ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ় প্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৯

নতুন বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ় প্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রী

২০১৮ সালের বিদায় ঘণ্টার ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ পেল এক অবিস্মরণীয় প্রাপ্তি। উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের অবসান হলো। বাংলাদেশ নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন ধারায় কোনভাবেই আর পিছিয়ে থাকবে না। নির্বাচনের এমন স্বতঃস্ফূর্ত বিজয়ে বাংলাদেশ শুধু যে অগ্রগতির ধারাকে অবাধ আর মুক্ত করল তা নয়, তার চেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধের শুদ্ধ চেতনায় রাজকার, আলবদরকেও চিরতরে বিদায় দিল। তাই নির্বাচনের এই বিজয় শুধু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একচেটিয়া আধিপত্যই নয় বরং স্বাধীনতাবিরোধীরা ভবিষ্যতে কখনও আর দাঁড়াতেও পারবে না। এমন মহান প্রাপ্তি জাতির জন্য আশীর্বাদ তো বটেই ৩০ লাখ বীর শহীদ ও ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের জন্যও এক অবিস্মরণীয় উপহার। বাংলাদেশের বিজ্ঞ সমাজ এই নির্বাচনকে তুলনা করছেন ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং ’৭০ এর আওয়ামী লীগের সেই কালজয়ী, ভাগ্যনির্ধারণী সর্বসাধারণের ঐতিহাসিক রায়কে। সারা বাংলা শঙ্কামুক্ত হলো, বিএনপির অগণতান্ত্রিক, জনবিচ্ছিন্ন, উদ্দেশ্যহীন রাজনীতি নির্মম পরিণতির দিকে চলে যেতেও সময় নিল না। জন রায়ের বিজয় আভায় প্রধানমন্ত্রী সিক্ত হলেন- সেখান থেকে আরও দ্যুতি বিতরণ সুনিশ্চিত পথযাত্রায় সুনির্দিষ্ট গন্তব্যের নির্দেশনা দীপ্তিমান হলো। সম্ভাবনাময় আধুনিক বাংলাদেশকে আর পেছনের দিকে তাকাতে হবে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনী অঙ্গীকার যেভাবে তার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে একই প্রত্যয়ে ২০১৯ সালও সুপরিকল্পিত লক্ষ্যমাত্রায় নিরন্তর আলো ছড়াবে। যা দেশের শহরাঞ্চলেই নয়, গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এর বিকিরণ দৃশ্যমান হবে। সময়ের প্রজন্মই দেশের ভাবী কর্ণধার এই অনন্য বাণীকে পর্বত সমান মর্যাদায় তুলে এনে উদ্দীপ্ত তারুণ্যের যে জয়গান প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয়েছে সেটাই হবে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার এক অনমনীয় দীপ্ত চেতনা। মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ, মাদকের মতো সর্বগ্রাসী মহাদুর্যোগকে যেভাবে কঠিন-কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণে এনেছেনÑ একই ধারায় দুর্নীতির মতো সর্বনাশা বিপর্যয়কেও দৃঢ়চিত্তে মোকাবেলা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। দুর্নীতির দুর্বিপাকে পড়া দেশকে তরুণ প্রজন্মই সততা, দক্ষতা, বিচক্ষণতা এবং আদর্শনিষ্ঠায় নতুন পথের সন্ধান দেবে। নির্বাচনপূর্ব তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে এক খোলামেলা ও আন্তরিক আলাপচারিতায় এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। যার দ্যুতি ছড়িয়ে দিলেন তিনি উদীয়মান, দেশের ভাবী কর্ণধারদের মধ্যে। দৃঢ়চিত্তে আহ্বান জানালেন তার অসমাপ্ত কাজের সঙ্গে থেকে দেশের অবশিষ্ট আবর্জনগুলো অবশ্যই সাফ করতে হবে। তার আগে নিজেদের তৈরি করা অত্যন্ত জরুরী দেশের যথার্থ আর যোগ্য নাগরিক