ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন কৌশলবিদদের উদ্বেগ বেড়েছে

মহাকাশে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

 মহাকাশে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন

শীতল যুদ্ধ যুগে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ নিবদ্ধ থাকত সোভিয়েত রকেট ও স্যাটেলাইটের দিকে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের মহাকাশ কর্মসূচী মার্কিন কৌশলবিদদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে চীন অন্য যেকোন দেশের তুলনায় বেশিসংখ্যক নভোযান মহাকাশে পাঠাচ্ছে। এএফপি। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি দেশটির মহাকাশ কর্মসূচী পরিচালনা করে থাকে। গত বছর তারা মহাকাশে পাঠিয়েছে ৩৯টি নভোযান। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র পাঠিয়েছিল ৩১টি, রাশিয়া ২০ ও ইউরোপের দেশগুলো ৮টি নভোযান। বৃহস্পতিবার চীনের একটি মহাকাশযান প্রথমবারের মতো চাঁদের উল্টোদিকে অবতরণ করেছে। চাঁদের এই পাশটি অন্ধকার দিক হিসেবে পরিচিত। কারণ এটি পৃথিবী থেকে কখনও দেখা যায় না। মনুষ্যবিহীন চাংই-৪ নামের ওই যান দক্ষিণ গোলার্ধের এইটকেন বেসিনে অবতরণ করে। চাঁদের রহস্য নিয়ে গবেষণার জন্য নভোযানটি পাঠানো হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যম জানায়। মহাকাশ গবেষণায় চীনের এই অর্জনকে মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ আগে পাঠানো সব নভোযান অবতরণ করে চাঁদের পৃথিবীমুখী অংশে। কিন্তু চাংই-৪ প্রথম কোন চন্দ্রযান, যেটি চাঁদের পৃথিবীর বিপরীত দিকের অংশে অবতরণ করে। ২০১৩ সালে চাঁদে প্রথম নভোযান পাঠিয়েছিল চীন। সর্বশেষ চীনের এই অর্জন ১৯৭২ সালের পর চাঁদে নভোচারীদের হাঁটার সুযোগ আবার তৈরি করল বলে মনে করা হচ্ছে। চীন সামরিক ও বেসামরিক মহাকাশ কর্মসূচীতে যে অর্থ ব্যয় করছে তা রাশিয়া ও জাপানের এই খাতে খরচের চেয়ে বেশি। অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক কোআপরেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের দেয়া হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে চীনের বাজেট ছিল ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। কনসালটিং ফার্ম ব্রাইস স্পেস এ্যান্ড টেকনোলজির বিশ্লেষক ফিল স্মিথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করলে পরিমাণটি অনেক কম। এক্ষেত্রে মার্কিন বাজেটের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু জাপান ও রাশিয়ার মহাকাশ বাজেটের চেয়ে পরিমাণটি অনেক বেশি। চীন দীর্ঘদিন ধরেই মহাকাশ কর্মসূচী পরিচালনা করে এসেছে। ১৯৭০ সালে দেশটি মহাকাশে প্রথম স্যাটেলাইট পাঠায়। ২০০৩ সালে প্রথম মনুষ্যবাহী অভিযান পরিচালনা করে। পশ্চিমা জিপিএস পদ্ধতির পাল্টা জবাব হিসেবে দেশটি বেইডু স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম চালু করেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ টড হ্যারিসন মনে করেন, চীন যেভাবে এগুচ্ছে তাতে শীঘ্রই দেশটি মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়াকে ছাপিয়ে যাবে। চীন এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক সাটেলাইটের বাজারে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেনি বা এই বাজারের প্রতি দেশটি এখনও কোন হুমকি নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পেস এক্স, ইউরোপের আরিয়ানাস্পেস এবং রাশিয়া বর্তমানে স্যাটেলাইটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে চীন অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলবে এমন সম্ভাবনাও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সঙ্গে মহাকাশ ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে দুটো ক্ষেত্রে। একটি হলো মহাকাশের সামরিক ব্যবহার। অপরটি মহাকাশ থেকে পাওয়া সম্পদ। মহাকাশ থেকে আনা শিলাখ- ব্যবহার করে রকেটের জন্য জ্বালানি তৈরি করা যদিও এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি, তবে কিছু কিছু মার্কিন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। পরিস্থিতি অবশ্য শীতল যুদ্ধ যুগের মতো নয়। মহাকাশ থেকে সম্পদ আহরণের বিষয়ে কোন আইনকানুন নেই। যা নিয়ে ভবিষ্যতে বিবাদ দেখা দিতে পারে।
×