ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বড় চমক ৪ মন্ত্রণালয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৯

বড় চমক ৪ মন্ত্রণালয়ে

ওয়াজেদ হীরা ॥ মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে এবার বড় চমকই দেখালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একঝাঁক নতুন মুখ তো আছেই, সেই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি চমক দেখা গেছে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চার মন্ত্রণালয়ে। অর্থ, শিল্প, বাণিজ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রীদের বরণ করতে প্রস্তুত নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ও। নতুন মন্ত্রীদের বরণ করতে ইতোমধ্যেই দফতর নতুন করে সাজানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। একাধিক প্রভাবশালী নেতার পরিবর্তে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এসেছে সম্পূর্ণ নতুন মুখ। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান নতুন মুখ এসেছে, নতুন নির্দেশনা আসবে আর সেভাবেই কাজও করতে প্রস্তুত তারা। মহাজোটের ১০ বছরে অর্থনীতিতে যে উন্নয়ন হয়েছে তার মধ্যে জিডিপির রেকর্ড ৭.৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন। ইতোমধ্যেই নতুন অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এতদিন অর্থ মন্ত্রণালয় যেভাবে চলছিল সেভাবে আর নয় বদলে যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পরিসরও অনেক বাড়বে বলে জানান তিনি। এদিকে, সদ্য বিদায়ী অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেকে ‘সৌভাগ্যবান’ মনে করছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। শেখ হাসিনার সরকারে দুই মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর অবসর চাইছিলেন তিনি। এজন্য এবার তিনি নির্বাচনও করেননি। শেষ কর্মদিবসে বিদায়ী অনুষ্ঠানে মুহিত বলেন, এটি আমার খুব আনন্দের বিষয়, আমাকে বিদায়-টিদায় করতে হয়নি, আমি নিজেই বিদায়টা নিয়ে নিয়েছি। সেজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আগামী ২৫ জানুয়ারি ৮৫ বছর পূর্ণ করতে যাওয়া মুহিত বলেন, এ বয়সে আল্লাহ আমাকে এমন রেখেছেন যে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো একটি জটিল মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেছি। এখন তো আমার অবসর নেয়ার দরকারই। গত ১০ বছরে বাংলাদেশকে ‘ভিক্ষুকের দেশ’ থেকে উত্তরণ ঘটানোর কৃতিত্ব দাবি করে মুহিত বলেন, বিশ্বের কোন দেশ এখন বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের দেশ বলতে সাহস পায় না। দেশকে এ অবস্থায় উত্তরণে আমার অংশগ্রহণ থাকায় নিজেকে ধন্য মনে করছি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা তোফায়েল আহমেদের পরিবর্তে এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুনশী। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ ২৩ বছর পর রংপুর-৪ আসন ফিরে আসে নৌকার হাতে। এরা আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন টিপু মুনশী। এদিকে, সদ্যবিদায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা যারা প্রবীণ তাদের তো নতুনদের জায়গা দিতেই হবে; একসময় তো যেতেই হবে। তবে আমি খুশি, বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড করেছি। আমি এমপি আছি, থাকব। এমপি হিসেবেই কাজ করে যাব। আমরা সবাই একটি পরিবারের মতো কাজ করেছি। যোগ্য, সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তিদের নিয়েই নতুন মন্ত্রিপরিষদ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষিতদের জায়গা দিয়েছেন। নতুন যারা কেবিনেটে জায়গা পেয়েছেন তারা সবাই যোগ্য। আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তারা ভালভাবেই সরকার পরিচালনা করে দেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবেন। এদিকে, বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, তোফায়েল আহমেদ একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। নেতা হিসেবে তার বড় সাফল্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা। গত ৫ বছর তিনি সফল দায়িত্ব পালন করেছেন। তার এ চলে যাওয়াটা আসলে চলে যাওয়া নয়। তার ভালবাসা আমরা সব সময় পাব। সরকারের আরেক প্রভাবশালী মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর জায়গায় শিল্পমন্ত্রী হিসেবে নতুন মুখ নুরুল মাজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ওপর আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। নরসিংদী-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এ এমপি আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় এলেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রবীণ রাজনীতিক মিরপুর-১৫ আসনের এমপি কামাল মজুমদার। এদিকে, গত পাঁচ বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকা এম এ মান্নান পেয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি মনে করেন আগের অভিজ্ঞতা দিয়ে মন্ত্রণালয়কে নতুনভাবে এগিয়ে নেবেন। এদিকে, অর্থ-বাণিজ্য সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, নতুন মন্ত্রীকে বরণ করতে প্রস্তুত মন্ত্রণালয়। নতুন করে সবকিছু সাজানো হয়েছে। এখন নতুনদের নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন তারা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এতদিন মান্নান স্যারের কাছ থেকে দেখেছি, তার আচার আচরণ বিষয়ে অবগত আছি। যেভাবে কাজের নির্দেশনা আসবে সেভাবেই করব। এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এতদিনের মন্ত্রী এখন নেই। নতুন মন্ত্রী নির্দেশ বুঝে এগোতে হবে। তবে আশা করছি কাজে কোন সমস্যা হবে না। নতুন ও চমকের মন্ত্রিসভা নিয়ে কর্মকর্তারা যেমন চিন্তা ভাবনা করছেন তেমনি জনসাধারণও প্রত্যাশা করছেন উন্নয়ন কাজে আরও অগ্রগতি আসবে।
×