ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অপুকে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পাওয়ার দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

নির্বাচন বানচাল করতে কয়েক শ’ কোটি টাকা দিয়েছিল আইএসআই

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

  নির্বাচন বানচাল করতে কয়েক শ’ কোটি টাকা দিয়েছিল আইএসআই

শংকর কুমার দে ॥ দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংসতা, নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল ও বিতর্কিত করার জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কয়েক শ’ কোটি টাকা দিয়েছিল। বাংলাদেশে এই টাকা পাঠিয়েছিলেন লন্ডনে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা, নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টির নীল নক্সা তৈরি করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তারেক রহমান এই নীল নক্সা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেন তার এপিএস মিয়া নুরুদ্দীন অপুকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৫ দিন আগে ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিল থেকে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা উদ্ধারের মামলায় তারেক রহমানের এপিএস মিয়া নুরুদ্দীন অপুকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে হাওয়া ভবন করে সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করে তারেক রহমান। তখন মিয়া নুরুদ্দীন অপু ছিলেন তার এপিএস। ওয়ান ইলেভেনের সময়ে তারেক রহমানের এপিএস অপু পালিয়ে চলে যান মালয়েশিয়ায়। তারেক রহমানের ছোট ভাই কোকো সপরিবারে মালয়েশিয়ায় থাকাকালে সেখানেও তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখে। জীবনে রাজনীতি করবেন না- এমন অঙ্গিকার করে তারেক রহমান দেশ থেকে তখন লন্ডনে চলে যাওয়ার পর অপু সেখানেও তার এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জিয়া পরিবারের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ অপু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গোপনে তৎপর হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের নামে বিএনপির ধানের শীষে প্রার্থী হয়ে তারেক রহমানের দক্ষিণহস্ত হিসেবে দুবাই থেকে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আনা হয় বাংলাদেশে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেয় মিয়া নুরুদ্দীন আহমেদ অপু। নির্বাচনে অংশ নিয়েই অসুস্থতা দেখিয়ে ভর্তি হন রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে। হাসপাতালে অবস্থান করেই নির্বাচনে সহিংসতা, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির তৈরি করা নীল নক্সা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন অপু। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৫ দিন আগে ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিল থেকে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা উদ্ধারসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতার হওয়া তিনজনকে ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত ১ জানুয়ারি তাদের কারাগারে পাঠায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী র‌্যাব ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে মিয়া নুরুদ্দীন আহমেদ অপুকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। এমনকি লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে পাকিস্তানী এই গোয়েন্দা সংস্থাটি। বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সম্প্রতি টেলিফোনে মেহমুদ নামে যে ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল এবং থানায় মামলা হয়েছে সেই ব্যক্তিটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের একজন কর্মকর্তা। আইএসআইয়ের এই কর্মকর্তার পুরো নাম শহীদ মেহমুদ মুহাম্মদ শরিফ। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫৪তম লং কোর্সে তিনি কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। পরে তিনি আইএসআইয়ে যুক্ত হন। ২০০৪ সালে অবসরে যাওয়ার পর থেকে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বসবাস করছেন। বর্তমানে আইএসআইয়ের বেতনভুক্ত এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন তিনি। বাংলাদেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আইএসআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন মেহমুদ। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া কিছু নথিপত্র দুবাইয়ে বিএনপির সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখার সভাপতি জাকির হোসেনের। জাকির হোসেনের মাধ্যমেই যোগাযোগ রাখেন লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমান। গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে ড. খন্দকার মোশাররফের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই অডিও কথোপকথনে হয় তা পরীক্ষা করা হয়। এতে শোনা যায়, বিএনপির এই নেতা বাংলাদেশে তাদের দলের কর্মকা-ের জন্য আইএসআইয়ের সরাসরি সহায়তা চাইছেন। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এখন ভীষণ সমস্যার মধ্যে আছি। এই বিপদ থেকে আপনারাই উদ্ধার করতে পারেন-ইত্যাদি।’ র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, মতিঝিল থেকে উদ্ধারকৃত টাকাগুলো নুরুদ্দীন অপুর পক্ষে ভোট কেনার জন্য ও সারাদেশে নাশকতা চালিয়ে নির্বাচন বানচাল করার জন্য দুবাই থেকে অবৈধভাবে হুন্ডি এবং ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। গত দুই মাসে মতিঝিলের অফিস থেকে ৪শ’ কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা চালানোর জন্য ছড়ানো হয়েছে। যেসব এলাকায় টাকা পাঠানো হয়েছে, সেসব এলাকায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস ঘটনা ঘটেছে। মতিঝিল থেকে এই বিরাট অংকের টাকা উদ্ধারসহ গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের দাবি করেছেন র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোট কেনাসহ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে টাকা পাচার করা হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে রাজধানীর মতিঝিলে সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় ইউনাইটেড কর্পোরেশন অফিসে অভিযান চালিয়ে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা ও ১০ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করে র‌্যাব। ওই ঘটনায় ইউনাইটেড কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হায়দার, গুলশানে মিয়া নুরুদ্দীন আহম্মেদ অপুর কোম্পানি আমেনা এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জয়নাল আবেদীন ও অফিস সহকারী আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব মতিঝিল থানায় অবৈধ অর্থ পাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করে। এই মামলায় মিয়া নুরুদ্দীন আহমেদ অপু ৪ নম্বর আসামি। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। টাকাগুলো কোথায় থেকে এসেছে, কার কাছে পাঠানো হয়েছে, কি কাজে ব্যবহার করা হতো ইত্যাদি বিষয় আমরা তদন্ত করবেন বলে সিআইডির পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলামের দাবি।
×