনতে প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত চলছে এই অনুশীলন। মঙ্গলবার অনুশীলন শেষে কথা হয় নাটকটির একটি চরিত্রের অভিনেত্রী মহসিনা আক্তারের সঙ্গে। জামিল আহমেদের রিজওয়ান নাটকেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করা এই শিল্পী জনকণ্ঠকে বলেন, এই প্রজন্মের নাট্যকর্মী হিসেবে এ নাটকের অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে গৌরববৌধ করছি। কারণ এই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এই প্রযোজনাটির মাধ্যমে যেন মুক্তিযুদ্ধকে কাছ থেকে দেখার কিংবা উপলব্ধির সুযোগ পাচ্ছি। শিল্পকে হাতিয়ার করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছি। প্রযোজনাটির আরেক অভিনেতা সোহেল রানা বলেন, এই নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে দ্বিতীয়বার কাজ করার সুযোগ পেলাম। এর আগে তার নির্দেশিত রিজওয়ান নাটকে অভিনয় করেছিলাম। নির্দেশনার ক্ষেত্রে তিনি শিল্পীর প্রতি দারুণ মনোযোগী। অভিনেতা বা অভিনেত্রীর যে প্রয়োজন সেটা তিনি খুব সহজেই বুঝে যেন। ঘাটতির জায়গাটাকে চমৎকারভাবে বুঝিয়ে দেন। নাটকের গল্পের বুননে অভিনেতার প্রাধান্যটা তার কাছে অনেক বেশি। তরুণ এই অভিনেতা আরও বলেন, আমি একাত্তর দেখিনি। এই নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে যেন মুক্তিযুদ্ধের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পেলাম। জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা নাটকটির জন্য অভিনেতা নির্বাচনে নবেম্বর-ডিসেম্বর মাসব্যাপী চারটি অভিনয় কর্মশালা আয়োজন করে স্পর্ধা। যেখানে দেশের বিভিন্ন নাট্য সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৬ জন অভিনয়শিল্পী অংশ নেন। কর্মশালা পরিচালনা করেন অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ। কর্মশালা থেকে নির্বাচিত ২০ জন অভিনেতাকে নিয়ে শুরু হয় নাটকটির চূড়ান্ত মহড়া। টানা দুই মাসের মহড়া এবং ক্যাম্পিং শেষে মার্চের মাঝামাঝি মঞ্চে আসবে প্রযোজনাটি। নাটকটির জন্য নির্বাচিত শিল্পীরা হলেনÑ কৌশিক, তাবিন, শর্মী, মহসিনা আক্তার, প্রদ্যুৎ, বিপ্লব, সোহেল রানা, নোভায়রা, সজীব, শোভন, শরীফ, সোয়েরি প্রমুখ। উত্তরাধুনিক লেখক শহীদুল জহির রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’। এ উপন্যাসে শহীদুল জহির প্রতীক ও রূপকের সফল প্রয়োগে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতার এক উত্তরাধুনিক সংকট উপস্থাপন করেছেন। বাংলোদেশে মুক্তিযুদ্ধেও প্রকৃত চেতনানির্ভর সার্থক মঞ্চনাটকে আয়োজন হাতেগোনা হওয়ায় এবং সমসাময়িক বাস্তবতায় মুক্তিযুদ্ধেও চেতনানির্ভর শিল্পসৃষ্টির তাগিদেই উপন্যাসটিকে বেছে নেয়া হয়েছে। নাটকটির নাট্যরূপ এবং নির্দেশনায় আছেন অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ। রিজওয়ান নাটকের সফলতার ধারাবাহিকতায় স্পর্ধা নামের প্রযোজনাভিত্তিক নাট্য সংগঠন তৈরি হয়েছে। সংগঠনটির উপদেষ্টা হিসেবে আছেন দেশের প্রাতিষ্ঠানিক নাট্যশিক্ষার পথিকৃৎ অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ। অন্যান্য স্থায়ী সদস্যরা হলেন মহসিনা আক্তার, সাইফুল ইসলাম ম-ল, সোহেল রানা ও আব্দুর রাহীম খান। প্রসঙ্গত, নাটকটির নির্দিষ্ট সংখ্যক মঞ্চায়ন শেষে প্রযোজনা দলটি ভেঙ্গে পুনরায় নতুন প্রযোজনা নির্মাণের লক্ষ্যে একই প্রক্রিয়ায় আরেকটি প্রযোজনা দল গঠন করা হবে। মঞ্চায়ন শেষে নির্বাচিত শিল্পী ও কুশলীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানী পাবেন। এই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পেশাদার নাট্যকর্মী সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে স্পর্ধা দলের সদস্যরা।
×