ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কথায় কথায় সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৯

কথায় কথায় সড়ক অবরোধ

রাজধানীর উত্তরা এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টসের পোশাক শ্রমিকরা পরপর দু’দিন সরকার ঘোষিত তাদের ন্যূনতম মজুরি প্রদান এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নেমে বিমানবন্দর সড়ক অচল করে দেয়। ফলে কার্যত বিমানবন্দরের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের যান চলাচলে স্থবিরতা নেমে আসে। দ্বিতীয় দফা বিমানবন্দর অবরুদ্ধ করে তারা সহিংস হয়ে ওঠে এবং একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। সোজা কথায় সড়ক হচ্ছে চলাচলের জন্য। সেটি কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয় যে এটি কেউ সাময়িকভাবে দখল করে নেবে। জনসাধারণের প্রত্যেকেরই সমান অধিকার আছে সড়ক ব্যবহার করার। যদিও সেটি আইন অনুযায়ী নির্ধারিত। তাই সড়কে যে কোন যানবাহন নিয়ে নেমে পড়া যায় না। একইভাবে যখন খুশি লোকজন জড়ো করে রাস্তার মাঝখানে বসে পড়ে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করাও বেআইনী। আমাদের দেশে কথায় কথায় সড়ক অবরোধ করার একটা সংস্কৃতি যেন জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। কিছুতেই তাকে সরানো যাচ্ছে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সময় বদলেছে। রাষ্ট্র হিসেবে বহির্বিশ্বে আমাদের ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আমাদের মাতৃভূমিকে আরও সামনের দিকে এগুতে হবে। অর্থনীতির চাকা বেগবান করতে হবে। তাই অর্থনীতি বাধাপ্রাপ্ত হয়, মানুষের মৌলিক অধিকার উপেক্ষিত হয়- এমন কর্মসূচী আর চালানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগের ভেতরে আর ফেলা যাবে না। সরকার এ ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। এর আগেও সরকার স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছে যে রাস্তা বন্ধ করে কোন জনসভা হবে না। ফলে প্রবলভাবে জনমানুষের চাপে ভারাক্রান্ত এবং যানজটের নগরী ঢাকায় সড়কের ওপর আর কোন জনসভা হচ্ছে না। তাই কোন দাবি আদায়ের জন্য সড়ককে আর ব্যবহৃত হতে দেয়া যাবে নাÑ এমনটাই মানুষের প্রত্যাশা। গত রবিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে রাখা হয় প্রায় ছয় ঘণ্টা। পরদিন ফের আরও কয়েক ঘণ্টা। ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক হলো বিমানবন্দর সড়ক। এর আগেও এই মহাসড়ক বন্ধ করে লাখ লাখ মানুষকে দুর্দশায় ফেলা হয়েছে। বিদেশগামী যাত্রীকে অবর্ণনীয় ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সেই একই নেতিবাচক কর্মসূচী আবারও ঢাকাবাসীর ওপর চেপে বসবেÑ এমনটা ছিল অপ্রত্যাশিত, অনাকাক্সিক্ষত। কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে নানা কারণে অসন্তোষ থাকতে পারে। থাকতে পারে ন্যায্য দাবি-দাওয়া। কিন্তু সেসব দাবিতে দেশের মানুষকে কোনক্রমেই জিম্মি করা সমীচীন নয়। শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে সমাবেশ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারে। প্রয়োজনে মালিক বা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে। আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে কিংবা মালিকপক্ষ অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে তার প্রতিবিধানের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নজির রয়েছে। কিন্তু জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য যে সড়ক রয়েছে সেটি অবরোধ করতে পারে না। লাখ লাখ মানুষের জীবনের স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করার অধিকার কারও নেই। যেসব ব্যবসায়ী মালিকপক্ষ শ্রমিকের শ্রমের যথাযথ মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয় তাদের কী অধিকার আছে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার? এইসব খেলাপী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরী হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে গোষ্ঠীগত দাবি আদায়ের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার সময় হয়েছে। আশা করা যায় বিষয়টি সব পক্ষই স্মরণে রাখবেন। কিছুতেই জনমানুষের দুর্ভোগের কারণ কেউ হবেন না।
×