ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৮ জানুয়ারি ২০১৯

অনন্য উচ্চতায় শেখ হাসিনা

উত্তম চক্রবর্তী ॥ অবিস্মরণীয় হওয়া সড়কে উঠলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৭ বছরে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করলেন তিনি। মৃত্যু ভয়কে পায়ের ভৃত্য করে সততা, প্রজ্ঞা, দক্ষ আর দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে শেখ হাসিনা অনেক আগেই দেশের গ-ি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছেন বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে সবকিছু ছাপিয়ে নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আগামী পাঁচ বছর সফলভাবে দেশ পরিচালনা করার মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকারপ্রধানের রেকর্ড গড়ার পথে পা দিয়েছেন তিনি। আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে এখন সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধানের এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেছেন একাত্তর বছর বয়সী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সোমবার শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা, যার নেতৃত্বে চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে রেকর্ড চতুর্থবার (টানা তৃতীয়বার) প্রধানমন্ত্রী হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। শপথ নেয়ার মাধ্যমে অনন্য ইতিহাসেরও জন্ম দিলেন তিনি। বিশ্বে এমন দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদী সরকারপ্রধানের তালিকায় ইতোমধ্যেই নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। একই সঙ্গে সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য হওয়ায় দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চবার জনপ্রতিনিধিও হচ্ছেন শেখ হাসিনা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পর পর তিনবার এবং এ পর্যন্ত মোট চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অভূতপূর্ব গৌরব অর্জন করলেন শেখ হাসিনা। লক্ষ্য ঠিক রেখে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি দেশকে জাদুমন্ত্রের মতো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দক্ষতা দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গোটা বিশ্বকে। দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই দেশের গ-ি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছেন বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে। দুনিয়ার প্রভাবশালী সব রাষ্ট্রই একবাক্য বলছে- বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোলমডেল। শত বাধা-বিপত্তি, প্রতিকূলতা, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, বার বার তার প্রাণনাশের চেষ্টার সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর শেখ হাসিনার অনবদ্য নেতৃত্বে মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার। উন্নত-সমৃদ্ধের মহাসোপানে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশকে। দেশের জনগণ এবারের নির্বাচনেও নৌকার পক্ষে গণরায় দিয়ে আস্থা-বিশ্বাস রেখেছেন। শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আবারও সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আগামী পাঁচ বছরে শেখ হাসিনা বদলে দেবেন বাংলাদেশকে। গড়ে তুলবেন উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মাদক-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক, উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আরও পাঁচটি বছরের জন্য সরকার পরিচালনার যাত্রা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকারপ্রধানের রেকর্ড নিজের ঝুলিতে নিতে যাচ্ছেন। বিশ্বের নারী নেত্রীদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশিদিন সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কাতারে শেখ হাসিনার অবস্থান মেয়াদের দিক থেকে তৃতীয়। শ্রীলঙ্কার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে আধুনিক বিশ্বের প্রথম নারী সরকারপ্রধান ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তিন দফায় ১৭ বছর ২০৮ দিন দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। ভারতের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী। ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই দফায় মোট ১৬ বছর ১৫ দিন তিনি ভারত সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ পর্যন্ত তিন দফায় ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। সোমবারই তিনি শপথ নিয়েছেন আরও পাঁচ বছরের জন্য। এই মেয়াদ পুরো হলে দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি ছাড়িয়ে যাবেন সবাইকে। ক্যারিবিয়ান দেশের মধ্যে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়া ডোমিনিক প্রজাতন্ত্রের ইউজিনিয়া চার্লস ক্ষমতায় ছিলেন ১৪ বছর ৩২৮ দিন। ২০০৫ সাল থেকে একটানা ১৩ বছর জার্মানির ক্ষমতায় আছেন চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মের্কেল। ২০২১ সালের নির্বাচনের পর অবসরে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি। আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে একটানা ১২ বছর ৬ দিন দায়িত্ব পালনের পর এলেন জনসন সারলিফ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়েন। আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বের নারী রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ এই ছয়জনই একযুগের বেশি সময় নিজ নিজ দেশের সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রায় তিন যুগ ধরে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার জীবননাশের জন্য কমপক্ষে ২১ বার হামলা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশে পরিচালিত ভয়াল গ্রেনেড হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হয়েছেন। কারাবরণ, কারা নির্যাতন ভোগ, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শেখ হাসিনা দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে চলেছেন সেই ছাত্রজীবন থেকেই। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় ৮ মাস বন্দী ছিলেন সপরিবারে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। সে সময় তাকে দেশে আসতে দেয়া হয়নি। পরের ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লীতে তাদের নির্বাসিত জীবন কাটে। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন। পাঁচ বছরের মাথায় সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের সময়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বসেন বিরোধী দলের নেতার আসনে। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯০ সালে অন্যান্য দলের সঙ্গে যুগপৎ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে পতন ঘটান এরশাদ সরকারের। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়, শেখ হাসিনা আবারও বসেন বিরোধী দলের নেতার আসনে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রথম প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন শেখ হাসিনা। তার সেই সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির কথা বলা হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে আবারও ষড়যন্ত্রের শিকার হয় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও নির্যাতনের মুখেও বেশি ভোট পেলেও আসন কম দেখিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। একাত্তরের ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী ও ঘাতকদের মুক্তি বানিয়ে তাদের গাড়িতে তুলে দেয়া হয় লাখো শহীদের রক্ত¯œাত জাতীয় পতাকা। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন শেখ হাসিনা। ওই সরকারের সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর আরও অনেক রাজনীতিবিদের মতো শেখ হাসিনাও গ্রেফতার হন। বিরোধী দলের নেতা হলেও সবার আগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৮ সালের ১২ জুন তিনি মুক্তি পান। দুই বছরের মাথায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৬৪টি আসন লাভ করে। বিএনপি ও তাদের শরিকদের বর্জনের মধ্যে দেশব্যাপী ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার নারকীয়তা মোকাবেলা করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৩১ আসনে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, পূর্ণ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে পারবেন না শেখ হাসিনা। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন চাপের মুখে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবেন তিনি। কিন্তু তাদের সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন-জ্বালাও পোড়াও মোকাবেলা করে পূর্ণ মেয়াদ সরকার পরিচালনা করেন শেখ হাসিনা। মেয়াদের শেষদিকে এসে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী জোট আবারও সংসদ ভেঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানায়। কিন্তু সংবিধানের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, সংসদ বহাল রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় সব দলই অংশ নেয়। দেশের মানুষ আবারও গণরায় দেয় নৌকার পক্ষেই। ভোটের ফলে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতেই এককভাবে জয় পায় আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পায় ২৮৮ আসন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ঝুলিতে যায় মাত্র ৭টি আসন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সোমবার রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পাঠ করিয়েছেন। এর মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সরকারপ্রধানের এলিট ক্লাবে নিজের নাম লেখান বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সাহসিকতা আর দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের জন্য দেশ-বিদেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন নানা সম্মাননা। আর তার চেয়েও বেশি পেয়েছেন সাধারণ মানুষের ভালবাসা ও অকুণ্ঠ সমর্থন। দেশের মানুষ যে আর অতীতের মতো দুর্নীতি-সন্ত্রাস-লুণ্ঠন-জঙ্গীবাদ-সাম্প্রদায়িকতা চায় না, তারা যে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-শান্তির আলোকিত পথেই থাকতে চায়- তা ৩০ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নৌকার পক্ষে গণরায় দিয়ে আবারও প্রমাণ করেছেন। সব মানুষের প্রত্যাশা জন্মেছে- শেখ হাসিনাই পারবেন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে, তিনিই হবেন বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় নেতা।
×