ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটের হার ৪ উইকেটে

আফ্রিদির ব্যাটিং ঝড়ে কুমিল্লার রোমাঞ্চকর জয়

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

আফ্রিদির ব্যাটিং ঝড়ে কুমিল্লার রোমাঞ্চকর জয়

মিথুন আশরাফ ॥ অস্ট্রেলিয়ার দুই সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। যদিও তারা এখন বল টেম্পারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ আছেন। তবে শীঘ্রই, মার্চের পরই মুক্ত হয়ে যাবেন। এর আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) ষষ্ঠ আসরকে তারা জাতীয় দলে ফেরার পথ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বিপিএলে দুইজনই প্রথমবার খেলছেন। দুইজনই আবার পরস্পরের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছেন। তাতে স্মিথই জয়ী হয়েছেন। সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক ওয়ার্নারের বিপক্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক স্মিথকে আসলে জেতান পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। তার ব্যাটিং ঝড়েই যে সিলেটকে ৪ উইকেটে হারায় কুমিল্লা। লীগে শুভসূচনাও করে। বিপিএলের মতো টি২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে সবাই চার-ছক্কা দেখতে আসেন। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং দেখতে আসেন। কিন্তু মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটে দিনের ম্যাচে তার দেখা মিলছে না। লো স্কোরিং ম্যাচ হচ্ছে। তাতে বোলাররা ম্যাচে আমেজ আনছেন। কিন্তু মন কী ভরছে? সিলেটই যেমন রবিবার ১২৭ রানের বেশি করতে পারেনি। ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে অনেক কষ্টে এই রান করে সিলেট। এই রান অতিক্রম করতে গিয়ে আবার কুমিল্লাও হারের মুখে পড়ে। লো স্কোরিং ম্যাচও জিততে কত কষ্ট করতে হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু সব আলো রবিবার দিনের ম্যাচে কেড়ে নেন আফ্রিদি। বল হাতে ১ উইকেট নেন। তবে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নিজেকে মেলে ধরে কুমিল্লার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচ জেতান আফ্রিদি। ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯.৫ ওভারে ১৩০ রান করে জিতে যায় কুমিল্লা। তামিম ইকবালও অবশ্য দেখান ঝলক। উইকেটে আঁকড়ে থেকে ৩৫ রান করেন। কুমিল্লায় ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। তারপরও স্মিথের দিকে বিশেষ নজর ছিল। প্রথমবার বিপিএলে খেলছেন। বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আবার এ মুহূর্তে অন্যতমও। স্মিথ বিপিএলে যুক্ত হওয়ায় আকর্ষণও বেড়েছে। সবমিলিয়ে স্মিথেই দৃষ্টি ছিল সবার। কিন্তু ওয়ার্নারের মতো অবস্থাই হয় স্মিথেরও। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে স্মিথ-ওয়ার্নার ‘টাই’ অবস্থানেই আছেন। ব্যাট হাতে ওয়ার্নারের চেয়ে ২ রান বেশি করতে পেরেছেন স্মিথ। তবে স্মিথের আউটটিও দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হবে। থার্ড আম্পায়ার যে ‘¯িœকো মিটার’ দুর্বলতার জন্য স্মিথের ক্যাচ আউটটি শতভাগ স্বচ্ছভাবে দিতে পারলেন না। যতদূর বোঝা গেছে, এর ওপর নির্ভর করেই আউট দিতে হয়েছে। স্মিথ ১৭ বলে ১ চারে ১৬ রান করে আউট হয়েছেন দলের ৫১ রানে। এর আগে ২১ রানের মধ্যে এভিন লুইস ও ইমরুল কায়েস আউট হয়ে যান। তাতে কুমিল্লা চাপেও পড়ে। তবে ওপেনার তামিম ইকবাল ঠিকই হাল ধরে থাকেন। শোয়েব মালিককে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তামিম। খুব বেশিদূর যেতে পারেননি। ২৪ রানের জুটি গড়েন। তবে কার্যকর