ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাজার মনিটরিং

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

বাজার মনিটরিং

বাজারে পণ্যের দাম বিক্রেতার খেয়ালখুশি বা মর্জি মাফিক হলে বিপত্তি দেখা দেয়। ক্রেতার সাধ্যকে অতিক্রম করে যখন পণ্যমূল্য হয়ে পড়ে অত্যধিক তখন বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে বাধ্য। চাহিদার চেয়ে পণ্যের যোগান কম হলে দাম বেড়ে যায়। আবার চাহিদার অত্যধিক পণ্য বাজারে থাকলেও দাম কমে না সহজেই। এমনিতেই একবার যে পণ্যের দাম বাড়ে, তার যোগান বেশি হলেও মূল্যহ্রাস ঘটে না। পণ্যের মূল্য ওঠা-নামা করতেই পারে। কিন্তু তার একটা সীমা-পরিসীমা যে থাকা উচিত, বিক্রেতা সেটা মেনে চলেন না। বরং অধিক মুনাফার জন্য দাম বাড়ানো, ওজনে কম দেয়ার ঘটনা অনেক পুরনো। তবে ওজন মেশিনের কারণে একালে পরিমাণে কম দেয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু পণ্যমূল্য নিয়ে দরদাম করার প্রবণতা বাড়ছে। ভোক্তা অধিকার আইন চালুর পর অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে এলেও প্রবণতা হ্রাস পায়নি। রাজধানীসহ বিভাগীয় বাজার ভালভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং করে আসছে অনেকদিন থেকেই। বাজার মনিটরিং কমিটি বাজার পরিদর্শন করে থাকে। তবে তা নিয়মিত নয়। রমজান মাস এলে পণ্যমূল্য যখন হুহু করে অযথাই বাড়তে থাকে তখন মনিটরিং কমিটির তৎপরতা দেখা যায়। সারা বছর আর কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়, বলা যাবে না। নিত্যপণ্যের বাজার আরও ভালভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য বাজার মনিটরিং কমিটি পুনর্গঠন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের মোট এগারো সদস্য এই কমিটিতে থাকলেও নয়া কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি নির্বাচন ও ছুটিছাটার কারণে। তাই পুরনো কমিটির সদস্যদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। জনবল সঙ্কটের কারণে নয়া কমিটির কাজ শুরু করা যায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করছে, তাদের গঠিত ১৪টি টিম গত এক জানুয়ারি হতে ঢাকা শহরের দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার পরিদর্শন শুরু করেছে। আগামী রমজানের আগে বাজারে যাতে কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে কমিটি। টিমগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম, মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। এ সময় কোন ধরনের অস্বাভাবিক অবস্থা বা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। তবে তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে। মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ভোক্তা অধিদফতরও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নয়া কমিটি কবে নাগাদ কাজ শুরু করতে পারবে তা নিশ্চিত নয়। কমিটি পূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে তদারকি শুরু হবে। নয়া কমিটি বাজার মনিটরকালে পণ্যের আমদানি, উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। কমিটিগুলোর প্রতিদিন বাজার মনিটরিং শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একইসঙ্গে প্রতি জেলায় জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে গঠিত বাজার মনিটরিং কমিটি বাজার পরিদর্শন শেষে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে প্রতিবেদন পাঠাবে। কমিটিকে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার ক্ষমতা দেয়া হবে। এই আদালতের মাধ্যমে কমিটি অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। প্রয়োজনে অবৈধ মজুদে হানা দিয়ে মজুদ পণ্য অবমুক্ত করতে পারবে কমিটি। আগের মতো এবারও বাজারের প্রতিটি দোকানের সামনে নিত্যপণ্যের মূল্যতালিকা টানিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সারা বছর বাজার মনিটরিংয়ের জন্য উপসচিবের নেতৃত্বাধীন প্রতিটি কমিটি ৬ মাস করে বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করার বিধান থাকলেও তা হয় না। সারা বছরের জন্য গঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি টিম মূলত কাজ করে রমজানের সময়। অন্য সময় বাজার অধিক অস্থিতিশীল হলে তাদের উপস্থিতি ঘটে। অন্যথায় ‘নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর অবস্থা’ যেন। সারা বছর বাজার মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থেই প্রয়োজন।
×