ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরও দুই জীবন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

 আরও দুই জীবন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন বছরে আরও দুটি জীবন বীমা কোম্পানি অনুমোদন দিতে পারে সরকার। এ বিষয়ে গতবছরের মার্চ থেকেই অর্থ মন্ত্রণালয় ও বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে জীবন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেয়ার সুপারিশ করা হলেও, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নতুন কোম্পানি অনুমোদন না দেয়ার পক্ষে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপর মহলের চাপে আইডিআরএ দুটি নতুন জীবন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, বিচল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এবং এনআরবি ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স নামে দুটি জীবন বীমা কোম্পানি অনুমোদন পেতে পারে। গতবছরের ডিসেম্বরে কোম্পানি দুটির অনুমোদন দেয়ার বিষয় অনেকটা চূড়ান্ত হয়েছিল। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে নতুন বীমা কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি আইডিআরএ। নতুন জীবন বীমা কোম্পানি অনুমোদনের বিষয়ে গতবছরের ২ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আইডিআর’র চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। উপ-সচিব সাঈদ কুতুব সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, বিচল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড নামে নতুন একটি বীমা কোম্পানিকে নিবন্ধন সনদ প্রদানের বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার জন্য উপস্থাপন করা হয়। এরপর ওই সারসংক্ষেপে অর্থমন্ত্রী নির্দেশনা দেন, ‘এই নথিটি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে অভিমতের জন্য প্রেরণ করা যায়। সরকারের শেষ সময়ে এমন পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে (নতুন লাইসেন্স প্রদান) মন্তব্য চাই। চেয়ারম্যান আইডিআরএ।’ ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের মতামত চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইডিআরএ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ৫ এপ্রিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠান। এই চিঠিতে বলা হয়, ১৬ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে বর্তমানে ৭৮টি নিবন্ধিত বীমা কোম্পানি বীমা ব্যবসা পরিচালনা করছে, যার মধ্যে ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানি। পার্শ্ববর্তী বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারতে এত সংখ্যক বীমা কোম্পানি নেই। বাংলাদেশের বাজারের আকৃতি অনুযায়ী নিবন্ধিত বীমা কোম্পানির এ সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। ‘তাছাড়া ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ১৪টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে বীমা ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে অত্যন্ত অল্পসংখ্যক (মাত্র ১/২টি) কোম্পানির আশানুরূপ ব্যবসা অর্জন করতে পেরেছে। এছাড়া অন্যান্য কোম্পানির লাইফ ফান্ড নেগেটিভ, বীমা গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধে নানা ধরনের গড়িমসি ক্ষেত্রমতে দাবি পরিশোধ না করা, বীমা এজেন্টদের অর্থ আত্মসাত ইত্যাদি অসাধু কার্যক্রম বীমা কোম্পানিগুলোর নাজুক পরিস্থিতিকেই নির্দেশ করে’- উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, উপরন্তু জীবন বীমা শিল্প দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকায় এ শিল্পে দক্ষ জনবল গড়ে ওঠেনি। ফলে কোম্পানিগুলোর সঠিক পরিচালনাও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন মন্তব্য তুলে ধরে চিঠির শেষ অংশ আইডিআরএর চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন কোন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অনুমোদন প্রদানের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নেতিবাচক মতামত প্রদান করা হলো। আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান এমন নেতিবাচক মতামত দিলেও মন্ত্রণালয় থেকে দুটি জীবন বীমা কোম্পানিকে নতুন করে অনুমোদন দিতে ‘চাপ’ দেয়া হয়। একপর্যায়ে গত ডিসেম্বরে কোম্পানি দুটি অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে একপ্রকার সিদ্ধান্তও নেয় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকে আইডিআরএ। এ বিষয়ে আইডিআরএর সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, নতুন বীমা কোম্পানি অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে আমরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। নির্বাচন গেল, সব মিলিয়ে ব্যস্ততা ছিল। এ অবস্থাতেই আছে এখনও। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।
×