ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ তারুণ্যের শক্তিতে বলিয়ান

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

অভিমত ॥ তারুণ্যের শক্তিতে বলিয়ান

‘নতুন ভোটার, প্রথম ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক’-এই শ্লোগানটি ছাত্রলীগের প্রচারণার অন্যতম প্রাণ ছিল এবারের নির্বাচনে। এবার প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার ভোট দিয়েছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য, জামায়াতের সাঈদী, সাকা চৌধুরীর ছেলেসহ যুদ্ধাপরাধী এবং একই চেতনার ২২ জনকে নমিনেশন দেয়া, যুদ্ধাপরাধী নিজামীর ছেলেকে সমর্থন দেয়া প্রভৃতি একেবারেই মেনে নিতে পারেননি বলে ভোট বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ২২ জামায়াতীকে ধানের শীষ দিয়ে বিএনপি আবার প্রমাণ করল যে- বিএনপি এবং জামায়াত অভিন্ন। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষেই ছিলো তারুণ্যের রায়। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারণ করেন, আমরা যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের কাছে আরো অন্য ভাবে সারা জাগালো এবার। কারণ, গৌরবান্বিত ৭১ বছরে পা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ’৭১-এর স্বাধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ১৭ হাজার নেতাকর্মীর বুকের তাজা রক্ত দান করা নির্ভীক তরুণ মুজিবাদীদের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির পতাকা হাতে ৭১ বছরের এই টগবগে দায়িত্ববান তরুণ সারা বাংলার মানুষের ভরসা আর অহঙ্কারের নাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন। উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এই ছাত্রসংগঠনের ব্যাপারটা আর যে কোন দশটা সাধারণ সংগঠন থেকে আলাদা। ছাত্রলীগ শুধু একটি সংগঠন নয় বরং ছাত্রলীগ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতের সেই ক্ষুরধার কলম। যে কলম দিয়ে পিতা মুজিব ধরণীর বুকে এঁকে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, বাংলাদেশ। জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস’। ছাত্রলীগ ছিল বঙ্গবন্ধুর সেই শক্তি যে শক্তি বলে তরুণ ছাত্রনেতা মুজিবুর রহমান উপমহাদেশের তৎকালীন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে পেরেছিলেন, ‘ও রিষষ ঢ়ৎড়াব ঃযধঃ র ধস ংড়সবনড়ফু’। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা-২৯)। বাঙালী জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু নিজ হাতেগড়া এই সংগঠনকে নিয়ে সবসময়ই গর্বিত ছিলেন, ছিলেন অত্যন্ত আবেগীও। তিনি বলেছেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র প্রতিষ্ঠান আমি গড়েছিলাম কয়েকজন নিঃস্বার্থ ছাত্রকর্মী নিয়ে। প্রত্যেকটি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান... এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গোলমাল হলে আমার বুকে খুব আঘাত লাগে।’ (কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা-২১১)। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ সালের আয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয় দফা বাস্তবায়ন ও ১১ দফা দাবি প্রণয়ন, ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ৭০ সালের নির্বাচন, ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরাই ছিল অগ্রবতী সৈনিক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে সর্বপ্রথম ছাত্রলীগই তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইসমত কাদির গামার নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল করে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও ছাত্রলীগের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে ছাত্রলীগ। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠন অসহায় দুস্থদের পাশে বার বার দাঁড়িয়েছে। ফলে তারুণ্যের এই ছাত্রলীগ শুধু আওয়ামী চেতনা থেকে মানবতার চেতনার পথে পথে শান্তি আর মুক্তির বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর। মানবতার ডাকে এই ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা নিজের রক্ত দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকার দৃশ্য একাধিকবার দেখেছে শান্তিকামী বিশ্ব। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের সময় হাজার হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছে এ মানবীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ২০১৫ সালের এপ্রিলে নেপাল যখন ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু উপতক্যয় পরিণত হয় ছাত্রলীগের তখনকার মানবীয় দায়িত্ব ভুলে যাওয়ার নয়। নেপালবাসীর চরম দুর্দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে নেপালবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রলীগ। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নেপালিজ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন বাংলাদেশ’-এর হাতে নগদ ছয় লাখ টাকা তুলে দেন সংগঠনটির তৎকালীন নেতারা। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সঙ্কটে মাদার অব হিউম্যানিটি শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও মানবতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগ জীবন সঙ্কটাপন্ন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠিত মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে তিন মাসের বেশি সময় রোহিঙ্গাদের মাঝে টানা চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ সামগ্রী সরবরাহ করেছে। দেশের প্রতিটি প্রয়োজনে অতীতের ন্যায় আগামীতেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই নির্ভীক এবং মানবতাবাদী পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির পতাকার সম্মানকে সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাবে নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে। কারণ বাংলাদেশ আর ছাত্রলীগ এক অভিন্ন সত্তার নাম। আর এবার নির্বাচনে ভোট বিপ্লবে দেখা গেলো তারুণ্যদীপ্ত এক ছাত্রলীগকে। লেখক : রাজনৈতিক কর্মী
×