ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বছরজুড়ে দাপট দেখিয়েছে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার

প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি মৌলভিত্তি কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

 প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি মৌলভিত্তি কোম্পানি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দরবৃদ্ধির দাপটের মধ্যে দিয়ে শেষ হতে চলছে ২০১৮ সাল। বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই দুর্বল, ছোট এবং নাম সর্বস্ব কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির দাপট দেখা গেছে। আর এসব কোম্পানির কারণে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারদর কমে গেছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব বাজার পতনে ভূমিকা রাখেন বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বাজার চিত্রে দেখা গেছে, বছরজুড়েই মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির সঙ্গে রীতিমতো প্রতিযোগিতা স্বল্পমূলধনী এবং দুর্বল কোম্পানির শেয়ার। কোন ধরনের চিন্তাভাবনা ছাড়াই রাতারাতি পুঁজি বাড়াতে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন অতিলোভী বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে সহজ হয়েছে কারসাজি চক্রদের। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছর কয়েক মাসের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারের দর বাড়তে দেখা যায় ৭৪৭ শতাংশ। বছরের শুরুতে এই শেয়ারের দর ছিল ৬৬৫ টাকা। এক সময় যা ৫ হাজার ৬৩৪ টাকায় লেনদেন হয়। যদিও বোনাস শেয়ার ইস্যু করার পর শেয়ারের দর কমে ১ হাজার ৫২৭ টাকায় আসে। সে হিসাব করলেও প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে ১৩০ শতাংশ। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে বছরজুড়েই অতি মূল্যায়িত ছিল এ শেয়ারের দর। এদিকে বছরের ব্যবধানে মুন্নু সিরামিকের শেয়ারদর বেড়েছে ১৭৪ শতাংশ। একইভাবে বিডি অটোকারসের প্রতিটি শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭১ শতাংশ। অন্য কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যরের শেয়ার দর বাড়ে ২৩৬ শতাংশ। এভাবে আরও কিছু শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে এসব কোম্পানির তুলনায় কমেছে অপেক্ষাকৃত ভালমানের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর। বছরের ব্যবধানে আলোচিত কোম্পানি গ্রামীণ ফোনের শেয়ার দর কমেছে ২৪ শতাংশ। চলতি বছরের শুরুতে এ শেয়ারের দর ছিল ৪৮৬ টাকা। বছরের সর্বশেষ কার্যদিবসে তা লেনদেন হয় ৩৬৭ টাকায়। একইভাবে বছরের ব্যবধানে স্কয়ার ফার্মার শেয়ারদর কমেছে ১৬ শতাংশ। এভাবে কমেছে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ভালমানের কোম্পানির শেয়ারদর। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, পুঁজিবাজারে সারাবছরই কারসাজির সুযোগ নিয়েছে একটি চক্র। চক্রটি দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিকে ঘিরে সহজেই বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। শেয়ারের টানা দরবৃদ্ধি দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হয়েছেন। তাদের কেউ হয়ত মুনাফা করছেন আবার কেউ হয়ত লোকসান করছেন। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে সব সময়ই কিছু লোক সুবিধা নিতে চায়। এরা এমনভাবে বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে লেনদেন যে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন না। যে কারণে তারা অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করতে দু’বার ভাবেন না। বেশিরভাগ সময়ই তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, চলতি বছরের বেশিরভাগ সময়ই বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল ছিল না। এর মধ্যে দিয়ে কিছু কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়েছে। যাতে বিপদগ্রস্ত হয়েছেন। আর এসব ক্ষেত্রে বিএসইসির তেমন কোন ভূমিকা চোখে পড়েনি। যে কারণে এসব কোম্পানির শেয়ার দর আরও বেড়েছে পক্ষান্তরে কমে গেছে ভালমানের কোম্পানির শেয়ার দর। এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, বেশিরভাগ দিনই নামমাত্র শেয়ার লেনদেন হয়। সারাদিনে লেনদেন হয় কয়েক হাওলা শেয়ার। এভাবে এক সময় দর বেড়ে যায়। ঠিক সেই সময়ে বেশি দরে শেয়ার সেল করে সটকে পড়েন সুযোগসন্ধানীরা।
×