ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বটতলার ‘খনা’ ও এথিকের আলোর অপেরা মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

 বটতলার ‘খনা’ ও এথিকের আলোর অপেরা মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতল সন্ধ্যায় নাটক দেখে কেটেছে সুন্দর সময়। দর্শকে পরিপূর্ণ ছিল না মিলনায়তন। তাই বলে ছিল না দর্শকখরা। সন্ধ্যার অবকাশে মঞ্চের আলো-আঁধারিতে নাট্যপ্রেমীরা নিমজ্জিত হয়েছে গল্পের গহীনে। সংলাপের ভেতর দিয়ে উঠে আসা বিষয়কে উপলব্ধির পাশাপাশি বিনোদিত হয়েছেন নাট্যরসিকের মন। রবিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা দুটি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে দুটি নাটক। এক্সমপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয়েছে নাট্যদল বটতলার তৃতীয় প্রযোজনা ‘খনা’। অন্যদিকে নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয়েছে নাট্যদল এথিকের নতুন নাটক ‘আলোর অপেরা’। সামিনা লুৎফা নিত্রা রচিত খনা নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। লীলাবতী নামে এক বিদুষী নারী যার অপর নাম খনা, তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে প্রযোজনাটির কাহিনী। কিংবদন্তির ঘেরাটোপে বন্দী গল্পটা অনেক পুরনো। লীলাবতী এক বিদুষী জ্যোতিষী, স্বামী মিহিরও একই বৃত্তিধারী। শ্বশুর যশস্বী জ্যোতিষী বরাহ মিহির। পুত্রজায়ার যশ, খ্যাতি ও বিদ্যার প্রভাবে বরাহের মাঝে তৈরি হয় হীনমন্যতা ও ঈর্ষা। শ্বশুরের নির্দেশে লীলাবতীর জিহ্বা কর্তন ও তার ‘খনা’ হয়ে উঠার গল্প পেরিয়েছে প্রজন্মের সীমানা। খনার বচনের মাঝে টিকে থাকা শত বছর আগের জল, মাটি, ফসল আর মানুষের গন্ধমাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর? নাকি এ সত্য-তথ্য সবই এ ভূখ-ের বৃষ্টি, পলি, আর জল হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকা যুগান্তরের সামষ্টিক জ্ঞানের সংকলন? লীলাবতী শুধুই কি একজন নারী বলে তার পরিণতি নির্মম, নাকি তিনি নারী হয়ে মিশেছিলেন চাষাভুষার সনে; সেই তার কাল? পুরুষতন্ত্র না শ্রেণী কাঠামো; নাকি উভয় দাঁড়ায় লীলাবতীর বিপ্রতীপে? মিহির বা প্রাকৃত লোকালয় কারোর পরোয়া না করা জীবনত্যাগী নেশার ঘোর তাকে নিয়ে যায় দিগন্তের ওপার। খনার সত্য শুধু থেকে যায় কৃষকের মুখে। তবু প্রশ্ন থাকে, খনার সত্যই কি একক সত্য? নাকি আজকে নির্ভুল যা কাল তা হতে পারে অসত্য? শুধু সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর যে মৃত্যুনেশা তাঁর সে নেশা কি এক রোখা জেদ? খনা নিজেই নিজেকে করেন সম্মুখীন প্রশ্নের। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা, ইমরান খান মুন্না, কাজী রোকসানা রুমা, ইভান রিয়াজ, তৌফিক হাসান, শেউতি শা’গুফতা, মিজানুর রহমান, সুমিত তেওয়ারি রানা, ম. সাঈদ, পঙ্কজ মজুমদার, হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, হুমায়ূন আজম রেওয়াজ, নাফিউল ইসলাম ও হাফিজা আক্তার ঝুমা । অভিনয়শিল্পীর স্বাধীন সত্তাকে তুলে ধরা নাটক ‘আলোর অপেরা’ নির্মিত হয়েছে উৎপল দত্তের ‘টিনের তলোয়ার’ ও শম্ভু মিত্রের ‘চাঁদ বণিকের পালা’র নির্যাসে। নাটকটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন অপু শহীদ। প্রযোজনাটির কাহিনীতে উঠে এসেছে নাটকের ভেতরে নাটক। নাট্যদলে বিরাজমান নানা সঙ্কট। অভিনেত্রী সঙ্কট থেকে মহড়া কক্ষ ও হল বরাদ্দের সঙ্কট। এর মাঝেই বারংবার পুরনো ধাঁচের নাটক সাগর সুন্দরীর প্রদর্শনীর চালিয়ে যায় দলটি। পাশাপাশি শুরু করে চাঁদ বণিকের পালা নাটকের মহড়া। এরপর নাটকের ভেতর ঘটতে থাকে আরও নাটক। নাট্যতত্ত্বে স্নাতক সম্পন্ন করা অর্কিড খান চায় প্রথার বাইরে বেরিয়ে নাটকে নানান ভাংচুর করতে। কিন্তু দলে এসে তার মনে হয়, থিয়েটার মানে শুধু তত্ত্ব নয়। প্রয়োগে রয়েছে বহুমুখী জটিলতা। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় সে। রূপসা নামের মেধাবী মেয়েটি অভিনেত্রী হতে চাইলেও পরিস্থিতির কারণে হয়ে ওঠে আলালের আশ্রিতা। এমন অগণিত সঙ্কটের কবলে পড়ে নতুন নাটক মঞ্চায়নে ব্যর্থ হয় দলটি। ক্ষুব্ধ দলের সদস্যরা হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। এমন পরিস্থিতিতে দলপ্রধান আবার সেই পুরনো নাটকের প্রদর্শনীর আয়োজন করে। কিন্তু পুরনো নাটকের মাঝে চলে আসে নতুন নাটকের নির্যাস। মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনয়শিল্পীরাই হয়ে ওঠে সর্বেসর্বা। সাগর সুন্দরী নাটকে অভিনয় করতে অভিনেতারা ঢুকে পড়ে চাঁদ বণিকের পালা নাটকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন নাট্যকার বা নির্দেশক। সকল শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তির পথ খুঁজে নেয় অভিনেতারা। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন মিন্টু সরদার, মনি কাঞ্চন, ইমতিয়াজ আসাদ, রাতুল মীর, এনামুল মীর, ইমতিয়াজ আসাদ, হাসনে আরা ডালিয়া, রবিউল হাসান রুবেকল, সুকর্ণ হাসান, সাবা নূর, রুবি খান, উম্মে হাবীবা, সবুজ রহমান প্রমুখ।
×