হিসেবেই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী হয়ে বিশ্বজনীনতায়ও সম্পৃক্ত হওয়ার মতো মেধা ও মননের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে। উদ্দীপ্ত তারুণ্যের অজেয় মনোবল, অমিত সাহস ও দৃঢ় মনন শক্তি জাতির অন্ধকার দূরীকরণে মূল ভূমিকা পালন করবে। দেশকে পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত করতে নতুন সংগ্রামী অভিযাত্রায় দুর্গম পথপরিক্রমাকে অতিক্রম করতে হবে। দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, দুর্নীতির ব্যাপারে এবার একদম জিরো টলারেন্স। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতেও জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। সহজ, সরল পথে বৃহত্তর অর্জন কখনও নির্বিঘœ হয় না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হয়নি। অকৃত্রিম দেশাত্মবোধ নিরলস পরিশ্রম, সময়ের মিছিলে সম্পৃক্ত হওয়া, চলমান ও বিকশিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানো, আধুনিক জ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে নিজেদের সমৃদ্ধ করাসহ অনেক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে গন্তব্য স্থির করতে হয়েছে। বাধা এসেছে, ত্রুটিবিচ্যুতির আশঙ্কায় সমকালীন অনেক বিপরীত স্রোতকেও পার করতে হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের জোটবদ্ধ সন্ত্রাসী কর্মকা-ে সারাদেশ যখন আতঙ্কিত, শ্বাপদ সঙ্কুল অরণ্যে জাতি যখন বিপন্ন অবস্থায়, সেই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিচল নিষ্ঠা, যোগ্য নেতৃত্ব এবং সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনায় অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে যেতে পিছপা হননি। সেই অদম্য সাহসিকতা তাকে কখনও লক্ষ্যচ্যুত কিংবা দিশেহারা করেনি। জনগণই প্রধানমন্ত্রীর শক্তিই শুধু নয় সর্বক্ষণের সাথীও। আগামী পাঁচ বছরেও সাধারণ মানুষের কাছে থেকেই তার অসমাপ্ত কাজ এবং নতুন অঙ্গীকার পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বেশি বেগ পেতে হবে না। গত দশ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনায় সর্বসাধারণের জীবন-মানের যে অবিস্মরণীয় সমৃদ্ধি তাতে জনমনে যে স্বস্তি এবং নির্বিঘ্ন চলার পথ অবারিত হয়েছে সামনে তার গতি আরও বেড়ে যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করাই যায়। দোর্দ- প্রতাপ বিএনপি-জামায়াত জোটের সমস্ত অপশক্তির অবক্ষয় হয়েছে এবারের নির্বাচনে। তারা শুধু বিরোধী নয়, প্রতিপক্ষ অশুভশক্তি হিসেবে তাদের সমস্ত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। আর এই রকম একটি সুবর্ণ সুযোগ এখন আমাদের হাতের নাগালে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দেশকে অগ্রগতির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে বেশি বেগ পেতে হবে না। এমনভাবে জনগণের রায় এই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে গেল যা তাদের হিসাবের মধ্যেই ছিল না। সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতৃত্বের সঙ্কট, জনগণের সঙ্গে ক্রমাগত বিচ্ছিন্নতা, দেশ ও মানুষের কল্যাণে কোন মহৎ এবং বড় বিষয়ের প্রতি তাদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা সব মিলিয়ে তারা এখন অসহায় এবং দুর্বলই শুধু নয়, অস্তিত্ব হারানোর সঙ্কটের আবর্তেও। এমন সর্বনাশা কঠিন বেড়াজাল থেকে তাদের আদৌ মুক্তি হবে কি না সেটা সময়ই জবাব দেবে। শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে নিজেকে তৈরি