ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন জটিলতায় অসন্তোষ উদ্যোক্তাদের মধ্যে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৮ জানুয়ারি ২০১৯

অব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন জটিলতায় অসন্তোষ উদ্যোক্তাদের মধ্যে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ নানা অব্যবস্থাপনা আর জটিলতায় আলোর মুখ দেখছে না যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি। এখানকার উদ্যোক্তারাও পড়েছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। প্রতিষ্ঠানটি চালু হবার পর কয়েকজন উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) চুক্তি করে। প্রতি বর্গফুট ১০ টাকা হারে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তারা চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু পরবর্তীতে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় টেকসিটি বাংলাদেশ। এখন তারা উদ্যোক্তাদের জায়গা বরাদ্দ দিচ্ছে ১২ বর্গফুট হিসেবে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেবার আশ্বাস দিলেও এখনকার উদ্যোক্তারা তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আইসিটি শিল্পের সুষম বিকাশ ও উন্নয়নে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক প্রকল্পটি অনুমোদন হয় ২০১৩ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। একই বছরের সেপ্টেম্বরে এটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে ব্যয় বেড়ে হয় ২৫৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় একই বছরের জুন পর্যন্ত। বাস্তবায়ন শেষে একই বছরের ১০ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করা হয়। যদিও অব্যবস্থাপনায় প্রকল্পটির কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। এতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ নিয়ে অসন্তোষও রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরের বেজপাড়া-শঙ্করপুরে স্থাপন করা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এলাকায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দৃষ্টিনন্দন ও সুউচ্চ দুটি ভবন। এর একটি মূল ভবন ও অন্যটি আবাসন সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে আরো দুটি ভবন। সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এলাকার মধ্যেই একপাশে স্থাপন করা হয়েছে জাতীয় ডাটা সেন্টারের ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টারটি। উদ্বোধনের এক বছর পরও এলাকাটির ভেতরে এখনও কর্মচাঞ্চল্যের ছাপ পড়েনি। ১৫ তলা মূল ভবনে গিয়েও দেখা যায়, বিভিন্ন তলার অধিকাংশ স্থান এখনও অব্যবহৃত। জানা গেছে, স্থানীয় একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দিতে গতবছরের ২৭ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ)। প্রতি বর্গফুট ১০ টাকা হারে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি হয়। একই মাসের ৩১ তারিখে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হিসেবে বিএইচটিপি-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় টেকসিটি বাংলাদেশ। পরবর্তী সময়ে টেকসিটির সঙ্গে চুক্তি করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে (এসএইচএসটিপি) জায়গা নিতে ভাড়া হিসেবে গুণতে হয়েছে প্রতি বর্গফুটে ১২ টাকা হারে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (পিএমসি) হিসেবে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের সার্বিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনায় গতবছরের ৩১ অক্টোবর বিএইচটিপিএর সঙ্গে চুক্তি করে টেকসিটি বাংলাদেশ। চুক্তির আওতায় ১৫ বছর এ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের সব ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি। টেকসিটি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগেই কিছু প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় নেই। তবে পিএমসি নিয়োগের আগে এ ধরনের চুক্তিতে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল। বৈষম্যের অভিযোগ শুধু বিএইচটিপিএর সঙ্গে চুক্তি করা প্রতিষ্ঠানগুলোরই নয়, বরং পিএমসির সঙ্গে চুক্তি করা একাধিক প্রতিষ্ঠানও এমন অভিযোগ করেছে। বিএইচটিপিএকে এ বিষয়ে গত আগস্টে ই-মেইলের মাধ্যমে জানানোও হয়েছে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান মাইলাইটহোস্টের স্বত্বাধিকারী রকিবুর রহমান বলেন, অন্যদের চেয়ে আমাদের বেশি ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। চুক্তির মেয়াদও দুই বছর, যেখানে তাদের সঙ্গে বিএইচটিপিএ চুক্তি করেছে পাঁচ বছর মেয়াদে। এসব বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোন জবাব পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শীঘ্রই উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান বিএইচটিপিএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম। তিনি বলেন, তাদের সমস্যা হলে জানাতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন অভিযোগ পাইনি। সামগ্রিকভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা আরও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কগুলোয় কর অবকাশসহ নানা সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এতে পার্কে স্থান বরাদ্দ পেতে বিপুল আবেদন আসছে। ফলে আরও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের স্থান বরাদ্দে এরই মধ্যে ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫টি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিএমসি নিয়োগের আগে চুক্তি করে বিএইচটিপিএ। এতে কাজ করছে প্রায় ৫০০ জনবল। পার্কে জায়গা বরাদ্দ পাওয়া অংশ প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ মহিদুল ইসলাম জানান, সরকার আমাদের সঙ্গে চুক্তি করেছিল ৫ বছরের। এখন তারা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান টেকসিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। চুক্তি সরকারের সঙ্গে থাকার কারণে আমরা ভাড়ার টাকা টেকসিটিকে দিতে পারছি না। আবার বিভিন্ন সুবিধার আশ্বাস থাকলেও আমরা পাচ্ছিনা। এতে করে উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রিক এ ধরনের বিশেষায়িত ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগটি ইতিবাচক। বিশ্বের অনেক দেশই এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে গেছে। আমাদের এখানে এগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ছোটখাটো যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা মূলত অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে। সরকারের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের কোন বিরোধ নেই। বরং আমাদের দেশে উদ্যোক্তারা শুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে কিছুটা দোদুল্যমানতায় ছিলেন। ধীরে ধীরে সে অবস্থা পাল্টাচ্ছে।
×