ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্থ মন্ত্রণালয়ে সিলেট যুগের অবসান

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৮ জানুয়ারি ২০১৯

অর্থ মন্ত্রণালয়ে সিলেট যুগের অবসান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ২৮ বছর একচেটিয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল সিলেট বিভাগের সংসদ সদস্যদের দখলে। ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন এমন একজন, যার বাড়ি সিলেট বিভাগের বাইরে। ৬ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের নতুন মন্ত্রীদের তালিকা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। ঘোষণা অনুযায়ী নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান দশম সংসদের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর মাধ্যমে ১৯৯০-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম ‘অ-সিলেটি’ অর্থমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করেন তিনি। ১৯৯১ সালে স্বৈরশাসকের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় গঠিত প্রথম সরকারের আমলে পঞ্চম জাতীয় সংসদের অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান সাইফুর রহমান। অর্থ মন্ত্রণালয়ে সেই শুরু সিলেট যুগ। সাইফুর রহমান ছিলেন সিলেট-১ ও মৌলভীবাজার-৩-এর সংসদ সদস্য। এরপর ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বাতিল হলে সে বছরই সপ্তম জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ২০০১ সালে বিএনপি আবারও সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ফের সাইফুর রহমান অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এই সরকারের আমলেই আওয়ামী লীগের সফল অর্থমন্ত্রী এবং তৎকালীন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ শাহ এ এম এস কিবরিয়া ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি তার নির্বাচনী এলাকা সিলেটের হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। শাহ এ এম এস কিবরিয়ার অবর্তমানে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যখন আবার সংসদ গঠন করে, তখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আবুল মাল আবদুল মুহিত। সিলেট-১ আসনের এই সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নবম ও দশম সংসদে নিরবচ্ছিন্নভাবে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ এ সময়ে নানা মন্তব্য করে আলোচনায় থাকেন তিনি। তার আমলেই মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। অবশেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দিলে তার ছেড়ে দেয়া আসন সিলেট-১-এ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান তার ভাই এ কে আবদুল মোমেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই মানুষের মুখে মুখে প্রশ্ন ছিল ‘অর্থমন্ত্রী কে হবেন?’। কেউ কেউ ধারণা করছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মুহিতের ছোট ভাই এ কে আবদুল মোমেনই হয়ত হবেন পরবর্তী অর্থমন্ত্রী। তবে সর্বশেষ সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি জিতলে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ জিততে পারবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা ছিল। সে ক্ষেত্রে অনেকে আবার ভেবে রেখেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের কথাও। তিনি নির্বাচনে অংশ না নিলেও টেকনোক্র্যাট হিসেবে অর্থমন্ত্রী হতে পারেন, তেমন সম্ভাবনা কেউ উড়িয়ে দেননি। তবে শেষ পর্যন্ত বড় ভাই মুহিতের আসনে বড় ব্যবধানেই জয় পেয়েছেন মোমেন। তবে দীর্ঘদিন কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোমেনকে দেয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আর দশম সংসদের পরিকল্পনামন্ত্রী ও কুমিল্লা-১০ আসনের সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামাল জয় করে নিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়। ১৯৯০ পেরোনোর ২৮ বছর পর এসে এবারে সিলেটের বাইরের কেউ পেলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়টির দায়িত্ব। সত্যিই বাজেট বক্তৃতায় সিলেটের আঞ্চলিক টান শোনার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে দেশের মানুষকে।
×