জুটি হয় এটি। ৭৫ রানে গিয়ে স্পিন ‘বিস্ময় বালক’ নেপালের সন্দ্বীপ লামিচানের বলে আউট হয়ে যান মালিক (১৩)। সবাই তখন জৌলুস হারানো শহীদ আফ্রিদির ব্যাট হাতে নামার অপেক্ষায় থাকেন। যদি ব্যাটিং ঝড় দেখা যায়। ৮৩ রানের সময় এনামুল হক বিজয় আউট হওয়ার পর আফ্রিদি ব্যাট হাতে নামেন। চার-ছক্কাও হাঁকান। জৌলুস ছড়ান। বুঝিয়ে দেন ফুরিয়ে যাননি। যেমনটি আশা করেছেন আফ্রিদিপ্রেমীরা, তেমনটিই ব্যাটিং করেছেন। ব্যাটিং ঝড়ও তুলেছেন। কিন্তু শুরুতেই আফ্রিদি-তামিম ভুল বোঝাবুঝিতে তামিম (৩৫) রান আউট হন। তবে এরপর আর উইকেট হারাতে হয়নি কুমিল্লাকে। আফ্রিদির ২৫ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় করা অপরাজিত ৩৯ রানের ব্যাটিং তা-বেই ম্যাচ জিতে যায় কুমিল্লা। সুইপ করে স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতান আফ্রিদি। ৯৭ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর কুমিল্লার জয় নিয়ে যে ভাবনা ওঠে, আফ্রিদি ঝড়ের সঙ্গে আফ্রিদি-সাইফউদ্দিনের (৫*) ৩৩ রানের জুটিতেই সেই ভাবনা শেষ হয়ে যায়। ২ পয়েন্ট পায় কুমিল্লা। লীগে শুভসূচনাও করে। লামিচানে ১৬ রানে ২ উইকেট নেন। ১ বল বাকি থাকতে ১৩০ রান করে জিতে যায় কুমিল্লা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হারা সিলেটের ব্যাটিংয়ের সময় কিছু করার আগে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওয়ার্নার আউট হয়ে গেলেন। দুর্ভাগ্য, আউটটি হলেন আবার ‘রান আউট’। শোয়েব মালিকের বলে তৌহিদ হৃদয় স্কয়ার লেগের দিকে বল ঠেলে দেন। ওয়ার্নার রান নেয়ার জন্য দৌড় দেন। হৃদয় একবার এগিয়ে যান। আবার বিপদ দেখে যথা স্থানে আসেন। তবে তৌহিদের আগেই ক্রিজে ঢুকে যান ওয়ার্নার। তারপরও আউট হন। হৃদয়ের পেছনে ওয়ার্নার থাকতেই যে শহীদের ছোড়া বলটি ধরে মালিক স্টাম্পের বেল উপড়ে ফেলেন। ওয়ার্নারকে নিয়েই সিলেটের ভরসা ছিল। বিপিএলে নিজের শুরুটাও দুর্দান্তভাবেই করেন ওয়ার্নার। ১৩ বলে ৩ চারে ১৪ রানও করে ফেলেন। কিন্তু এখানেই থেমে যেতে হয় ওয়ার্নারকে। তার দ্রুত থেমে যাওয়াতে সিলেটও বিপদে পড়ে যায়। দলের ১ রানেই ওপেনার লিটন কুমার দাস আউটের পর ২৩ রানের সময় ওয়ার্নার আউট হওয়াতে খাদের কিনারায় পড়ে যায় সিলেট। দেখতে দেখতে ৫৬ রানের মধ্যেই আরও ৩টি উইকেট হারিয়ে ফেলে। আফিফ হোসেন ধ্রুব, হৃদয় ও সাব্বির রহমান রুম্মন হতাশায় ডোবান। ব্যাটিং ধস নামে। একটা সময় মনে হয়েছিল ১০০ রানও করতে পারবে না সিলেট। কিন্তু নিকোলাস পুরান ও অলক কাপালী মিলে অসাধারণ ব্যাটিং করে দেখান। দুইজন মিলে দলকে শুধু ১০০ রানের ওপরেই নিয়ে যাননি, ষষ্ঠ উইকেটে ৫৫ রানের জুটিও গড়েন। তাতেই সিলেটের স্কোর মজবুত হতে থাকে। ১১১ রানে নিয়ে পুরানকে (২৬ বলে ৪১) যখন ঠেকান মোহাম্মদ শহীদ, এরপর আবার রানের গতি থেমে যায়। ১২২ রানে গিয়ে কাপালী (১৯) আউট হওয়ার পর আর ৫ রান যোগ হতেই সিলেটের ইনিংস শেষ হয়। এত কম রান করেও জয়ের আশা জাগায় সিলেট। কিন্তু আফ্রিদি ঝড়েই সব ল-ভ- হয়ে যায়। কুমিল্লা জয় পায়। স্কোর ॥ সিলেট সিক্সার্স ইনিংস- ১২৭/৮; ২০ ওভার (লিটন ১, ওয়ার্নার ১৪, হৃদয় ৮, আফিফ ১৯, সাব্বির ৭, পুরান ৪১, কাপালী ১৯, তাসকিন ৪, লামিচানে ১*, আল-আমিন ১*; সাইফউদ্দিন ২/১৩, শহীদ ২/২২, মেহেদী ২/২৪)। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ইনিংস- ১৩০/৬; ১৯.৫ ওভার (তামিম ৩৫, লুইস ৫, ইমরুল ০, স্মিথ ১৬, মালিক ১৩, বিজয় ৫, আফ্রিদি ৩৯*, সাইফউদ্দিন ৫*; লামিচানে ২/১৬, আল-আমিন ২/২৭)। ফল ॥ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ শহীদ আফ্রিদি (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)।
×