ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষুকের দেশ বলতে কেউ সাহস পায় না ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৮ জানুয়ারি ২০১৯

ভিক্ষুকের দেশ বলতে কেউ সাহস পায় না ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশকে এখন আর কেউ ভিক্ষুকের দেশ বলতে সাহস পায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূর করে দেশের আজকের এই উত্তরণে অংশগ্রহণ থাকায় নিজেকে ধন্য মনে করছি। আগামী পাঁচ বছর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশ এমন একটি জায়গায় যাবে, যা রোধ করা সম্ভব নয়। সোমবার সকালে সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে শেষ কর্মদিবসের বিদায়ী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ সময় অনেকে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। কর্মকর্তা-কর্র্মচারীদের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর গলায় পরিয়ে দেয়া হয় ফুলের মালা। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের টানা দশ বছর ধরে তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে তৃতীয় মেয়াদে দল সরকার গঠন করলেও অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি আর থাকছেন না বলেই আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতেক্যের অবসর থাকা উচিত। সে হিসেবে একজন মন্ত্রীরও নির্দিষ্ট সময়ের পর অবসরে চলে যাওয়া উচিত বলেও একাধিকবার মন্তব্য করেন তিনি। এ কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিজে সংসদ সদস্য হিসেবে আর প্রার্থী হননি। তবে তার ওই আসনে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সহোদর আবদুল মোমেন। যিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় আবদুল মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। যদিও নির্বাচনের পর অর্থমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী চাইলে আরও এক বছর তিনি দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত রয়েছেন। তবে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে আজ মঙ্গলবার থেকে দায়িত্ব পালন করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। সোমবার বিকেলে তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। এতদিন তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এদিকে, আগামী ২৫ জানুয়ারি ৮৫ বছর পূর্ণ করতে যাওয়া মুহিত বলেন, এ বয়সে আল্লাহ আমাকে এমন রেখেছেন যে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো একটি জটিল মন্ত্রণালয়ে পরিচালনা করেছি। এখন তো আমার অবসর নেয়ার দরকারই। গত ১০ বছরে বাংলাদেশকে ভিক্ষুকে দেশ থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে এখন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। তাই উন্নয়নের অংশীদার হয়ে নিজে থেকে বিদায় নেয়া অনেক সৌভাগ্যের। এ সময় হাসতে হাসতে বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে সম্মানের সঙ্গে বিদায় একদিক দিয়ে ভালও। অবসর না নিয়ে ঝেঁটিয়ে বিদায় হয়ে যাওয়া, সেটা থেকে তো রক্ষা পেয়েছি। তিনি বলেন, এটি আমার খুব আনন্দের বিষয়, আমাকে বিদায়-টিদায় করতে হয়নি, আমি নিজে নিজেই বিদায়টা নিয়ে নিয়েছি। সেজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। প্রসঙ্গত, টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন তাতে বেশিরভাগ প্রবীণ নেতাকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ পড়েছেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী ও মোঃ নাসিমের মতো সিনিয়র রাজনীতিকও। এ কারণে স্বেচ্ছায় অবসরের ঘোষণা ও অবসর নেয়াতে অর্থমন্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের স্বস্তিও দেখা গেছে। বাংলাদেশের আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে নিজেরও যথেষ্ট চেষ্টা অবদান রয়েছে বলে মনে করেন মুহিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় তিনি সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকা- এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে, দেশ এগিয়ে যাবে। আগামী ৫ বছরে দেশে এমন একটি উন্নয়নের জায়গায় যাবে, যা রোধ করা সম্ভব নয়। অবসরে কি করবেন সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মুহিত বলেন, বই পড়ে সময় কাটাবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের করার কোন ক্ষেত্রের অভাব নেই। আমার সংগ্রহে ৫০ হাজার বই আছে। সবগুলো পড়া হয়নি, এগুলো পড়ব। আর আমি ৩৪টি বই লিখেছি। এর মধ্যে ১২টি ইংরেজী, আরও বই লিখব। অনুষ্ঠানে নতুন পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান, মহাহিসবা নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×