ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ ঐক্যফ্রন্ট কি মরিয়া প্রমাণ করিবে, মরে নাই?

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

 সিডনির মেলব্যাগ ॥ ঐক্যফ্রন্ট কি মরিয়া প্রমাণ  করিবে, মরে নাই?

শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা আর মেধাকে সামাল দিতে না পারা ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এখন বেসামাল। ড. কামাল হোসেনের অতীত বিবেচনায় না রেখে কেবল তার ফেস ভ্যালুকে মূল্য দেয়া বিএনপি এখনও বুঝতে পারছে না কোন্্ গাছ ফলবতী আর কোন্্টা নিষ্ফলা। আমি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনার যোগ্য কেউ না। তিনি তাঁর আপন গুণে সম্মানিত। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে কী তার অবদান? যিনি আইনজীবী হিসেবে রাজনীতিতে বেশি পেয়েছেন তার অতীত রেকর্ড কী বলে? আওয়ামী লীগের জোয়ার ব্যতীত কোনকালে জিততে পারেননি। ঢাকার একটি সম্মানীয় আসন থেকে পরাজয় বরণে অভ্যস্ত কামাল হোসেন নিজের টাকায় নির্বাচন করতেন এমনও শোনা যায়নি। যার মানে তার রাজনৈতিক স্বার্থপরতাও সবার জানা। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সংসদ নির্বাচনে হারার অভিজ্ঞতাপুষ্ট এই নেতা একটি আলাদা দল গঠন করে কত বছর তার মাথার ওপর বিরাজ করতেন? সে গণফোরামের এমনই কপাল দুটো সিট পেতেও ধানের শীষের ছায়ায় যেতে হয়। জীবনভর পরাজয় আর ব্যর্থতার ইতিহাস বহন করা মানুষ খালি তার ব্যক্তি ইমেজ ভাঙিয়ে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের মতো শক্তির বিরুদ্ধে জয়ী হবেন বা কাউকে বৈতরণী পার করাবেন এমন ভাবনা যারা করেন তারাই মূলত গতিহারা, দিশেহারা। শপথ না নিয়ে যেসব এমপিরা ভাবছেন সরকারকে কোণঠাসা করতে পারবেন তারা আসলে মূর্খের স্বর্গে বসবাস করছেন। আমি শতভাগ নিশ্চিত তাদের অন্তরে এক, মুখে আরেক। এমনকি মির্জা ফখরুলও তাই। দলের কারণে বা ফ্রন্টের কারণে বিষ গেলার মতো করে তারা সম্মিলিত নামের রব-মান্না-কাদের ও অন্যদের কথা মানছেন। এই যে তারা আমেরিকান দূতের বাড়ি গিয়ে দেখা করে এলেন তার ফল বা ফায়দা কী? আমেরিকার সরকারের চেয়ে রাষ্ট্রদূত বড়? সরকার যেখানে নির্বাচন ফলাফলকে বৈধতা দিয়েছে সেখানে রাজদূত কী করবেন? আর আমেরিকার খবর দেখেছেন মিডিয়ায়? মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার টাকা মঞ্জুর না করায় সে দেশের সরকারী-কর্মচারীরদের বেতন হচ্ছে না। তারা আছে ঘোর সঙ্কটে। সে দেশ এখন আগের জায়গায় আছে যে আপনার নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে মাথা ঘামাবে? পুরনো জমিদারকে বিচার দিয়ে লাভ নেই বিএনপির। বিনয়ের সঙ্গে একটা কথা জানতে চাই, আপনাদের কথামতো সারাদেশে ব্যাপক কারচুপি বা ভোট ডাকাতির ফলে আওয়ামী লীগের এই জয়। তর্কের খাতিরে সেটা সত্য বলে মেনে নিয়ে প্রশ্ন করি, কেন মির্জা ফখরুল ও সুলতান মনসুর একবারও বলছেন না তারা যে দুই আসনে জিতলেন সেখানে কী হয়েছিল? সেসব কেন্দ্রে কি তাদের সমর্থকরা জালভোট ঢুকিয়েছিল বাক্সে না সরকারী দল তাদের কোন সমঝোতার কারণে ছাড় দিয়েছে ওই দুই আসনে? সে কথা না বললে তারা কি স্ববিরোধিতা করছেন না? গণতন্ত্র মানে আমরাই যেখানে জিতেছি আমার দল যেখানে জিতেছে সেটা ঠিক, বাকিগুলো মিথ্যা এ ধারণা বিএনপি ও বিরোধী দলের অস্তিত্ব শেষ করে আনছে দায়ী আপনারাই। সুষ্ঠু বিরোধিতা প্রতিবাদ কিংবা আন্দোলন কিছুই করতে পারেন না। শুধু পানি ঘোলা করেন। এভাবে যে জনগণের নেত্রী শেখ হাসিনাকে কাবু করা যাবে না সেটা আপনারা জেনেও না জানার ভান করছেন। দেখুন এদিকে, সদ্য প্রয়াত দেশবরেণ্য আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশরাফের জীবনী। আমৃত্যু তিনি যে ধৈর্য আর সহনশীলতার রাজনীতি করলেন তাঁর কোন বিকল্প আছে আপনাদের দলে? তিনি যতদিন দায়িত্বে ছিলেন আপনারা নিরাপদে ছিলেন। আপনাদের দলে কি তেমন কাউকে সামনে আনা হয়? আছে কেউ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ভালবাসা রক্তে ধারণ করে বেইমানি না করার? শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা সেখানেই। তিনি সৈয়দ আশরাফকে বিলেত থেকে ডেকে এনেছিলেন। কারণ, তাঁর নাম বোধ এর নামই আন্তরিকতা। তিনি চার জাতীয়নেতার সন্তানদের রাজনীতিতে এনে কাজে লাগিয়েছেন। পরীক্ষিত রক্তের বিশুদ্ধতায় আওয়ামী লীগ পথ হারায় না- এইটুকু জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। কে বলছে দুঃশাসন নেই? ইয়াবা বদির পত্নীও ভোটে জিতেছে। আছে গডফাদার, আছে ধর্ষক লুটেরাও। কিন্তু মানুষ জানে বিশ্বাস করে এসব শেখ হাসিনাই পারবেন নিয়ন্ত্রণ করতে। তিনি এবার নিশ্চয়ই এগুলোর পথ বন্ধ করে মানুষকে সুশাসন আর জবাবদিহিতা ফিরিয়ে দেবেন। এত বছর রাজপথে না নামতে নামতে আপনাদের আসলে পায়ে আর শক্তি নেই। আপনারা তাই পরের পায়ে ভর দিয়ে বাঁচতে চান। একবারও ভাবেননি এসব অরণ্য রোদনে কাজ হবে না। মূলত মুক্তিযুদ্ধের দেশ মাটি ও মানুষের প্রতি আনুগত্যহীনতা আর বিদেশী লবিংনির্ভর রাজনীতি আপনাদের পঙ্গু করে দিয়েছে প্রায়। যে কারণে যেনতেন প্রকারে ঝামেলা পাকানো আর খালি গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে মুখে ফেনা তোলাই সার। মানুষ কী ভাবছে, কাকে ভাবছে সেটা জানতে বেশিদূর যাবার দরকার নেই। মানুষকে অতটা বোকা ভাববেন না। গরম কথা বলা বক ওয়াজ মানুষরা জনপ্রিয় হলে রব আর মান্না জিততেন। জিতেছেন কম কথা বলা মির্জা ফখরুল। আজকে সারাদেশে সৈয়দ আশরাফের জন্য যে দরদ যে মায়া তার কারণও তাই। তাঁর এই অভূতপূর্ব প্রিয়তার কারণ মিতভাষী ইমেজ। সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করার শুভ ইচ্ছা। মানুষের জন্য রাজনীতি হলে মানুষের কাছে আসুন। মানুষের মনের ভাষা পড়ুুন। এতে অন্তত দেশে গজিয়ে ওঠা স্তাবকতা আর চামচামি কমবে। বিরোধী দল না থাকলে মানুষ নালিশ জানাবে কার কাছে? কারা বলবে তাদের প্রতিবাদ ও ভাল না লাগার কথা? জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকা না থাকার তফাতও মানুষ জানে। এরশাদ সাহেব কখনও কথা আর কাজে এক থাকেননি। এখন বলছেন বিরোধী নেতা হবেন ক’দিন পর বলবেন সরকারে থাকবেন। কী বলেন কী করেন বোঝা মুশকিল হওয়ার পরও তার দল টিকে আছে। শুধু কৌশল আর এক ধরনের সমাজে চলার নীতি তার দলকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বিএনপি যদি এবার আসলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তার দায় নেবেন কামাল হোসেন? না তার কিছু যায় আসে? মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আরও সামনে এগিয়ে যেতে চায়। তাদের মনে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আর অগ্রগতি। দেশ সমাজ ও আর্থিক প্রগতির যে জয়রথে বাংলাদেশ চলছে তাকে আপনারা থামাতে পারবেন না। ফলে সময় নষ্ট আর মিডিয়ায় বুদ্বুদ তোলার পরিবর্তে লাইনে আসাই ভাল। সেটা না করতে বা করতে না পারলে বয়স্ক মানুষদের জেদে রাগে কে খামোশ হবেন আর কে সরব হবেন তার বিচারক কিন্তু সময়। বাংলাদেশকে যারাই পেছন থেকে ছুরি মারার অপচেষ্টা করেছে তারাই গেছে আঁস্তাকুড়ে। এবার তো তার সম্ভাবনা আরও বেশি। যে তারুণ্য এবার ভোট দিয়েছে তাদের অবহেলা করা বা অবজ্ঞা করার নাম আত্মহনন। আপনারা কি মরেই প্রমাণ করবেন আপনারা মরেন নাই?
×