ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে যৌতুক মামলা করে বিপাকে প্রতিবন্ধী

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

শেরপুরে যৌতুক মামলা করে বিপাকে প্রতিবন্ধী

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ৫ জানুয়ারি ॥ শেরপুরে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনায় পাষ- স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছে সোমাইয়া আক্তার (২৪) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওই মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক বেমালুম অস্বীকার করে উল্টো প্রতিবন্ধী সোমাইয়া আক্তারের বিরুদ্ধেই মামলা ঠুকে দিয়েছে প্রতারক পাষ- স্বামী ইব্রাহিম খলিল। এতে হতাশ ও হতবাক হয়ে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে সেই প্রতিবন্ধী। জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার কুমড়ি কাটাজান গ্রামের কৃষক মৃত ইকাতুল্লাহর ৭ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ শারীরিক প্রতিবন্ধী সোমাইয়া আক্তারের সঙ্গে ২০১২ সালের প্রথমদিকে শহরে কোচিং করতে গিয়ে পরিচয় হয় সদর উপজেলার দীঘলদি গ্রামের শামছুল হকের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের। সেই পরিচয়ের পর সম্পর্ক এবং সম্পর্কের সূত্রে এক পর্যায়ে ২০১২ সালের ১০ আগস্ট তারা বিয়ে করে। তাদের বিয়ের বিষয়টি জানার পর খলিলের অভিভাবকরা তা মেনে না নেয়ায় খলিল সোমাইয়াদের সংসারে গিয়ে দাম্পত্য সম্পর্কের জীবন শুরু করে। পড়াশোনার পাট চুকালে সোমাইয়া তার এক আত্মীয়ের সহায়তায় খলিলকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ম্যাটাডোর কোম্পানিতে চাকরি দেয়। এর পর সোমাইয়ার আশা ছিল, এবার কষ্টের বোঝা কমে আসবে, নেমে আসবে দাম্পত্য জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য। কিন্তু বিধি বাম। উল্টো চাকরিতে যোগদান করেই সোমাইয়ার প্রতি চরম উদাসীন হয়ে পড়ে খলিল। তার খোঁজখবর রাখা তো দূরে থাক, বেড়ে যায় যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে গত বছরের মাঝামাঝি খলিল জামালপুরের মিশু নামের মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। এদিকে সোমাইয়া বাধ্য হয়ে স্বামী ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে ১২ আগস্ট শেরপুরের সিআর আমলী আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে এবং পারিবারিক আদালতে মোহরানা ও খোরপোষ আদায়ের দাবিতে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে সমন পেয়ে যৌতুক নির্যাতন মামলায় হাজির হয়ে হাজতে গেলেও এক সপ্তাহ পর জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায় খলিল। এর পর কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে ইব্রাহিম খলিল ৫ নবেম্বর প্রতিবন্ধী সোমাইয়া আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক অস্বীকার এবং তাদের মধ্যকার বিগত ১০/০৮/’১২ তারিখে সংঘটিত কাবিননামাটি জাল বলে দাবি করে সুমাইয়া আক্তার ও তার যৌতুক নিরোধ আইনের মামলার ৪ সাক্ষীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি পাল্টা মামলা ঠুকে দেয়। আদালত বাদীর জবানবন্দী নিয়ে ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক চলতি ৬ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জামালপুরের পিবিআই কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেয়। এর পর পিবিআইয়ের পরিদর্শক ফারুক হোসেন সরেজমিন তদন্তে এলে মানীত সাক্ষীগণসহ আশপাশের সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন খলিল ও সোমাইয়ার বৈবাহিক-দাম্পত্য সম্পর্কের কথা। কেবল তাই নয়, তাদের রেজিস্ট্রি সম্পাদনকারী ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের সহকারী কাজী আব্দুল বাসিতও সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু বাদ সেধেছেন মূল কাজী সৈয়দ আহম্মেদ। তিনি তার দেয়া এক প্রত্যয়নপত্রে ইব্রাহিম খলিল ও সোমাইয়া আক্তারের মধ্যকার বিবাহ রেজিস্ট্রি তার অফিসে হয়নি মর্মে উল্লেখ করেছেন। আর এ নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। ফলে অসহায় হয়ে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় আদালত, তদন্ত কর্মকর্তার কার্যালয়সহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে প্রতিবন্ধী সোমাইয়া আক্তার। শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে কথা হয় প্রেমিক স্বামীর প্রতারণার শিকার প্রতিবন্ধী সোমাইয়া আক্তারসহ স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে। ওই সময় সোমাইয়া নিজের অসহায়ত্বের বর্ণনা দিয়ে প্রতারক স্বামী ইব্রাহিম খলিলের বিচার দাবি করেন। স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান লিটন, আমানুল্লাহ আমানসহ অনেকেই জানান, ইব্রাহিম খলিল ও সোমাইয়া আক্তারের দীর্ঘ বৈবাহিক-দাম্পত্য সম্পর্ক এবং সোমাইয়ার পৈত্রিক বাড়িতে একসঙ্গে বসবাসের কথা। অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ইব্রাহিম খলিল প্রথমে সোমাইয়াকে চেনেন না এবং তার সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নই ওঠে না বলে দাবি করলেও পরে তার সঙ্গে সোমাইয়ার মোবাইলে কথোপকথনের রেকর্ড শোনালে চুপসে যান। এর পর বলেন, আদালতেই প্রমাণ হবে কার অভিযোগ সত্য। এ ব্যাপারে জালিয়াতির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক ফারুক হোসেন বলেন, নির্বাচনী দায়িত্বে ব্যস্ততার কারণে তদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে পিবিআইয়ের জামালপুর অফিসের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকার খুব দ্রুতই ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তদন্ত তদারকি করবেন। এর পর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
×