ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

হার্ট এ্যাটাকের ৭ লক্ষণ

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

হার্ট এ্যাটাকের ৭ লক্ষণ

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হৃদরোগ। এ রোগে মৃত্যুবরণকারী মানুষের সংখ্যা কমা তো দূরের কথা বরং বেড়েই চলেছে। বুকে ব্যথা বা চাপ চাপ ভাব, ঠান্ডা ঘাম, অত্যধিক দুর্বলতা এগুলো হলো হার্ট এ্যাটাকের অতি পরিচিত গতানুগতিক লক্ষণ। তবে আরও কিছু সূক্ষ্ম লক্ষণ আছে যেগুলো টের না পাওয়াই সহজ। আপনি যদি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলোর যে কোন একটি বুঝতে পারেন ডাক্তার দেখাতে দেরি করবেন না। হার্ট এ্যাটাকের এই লক্ষণগুলো আগাম টের পেয়ে দ্রুত চিকিৎসা নিলে আপনার জীবন বাঁচতে পারে। অবসাদ কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ স্টেসি, ই, রোসেন বলেন হার্ট এ্যাটাকের যে কারণগুলো তিনি সবচেয়ে সচরাচর লক্ষ্য করেছেন এবং বিশেষভাবে মহিলাদের মধ্যে দেখেছেন তার একটি হলো অবসাদ বা ক্লান্তি। তিনি বলেন, আমার ২৫ বছরের ডাক্তারি অভিজ্ঞতায় দেখেছি হার্ট এ্যাটাকের দ্বারপ্রান্তে উপনীত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তারা ক্লান্ত অবসন্ন বোধ করছেন এবং গতানুগতিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। হার্ট এ্যাটাকের সময় হৃৎপি-ের দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে পেশীগুলোর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে যে কারণে ক্লান্ত অবসন্ন বোধ হয়। কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ অন্নপূর্ণা কিনি বলেন, ডাক্তারকে আপনার ইসিজি করতে বলতে সঙ্কোচ বোধ করবেন না। ইসিজিতে হার্টের ক্রিয়াকলাপ ধরা পড়ে। অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে ডাক্তাররা সঙ্গে সঙ্গে ইসিজি করতে নাও বলতে পারেন। কিন্তু আপনি পীড়াপীড়ি করে করিয়ে নেবেন। পিঠে, হাতে বা বুকে ব্যথা এসব জায়গায় ব্যথা অনুভব করা অনেক সময় হার্ট এ্যাটাকের নীরব লক্ষণ। আর্টারিতে ব্লক হলে হৃদপেশীর কোষগুলোতে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। তখন কোষগুলোর অক্সিজেন ফুরিয়ে যেতে শুরু করে। হার্ট এ্যাটাকের সময় এই কোষগুলো স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে ব্যথার সঙ্কেত দিতে থাকে। হার্ট এ্যাটাকের সময় বুকে যে অদ্ভুত ধরনের ভার ভার বোধ হওয়া তা অনেক সময় এই ব্যথার সঙ্গে থাকে না বলে লোকে সেই ব্যথা অনেক সময় আমলে নিতে চায় না। হাঁপ ধরা সিঁড়ি বেয়ে ওঠা আপনার জন্য সমস্যা হয়ে না থাকলে যদি সহসা লক্ষ্য করেন যে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে আপনার রীতিমতো হাঁপ ধরছে, দম নিতে পারছেন না তা হলে ব্যাপারটা হার্ট এ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠার পর পরই যদি হাঁপ ধরা বা দম নিতে না পারা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তা হলে সেটাও হার্টের কোন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। সারা শরীরের কোষগুলোতে অক্সিজেন বয়ে নেয়া এবং সেগুলো থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড দূর করে দেয়ার ক্ষেত্রে হৃৎপিন্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাজেই রক্তের বাধাগ্রস্ত প্রবাহ শ্বাসকষ্টের কারণ ঘটিয়ে থাকে। বুক জ্বালা বা গ্যাস হওয়া পিজ্জা খাওয়ার পর মাঝে মাঝে যদি বুক জ্বালা ভাব হয় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার সম্ভবত কোন কারণ নেই। কিন্তু ব্যাপারটা যদি একটু অস্বাভাবিক ধরনের হয় তা হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে ভুল করবেন না। এনজাইনা হলো বুক জ্বলার মতো বুকের ব্যথা। হৃৎপিন্ডে রক্ত প্রবাহের অভাব হলে এমনটা হয়। হার্ট এ্যাটাকের সময়ই হৃৎপিন্ডে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাত ঘটে। পেট খারাপ হওয়া হার্ট এ্যাটাকের লক্ষণগুলো কখনও কখনও পেট খারাপের লক্ষণের অনুরূপ হতে পারে। যেমন বমি বমি ভাব, বমি হওয়া বা পেট খারাপ হওয়া। এটা বিশেষভাবে মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। গলা, ঘাড় বা চোয়ালের সমস্যা আগে কখনও অনুভব করেননি এমন ধরনের অকারণে ঘাড় বা চোয়ালের ব্যথা বা গলার টাইট টাইট ভাব হার্ট এ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের এসব সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলোর দিকে নজর দেয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কোন একটা সমস্যা হওয়ার অনুভূতি হার্ট এ্যাটাকের রোগীরা কেউ কেউ বলে থাকেন যে, কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে এমন একটা অনুভূতি তাদের এ্যাটাক হওয়ার আগেই হয়েছিল। সুতরাং আপনার মন কি বলছে সেই কণ্ঠ শোনার চেষ্টা করুন। মোশন সিকনেস কেন হয় অনেকে গাড়িতে, বিমানে, জাহাজে ভ্রমণ করলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, বমি করে ফেলা প্রভৃতি সমস্যায় আক্রান্ত হয়। সামগ্রিকভাবে এগুলোকে বলে মেশন সিকনেস বা গতি অসুস্থতা। মেডিক্যাল পরিভাষায় বলে কিনেটোসিস। অনেকে থ্রিডি ছবি বা ইন্টারএ্যাকটিভ ভিডিও গেম সেলেও এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। সমস্যার মূল কারণ কি? মোশন বা গতির বিষয়টি আমাদের অন্তকর্ণ, চোখ, ত্বক প্রভৃতি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা মস্তিষ্কে অনুভূত হয়। গতি অনুভবকারী ইন্দ্রিয়গুলো গতি সম্পর্কিত অভিন্ন ইনপুট মস্তিষ্কে পাঠালে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু ওগুলো ভিন্ন ভিন্ন ইনপুট দিলে তখনই তাদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয় এবং তার পরিণতিতে ঘটে মোশন সিকনেস। প্রশ্ন হচ্ছে কিছু লোকের ক্ষেত্রে এ সমস্যা কেন হয় এবং অন্যদের বেলায় কেন হয় না? আসলে মোশন সিকনেসের মধ্যে কিছু বৈজ্ঞানিক রহস্য আছে। কিছু বিজ্ঞানীর ধারণা সমস্যাটা পরিবারগতভাবে বিদ্যমান। আবার অন্যদের মতে এটা অর্জিতও হতে পারে কিংবা থাকলে তা দূরীভূতও হতে পারে। অনেক সময় শিশুরা কার সিকনেস সমস্যা নিয়ে জন্মায়। ডাঃ জেন রোসেনম্যান বলেন, কেউ কেউ চলন্ত বাসে বা গাড়িতে বসে বই পড়তে পড়তে বমি বমি ভাবে আক্রান্ত হয়। কারণ তাদের চোখের দৃষ্টি স্থির বিষয়ের ওপর নিবন্ধ অথচ অন্তকর্ণ অনুভব করছে গতি। এ অবস্থায় মস্তিষ্ক গোলমেলে অবস্থায় পড়ে এবং সেই ব্যক্তিরা অসুস্থ বোধ করে। ড্রাইভাররা এদিক দিয়ে যাত্রীদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে। কারণ তারা প্রধানত দৃষ্টির ওপর নির্ভর করে এবং অন্যান্য বহিঃইন্দ্রিয়ের ওপর কম নির্ভরশীল থাকে। মোশন সিকনেস ঠেকাতে হলে একদম সামনের যাত্রী আসনে বসাই সবচেয়ে উত্তম। সেই সঙ্গে আপনার দৃষ্টি সামনের রাস্তার ওপর নিবন্ধ রাখুন। এতে করে অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে সংঘাত বাধবে না এবং মোশন সিকনেসও হবে না। দ্বিতীয়ত, বাইরের বা সামনের কোন কিছু স্থির বস্তুর দিকে তাকানো বন্ধ করুন। এতে আপনার কান ও চোখ একই ধরনের তথ্য পাবে। সর্দি গর্মি কতদিন থাকে সাধারণ সর্দি গর্মি হচ্ছে নাসিকায় ও গলায় ভাইরাসের সংক্রমণ। এটা সাধারণত ক্ষতিকর নয় সর্দিও তেমনটা বাহ্যত মনে হয় না। সর্দি গর্মির কারণে বাচ্চাদের স্কুল যাওয়া, বড়দের অফিস যাওয়া বন্ধ রাখতে হয়। সর্দি গর্মির কারণ হলো ভাইরাস। ২শ’ রকমের ভাইরাসের কারণে সর্দি গর্মি। তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ বা প্রচলিত ভাইরাসটি হলো রিনোভাইরাস। সর্দির ভাইরাস বায়ুবাহিত। শরীরের জলীয় অংশ এবং স্পর্শের মাধ্যমেও ছড়িয়ে থাকে। সর্দি গর্মি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। গলাব্যথ্যা সাধারণত প্রথম দু’-একদিন থাকে। মৃদু মাথাব্যথা সাধারণত কয়েকদিন থাকে। হাল্কা জ্বর থাকে কয়েকদিন। অবসাদ এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সর্দি জমে থাকা স্থায়ী হতে পারে এক থেকে দুই সপ্তাহ। কাশিও তাই। সূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
×