করার সমস্ত সুযোগ তাদের হাতের কাছে থাকলেও তারা সেটা অবহেলায় হারাতে থাকে। কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, ঘাতক-দালাল-জামায়াতকে ছাড়তে রাজি হলো না। খালেদা জিয়া কারাবন্দী। অপরাধের দ- মাথায় নিয়ে একাকী, নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন জেলের অভ্যন্তরে। আর বিলাসী পুত্র তারেক রহমান অর্থবিত্তের সাড়ম্বরতায় প্রবাসী জীবন কাটাচ্ছে আনন্দ আর সম্পদের পাহাড়ে। এবারের নির্বাচনেও লন্ডনে বসে মনোনয়ন বাণিজ্যে তার আয় হয়েছে নাকি কয়েক শ’ কোটি টাকা। এমন অর্থলিপ্সা আর বিলাসী জীবন যার প্রতিদিনের অনুষঙ্গ তার পক্ষে কি কখনও মাকে শান্তি দেয়া কিংবা দলের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা সম্ভব? প্রাচুর্যের আবরণে এমন অস্থির উন্মত্ততা কাউকে কি সুস্থির, স্বাভাবিক আর সুস্থ জীবন দিতে পারে? তার পরেও লন্ডনে বসে এমন কোন অপকর্ম নেই যা তার দ্বারা সম্ভব হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আজ যে মাত্রায় নিয়ে গেছেন সেখানে বিশ্ব পরিসরেও এসেছে সাফল্য, খ্যাতি। নিজেও অভিষিক্ত হয়েছেন বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের কাতারে। শুধু কি ক্ষমতার রাজনীতি? মনুষ্যত্বের জয়গানে, মানবিক মূল্যবোধে আজ তিনি মানবতার জননী। বাস্তুচ্যুত, দেশত্যাগী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে আশ্রয়দানই শুধু নয়, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকারের মাত্রায়ও। শেখ হাসিনার ওপর জরিপ করা সিংহভাগ প্রতিবেদনই বিশ্ব পরিসরের, বাংলাদেশের নয়। বিশ্ব নারী নেতৃত্বের শীর্ষ স্থানে আসা যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রভিক্তিক গবেষণা সংস্থা ‘গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড’ কর্তৃক বিবেচিত, সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানিত করা হয়েছে শুধুমাত্র নিজেকে যোগ্যতম করে তোলার জন্য নয়, তার চেয়েও বেশি বাংলাদেশের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া নারীদের অনেকখানি এগিয়ে দেয়ার কারণেও। নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, ভিন্ন মানের পেশায়, নারীরা তাদের জীবনকে এগিয়ে নিচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তিতেও মেয়েরা পিছিয়ে নেই, নতুন উদ্যোক্তা তৈরির সম্ভাবনা আজ সারাদেশে সম্প্রসারিত এক নব অধ্যায়। সমতাভিত্তিক সমাজ গড়তে অর্ধাংশ নারী জাতির অংশীদারিত্ব স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান না হলে সামগ্রিক অর্থে দেশ কখনও এগিয়ে যায় না। ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের গতিশীলতায় বাংলাদেশের অব্যাহত অভিযাত্রায় ব্যাপক গণসংযোগ, শক্তি, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের সার্বিক অংশগ্রহণ সমৃদ্ধির নিয়ামক। আগামী বাংলাদেশ সে ধারারই যথার্থ অনুগামী হবে এমন আকাক্সিক্ষত স্বপ্নে জাতি আজ উদ্বেলিত, আনন্দে বিহ্বল। পথ হারানোর অনেক শঙ্কা দূর হলেও যাত্রাপথ কখনও নির্বিঘ্ন, নিরাপদ হয় না। সাবধান আর সতর্ক থেকে প্রতিদিনই অশুভশক্তিকে জয় করতে হবে। স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন মাটিতে আগাছা জন্মাতেও সময় নেয় না। অনাকাক্সিক্ষত অশুভ শক্তিও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। বিজয়ের আনন্দে অপশক্তিকে তুচ্ছ আর অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। যে কোন মুহূর্তে ছোবল মারতে পারে। লেখক : সাংবাদিক
×