ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাশকতায় জড়ানোর আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা

রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৮ জানুয়ারি ২০১৯

রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন দাবি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ নতুন বছরে নতুন সরকারের কাছে কক্সবাজার জেলাবাসী দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে হলেও এ বছরের শুরুতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সূচনা করতেই হবে। সূত্র জানায়, একটি মহল ও রাজনৈতিক নেতাদের অনেকে জনসমর্থন হারিয়ে পাগলের প্রলাপ বকছে। পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও নাশকতার কারণে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দেশের জনগণ তাদের বয়কট করেছে। তাই এখন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি শুরু করতে পারে তারা। আশ্রয় শিবিরে সন্ত্রাসী গোছের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে বিশেষ মহল। তাই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির থেকে বাইরে যাওয়া-আসা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। তারা বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে তিনদিন রোহিঙ্গাদের শিবির থেকে বাইরে প্রধান সড়কে বা স্থানীয় বাজারে যাওয়া আসা নিষেধ ছিল। তখন খুবই শান্ত ছিল রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা। শিবির ছেড়ে রোহিঙ্গাদের বাইরে যাওয়া আসার উপর পুনরায় বিধিনিষেধ জারি করা জরুরী হয়ে পড়েছে। নাগরিকত্ব নিয়ে রোহিঙ্গাদের অনীহা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারে এখনও উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি দাবি করায় সবকিছু ঠিকটাক থাকা সত্ত্বেও গত বছর নবেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, উখিয়া টেকনাফ এলাকায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাসের কারণে স্থানীয়রা যে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত, তা আমাদের জানা রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গারা সহজেই ফেরত যেতে রাজি হবে না। আশ্রয় শিবিরে যেসব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে, তা রাখাইনে থাকতে তারা স্বপ্নেও দেখেনি। কিছু সংখ্যক এনজিওর কারণে রোহিঙ্গারা সহজে প্রত্যাবাসনে রাজি বলে মুখ থেকে বের করবে না। ওসব এনজিওর উস্কানি পেয়ে রোহিঙ্গারা বর্তমানে শরণার্থীর পূর্ণ মর্যাদা দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রমতে, যেহেতু ১৯৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গারা বিএনপি সমর্থনকারী হিসেবে জনশ্রুতি রয়েছে, সেহেতু বিএনপি নেতারা যাই বলে-রোহিঙ্গারা তাই শুনতে এবং নাশকতায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। ইতিপূর্বেও বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা প্রশাসনের ওপর হামলে পড়েছিল। ওইসময় কক্সবাজারে তিনজন গ্রামবাসী নিহত হওয়ার নজির রয়েছে। নাশকতা শেষে আশ্রয় শিবিরে পালিয়ে যাবার সময় শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে পুলিশ ২৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছিল। পরে পুলিশের দুর্বল রিপোর্ট ও আরএসও ক্যাডার এবং এনজিও কর্মকর্তাদের তদ্বিরে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা জামিনে মুক্ত হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বলেন, সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে মর্মে রোহিঙ্গাদের তিন দিন ক্যাম্প থেকে বের হতে দেয়নি প্রশাসন। ওই সময় একেবারে শান্তিতে ছিল এলাকার স্থানীয় লোকজন। তিনদিনই ফাঁকা ছিল প্রধান সড়ক। যানজট লাগেনি কোথাও। যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়নি। সহজে যাতায়াত করতে পেরেছে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো। তাই রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হতে না পারলে স্থানীয়দের কোন সমস্যা হয়না। আশ্রয় শিবিরগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে দাবি করে তারা আরও বলেন, কিছু সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে আছে। তারা প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত। তাছাড়া বাইরে কুচক্রী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। তারা মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার জন্য ওই মহলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শিবিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে একটি মহল রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাজনীতি শুরু করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী যাচাই-বাছাইয়ের পর ছাড়পত্র দেয়া ২ হাজার ২৬০ রোহিঙ্গাকে পর্যায়ক্রমে ফেরত নিতে দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে প্রতি দিন ১৫০ জন করে রোহিঙ্গা গ্রহণ করতে প্রস্তুতিও নিয়েছিল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। সে হিসেবে বাংলাদেশও উল্লেখিত রোহিঙ্গাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসতে আরআরআরসির পক্ষ থেকে গাড়ি পাঠানো হয় আশ্রয় শিবিরে। তখনই ঘটে নাটকীয় ঘটনা। রোহিঙ্গারা জানায়, আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাব না। নবেম্বরে শুরুতে হোঁচট খাওয়া প্রত্যাবাসন কার্যক্রম এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। শুরু করা সম্ভব হয়নি প্রত্যাবাসন কার্যক্রম।
×