ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে যাত্রাপালা

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে যাত্রাপালা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজ সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ যাত্রাপালা। অথচ নানা কারণে এই গৌরবময় সাংস্কৃতিক ধারাটির ঐতিহ্য মলিন হতে চলেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী এই ধারাটির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে নানামুখী কর্মসূচী বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ‘যাত্রাশিল্পের নবযাত্রা’ শ্লোগানে ১০৬টি যাত্রা দলকে নিবন্ধনের আওতায় এনে পরিশীলিত যাত্রা চর্চায় উৎসাহিত করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শহীদ মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকটিকে যাত্রাপালায় রূপান্তর করে বাস্তবায়ন ছাড়াও ‘ঈশা খাঁ’ শিরোনামে একটি প্রতœযাত্রা নির্মাণ করে সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। বর্তমানে আরও পাঁচটি যাত্রাপালা নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এই কর্মসূচীর ধারাবাহিকতায় শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি দেশীয় যাত্রাপালা নির্মিত হচ্ছে। পালাগুলো বাছাই কমিটি দ্বারা একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলাতে দেয়া হয়। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি প্রায় ২০/২১টি জেলার পালা মঞ্চায়ন সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে প্রযোজিত হবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ইতোমধ্যে যে সেকল জেলায় পালা প্রযোজনা সমাপ্ত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পালাগুলো হচ্ছে- লালমনিরহাটে ‘বিজয় নিশান’, নেত্রাকোনায় ‘বিরহী দেওয়ান’, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘লাইলী মজনু’, সুনামগঞ্জে ‘নদীয়ার নিমাই’, মাদারীপুরে ‘রাজরক্ত’, গাজীপুরে ‘ভাওয়াল রাজাসন্ন্যাসী’, যশোরে ‘গঙ্গা পুত্র ভীষ্ম, রাজবাড়ীতে ‘ভেনিস সওদাগর’ ও কুড়িগ্রামে ‘রক্তেমাখা স্বদেশ’। ৬৪ জেলায় দেশীয় যাত্রাপালা নির্মাণ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, শিল্প সংস্কৃতিবান্ধব সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নানাবিধ কার্মকা- বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় যাত্রা শিল্পের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমাদের এই উদ্যোগ। ইতোমধ্যে যাত্রাশিল্প নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। আমরা ‘যাত্রাশিল্পের নবযাত্রা’ শিরোনামে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। সারাদেশের মানুষের মনে যাতে যাত্রা বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয় সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমাদের প্রত্যাশা যাত্রা আবার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে আদৃত হবে। যাত্রা বিষয়ক এই কর্মসূচীর অগ্রগতি প্রসঙ্গে যাত্রাপালা বাছাই কমিটির সদস্য সচিব আবু ছালেহ মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে ২০টি জেলায় পালা মঞ্চায়ন সম্পন্ন হয়েছে। এই কর্মসূচীর বিষয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশাকরি এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন যাত্রাশিল্পকে তার স্বরূপে ফিরিয়ে আনবে। তাতে দেশের পেশাদার-অপেশাদার চর্চা আরও গতিশীল হবে। প্রসঙ্গত যাত্রাপালা বাঙালী সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। বাঙালী অথচ যাত্রাপালা দেখেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এক সময় দেশের গ্রাম ও শহরে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল যাত্রাপালা। তখন এটি ভ্রাম্যমাণ বিদ্যালয়ের ভূমিকা পালন করতো। যাত্রাপালার গল্পের মাধ্যমে ঐতিহাসিক বিভিন্ন পেক্ষাপটের পাশাপাশি উঠে আসে সামাজিক নানান অসঙ্গতি। তাতে ফুটে উঠতো অনিয়মের চিত্র। মানুষ যাত্রা দেখে সচেতন হতো, নিজেকে শুধরে নিতে পারতো। তথ্যানুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, গত শতকের নব্বই দশক পর্যন্ত যাত্রা জনপ্রিয় শিল্প মাধ্যম হিসেবে দর্শকমহলে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। অথচ সাম্প্রতিক সময় হঠাৎ করে যাত্রাশিল্প তার অবস্থান হারিয়ে ফেলে। তবে আশার কথা শিল্পকলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। সেজন্য এই প্রতিষ্ঠানটি বাহবা পেতেই পারে।
×