ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিডি এ্যাসিস্ট্যান্ট’ নিয়ে সাগর

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৮ জানুয়ারি ২০১৯

‘বিডি এ্যাসিস্ট্যান্ট’ নিয়ে সাগর

ডিপ্রজন্ম : ‘বিডি এ্যাসিস্ট্যান্ট’ সম্পর্কে বলুন। আবু সাঈদ : ‘বিডি এ্যাসিস্ট্যান্ট’, পুরোটা বললে বাংলাদেশ এ্যাসিস্ট্যান্ট। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরের সার্ভিসিং কাজের একজন নিত্য এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার লক্ষ্যে এর জন্ম। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক তরুণের স্বপ্নের উদ্যোগ এই প্রতিষ্ঠানটি। উদ্যোক্তারা এই প্রতিষ্ঠানটিকে পরিচয় করায়, ইলেক্ট্রনিক্স হসপিটাল বা সার্ভিসিং হসপিটাল হিসেবে। মানুষের চিকিৎসার জন্য যেমন হসপিটাল বা ক্লিনিক রয়েছে, পশুদের চিকিৎসার জন্য যেমন রয়েছে পশু হাসপাতাল, কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের জন্য এ রকম কোন গোছালো সার্ভিসিং প্রতিষ্ঠান নেই। তাদের মতে বিডি এ্যাসিস্ট্যান্টই হলো সেই ইলেক্ট্রনিক্স হসপিটাল বা সার্ভিসিং হসপিটাল। ডিপ্রজন্ম : কেন এবং উদ্যোগটি কাদের জন্য? আবু সাঈদ : এই প্রতিষ্ঠানটির শুরুটা ছিল একটি বিয়োগান্তক ঘটনার মধ্য দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়াকালীন স্বাভাবিক দিনের মতো বন্ধুদের চায়ের আড্ডায় চায়ের দোকানের যে ছেলেটি চা পরিবেশন করল, কাকতালীয়ভাবে চিহ্নিত করা গেল যে, ছেলেটি এই আড্ডার একজনের ছোটবেলার খুব কাছের বন্ধু। যে কিনা স্কুলজীবনে খুব মেধাবী একজন শিক্ষার্থী ছিল। অকস্মাৎ পিতার মৃত্যু ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নবম শ্রেণীতেই শিক্ষাজীবনের ইতি টেনে তাকে বেরিয়ে পড়তে হয় জীবিকার সন্ধানে। উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কারিগরি দক্ষতা না থাকায় বিভিন্ন সময় তাকে বাসের হেল্পার, বাদাম বিক্রি থেকে শুরু করে অপেক্ষাকৃত অবহেলিত সব পেশা বেছে নিতে হয়েছে। অথচ এক সময় তারও স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার বা সম্মানজনক পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার। সেদিনের এই ঘটনাটি বন্ধুদের খুব নাড়া দেয়। তখন থেকেই তারা খুঁজতে থাকে এমন একটি উদ্যোগের, যেটি কিনা এই কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের অপেক্ষাকৃত ভালমানের জীবন ও জীবিকার সুযোগ করে দেবে। অপরদিকে তারা খুঁজে দেখল তাদের নিজের শহর রংপুরে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের সার্ভিসিংয়ের জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে এবং ভাল কোন সার্ভিসিং প্রতিষ্ঠানও নেই। যার ফলে শহরবাসীকে সার্ভিসিং কাজের জন্য নানামুখী ভোগান্তি কিংবা প্রতারণার শিকার হতে হয়। সত্যিকার অর্থে, সার্ভিসিং কাজের ক্ষেত্রে প্রান্তিক জেলাগুলোর অধিকাংশের চিত্রই এমন। এই দুটি সমস্যাকে চিহ্নিত করে, তারা পরিকল্পনা করল এই ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের কারিগরি দক্ষতায় দক্ষ করে, একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিসিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করবে, যেখানে তারাই সার্ভিসিং এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করবে। অপরদিকে শহরবাসী তাদের বাসাবাড়ি কিংবা অফিসের যে কোন সার্ভিস যেমন-ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের সার্ভিসিং, ইলেকট্রিক্যাল সার্ভিসিংসহ যে কোন ধরনের মিস্ত্রি কিংবা টেকনিশিয়ান কেন্দ্রিক সেবা ঘরে বসেই নিতে পারবে। সেদিনের সেই পরিকল্পনাটিই বর্তমানের বিডি এ্যাসিস্ট্যান্ট। যার উদ্যোক্তা আবু সাঈদ আল সাগর, মোঃ আল-আমিন ইসলাম ও উম্মে কুলসুম পপি। ডিপ্রজন্ম : আপনার সম্পর্কে বলুন। আবু সাঈদ : আমি আবু সাঈদ আল সাগর। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ধর্মপুর জন্ম, বেড়ে ওটা গ্রামেই। পড়েছি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম, ৬ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। বাবা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক এবং মা গৃহিণী। ডিপ্রজন্ম : জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ডের বিষয়ে বলুন.. আবু সাঈদ : কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে বিডি এ্যাসিস্ট্যান্ট জয় করেছে জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড সম্মাননা। সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব ইনস্টিটিউটে সিআরআই আয়োজিত জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড ২০১৮ অনুষ্ঠানে এই আমার হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সর্ব মোট ৩০ জন তরুণ অর্জন করে এই সম্মাননা। তাদের একজন হতে পেরে আমি গর্বিত। এর আগে ২০১৬ সালে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ ব্রান্ড ফোরাম আয়োজিত ইয়ুথফেস্ট এ্যাওয়ার্ড এবং ব্র্যাক আয়োজিত আরবান ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ এ্যাওয়ার্ড ২০১৬। পরবর্তীতে ব্র্যাক আমাদের এই কার্যক্রমে আর্থিক বিনিয়োগও করেছে।
×