ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টস শ্রমিক বিক্ষোভ

বিমানবন্দর সড়ক ৫ ঘণ্টা অবরোধ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

বিমানবন্দর সড়ক ৫ ঘণ্টা অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিমানবন্দর এলাকা অচল করা হবে- এমন হুমকি দিয়েছিল শনিবার গার্মেন্টস শ্রমিকরা। তারপরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ সুযোগটাই তারা কাজে লাগিয়েছে শতভাগ। ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে রবিবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ মুখ বিমানবন্দর সড়ক পাঁচ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রাখে। এতে গোটা এলাকা অচল হয়ে পড়ায় টনক নড়ে প্রশাসনের। প্রচ- বিক্ষোভ দেখানোর পর পুলিশের কঠোর হয়ে ওঠার লক্ষণ বুঝতে পেরে- রাস্তা ছাড়তে বাধ্য হয় পোশাক শ্রমিকরা। কিন্তু বেলা পৌনে ২টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে গোল চত্বর থেকে উঠে যাওয়ার আগে তারা আজ (সোমবার) সকালে আবারও বিক্ষোভে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরা এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টের শত শত শ্রমিক সকাল ৯টার দিকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। উত্তরা-আজমপুর থেকে জসীমউদ্দীন পর্যন্ত সড়কে তাদের অবস্থানের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ওই এলাকার গার্মেন্টস মালিকদের মধ্যে কয়েকজন মালিক জানিয়েছেন, যে মুহূর্তে সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতি চলছিল সেই মুুহূর্তে এভাবে হঠাৎ তুচ্ছ অজুহাতে গোটা বিমানবন্দর এলাকা অচল করে দেয়াটা অবশ্যই রহস্যজনক। পুিলশ জানিয়েছে, রবিবার সকাল থেকেই তারা হঠাৎ করে আসতে থাকে বিমানবন্দরের দিকে। তাদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঢাকার উত্তর খান ও দক্ষিণ খান এলাকা থেকেও শ্রমিকরা এসে সড়কে অবস্থান নিতে শুরু করে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। উত্তরবঙ্গ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী ও সিলেট থেকে ঢাকামুখী বাস মিনিবাস আব্দুল্লাহপুর এলাকায় এসে আটকে যায়। একইভাবে ঢাকা থেকে উত্তরমুখী যানবাহনগুলো বের হতে গিয়ে আটকা পড়ে বনানীতেই। সেই যানজট গিয়ে ঠেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। এ অবস্থায় চলে টানা পাঁচ ঘণ্টা। কোন যানবাহন বিমানবন্দর গোলচক্কর দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণমুখী হতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শী পথিক জামাল জানান, আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি অংশ বেলা ১১টার দিকে বিমানবন্দরের সামনের গোলচত্বরে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি জসীমউদ্দীন, রাজলক্ষ্মী, আজমপুর, হাউসবিল্ডিং, আবদুল্লাহপুর এলাকায় তাদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের মধ্যে মাসুমা নামের একজন বলেন, সকালে সহকর্মীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিক্ষোভে আসি। আমি জানতাম না আন্দোলনের বিষয়ে। আমার অফিসে খবর দিছে অন্যরা। সেই খবর শুইনা এইখানে আসছি। আমাদের দাবি আমাদের বেসিক সাড়ে আট হাজার টাকা থেকে বাড়াইয়া সাড়ে দশ হাজার টাকা করুক। একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দক্ষিণ খানের চালাবন এলাকার ইপিলিয়ন গার্মেন্টের কর্মী সুমাইয়া অভিযোগ করে জানান, তাদের ওপর নানা ধরনের ‘অন্যায়’ করা হয়। এজন্য তারা পথে নেমেছেন। বলেন, আমাদের বেতন যা বাড়ানোর কথা ছিল তা তো বাড়ায়নি। উল্টো কাজের পরিমাণ বেড়ে গেছে। প্রতি ঘণ্টায় টার্গেট দিয়া দেয়। টার্গেট পূরণ করতে না পারলে গালিগালাজ করে। ক্যাসিওপিয়া গার্মেন্টেসের কর্মী মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান বলেন, কাজের চাপে পেশাবও করতে যাইতে পারি না। টার্গেট পূরণ না করতে পারলে বকাঝকা, মারধরও করে। এদিকে বিমানবন্দর সড়কের উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিদেশগামী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেককে কুড়িল থেকে ব্যাগ হাতে হেঁটে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। হাউসবিল্ডিং কাউন্টার থেকে বেলা সাড়ে ৯টায় রওনা হয়ে রাস্তায় আটকা পড়ে মাওয়াগামী প্রচেষ্টা পরিবহনের একটি বাস। বাস চালকের সহকারী দুলাল বলেন, উত্তরার বিভিন্ন গলি দিয়ে বিমানবন্দরের কাছাকাছি আসতে পারলেও আর সামনে যাওয়া যায় না। এইহানে আওয়ার পর আর যাইতে পারি না। আটকাইয়া দিছে। কাছের যাত্রীরা নাইমা গেছে। যেরা দূরে যাবে- তারা বইসা আছে। যাইতে পারুম কি না বুঝবার পারতেছি না। এ সম্পর্কে ট্রাফিক নর্থ বিভাগের ডিসি প্রবীর কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও গোলচক্করে অবস্থানের দরুন ট্রাফিকের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল যাতে বড় ধরনের কোন অচলাবস্থা বা জটিলতা দেখা না দেয়। কিছু গাড়ি তাৎক্ষণিক সিদ্বান্তে ভিন্ন মুখী করা হয়েছে। সকালে বিমানবন্দর গোলচক্করে দাঁড়িয়ে ডিউটিরত অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান ভুইয়া জানান, শ্রমিকদের এই বিক্ষোভ এতটা সংঘবদ্ধ হবে, বিমানবন্দর তাদের টার্গেট হবে- এটা ছিল অকল্পনীয়। তারা আগের দিন বিক্ষোভ করেছে আব্দুল্লাহপুর ও হাউসবিল্ডিং এলাকায়। তবে ট্রাফিকের পক্ষ থেকে ঢাকায় প্রবেশমুখী ও বের হওয়া গাড়িগুলোকে আগে থেকেই বার্তা পাঠানো হয়। এতে মহাখালী থেকে উত্তরমুখী গাড়িগুলো খিলক্ষেত ওভার ব্রিজ হয়ে তিন শ’ ফুট দিয়ে বের হওয়ার এবং দউড় এলাকা দিয়ে আশুলিয়া গাবতলী হয়ে রাজধানীতে ঢোকার নির্দেশ দেয়া হয়। একইভাবে গোলচক্করের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য বলাকার সামনের পয়েন্ট খুলে দেয়া হয়। এবং গোলচক্কর দিয়েও ইউটার্ন করার সুযোগ দেয়া হয়। এভাবেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়। এদিকে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে থাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে উত্তরা এলাকার গার্মেন্টস মালিকদেরকে যে কোন মূল্যে রাস্তা থেকে তাদের শ্রমিকদেরকে সরিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। এরপর বেলা দেড়টায় ভার্সেটাইল এ্যাপারেল প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান একে ফজলুল হক আজমপুর চৌরাস্তায় এসে শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, সরকার যে নতুন মজুরি কাঠামো করেছে, আমরা সে অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেব। এটা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। আমাদের গার্মেন্টসের মজুরি কাঠামোতে যদি কোন ভুলত্রুটি থাকে তবে আপনারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তবে সরকারী মজুরি কাঠামোর বাইরে আমরা কিছু করব না। এ সময় দৈনিক জনকণ্ঠসহ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রমিকরা আন্দোলন করবে সেটা আমাদের জানায়নি। তবে আমরা তাদের বলেছি গত ১ ডিসেম্বর যে মজুরি কাঠামো সরকার গঠন করেছে- সে অনুযায়ী আমরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেব। তাদের যদি কোন অসন্তোষ জেগে থাকে তবে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করে নিতে পারে। এ ধরনের আশ্বাস দিয়ে গার্মেন্টস মালিকরা এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে কারখানায় ফিরে যেতে অনুরোধ জানায়। এতে শ্রমিকরা সায় দিয়ে অবরোধ তুলে নেয়। অবরোধ প্রত্যাহারের পর যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে বেলা তিনটায় গাড়ি চলাচল পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল সাংবাদিকদের জানান, সকাল থেকেই শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। রাস্তা বন্ধ করে দেয়। তারপর আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মালিক-শ্রমিকদের সামনে নিয়ে এসেছি। মালিকরা আশ্বাস দেয়ার পর শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছে। শ্রমিকরা যেন সরকারী মজুরি কাঠামোতে বেতন পায় সে বিষয়ে আমাদের নজর থাকবে।
×