ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে এবার উপজেলা ভোটের তোড়জোড়

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

রাজশাহীতে এবার উপজেলা ভোটের তোড়জোড়

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে উপজেলা নির্বাচনের খবরে এবার তোড়জোড় শুরু হয়েছে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায়। জাতীয় নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর উপজেলা নির্বাচন নিয়েও বিএনপি একেবারে চুপ থাকলেও আওয়ামী লীগে বইছে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া। রাজশাহী আওয়ামী লীগে এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে বেশ জোরেশোরেই। ইতোমধ্যেই মনোনয়ন যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি শুরু করেছেন নেতারা। আগামী মার্চে দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এমনটি ধরে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ইতোমধ্যেই দোয়া চেয়ে পোস্টার ও ফেস্টুন লাগাতে শুরু করেছেন অনেকেই। একই সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন পেতে স্থানীয় এমপিদের কাছাকাছি ভিড়তে শুরু করেছেন উপজেলার নেতারা। এমপিদের সঙ্গে বিরোধ থাকলে কপাল পুড়তে পারে তাদের, তাই এমপিদের সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। সর্বশেষ ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও দলের সমর্থন নিতে হয়েছে প্রার্থীদের। সেবার জেলার গোদাগাড়ীতে একেএম আসাদুজ্জামান আসাদ, তানোরে গোলাম রাব্বানী, পবায় মুনসুর রহমান, মোহনপুরে আব্দুস সালাম, বাগমারায় জাকিরুল ইসলাম সান্টু, দুর্গাপুরে নজরুল ইসলাম, পুঠিয়ায় প্রথমে আহসানুল হক মাসুদ ও পরে শাহরিয়ার রহিম কনক, চারঘাটে ফখরুল ইসলাম ও বাঘায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন আজিজুল আলম। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বাগমারায় জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও দুর্গাপুরে নজরুল ইসলাম। ফেল করেন বাকি সবাই। এদের মধ্যে গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম রাব্বানী, জাকিরুল ইসলাম সান্টু, আহসানুল হক মাসুদ দলের মনোনয়ন ফরম তোলেন। কিন্তু তারা মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এমপিদের সঙ্গে তাদের বিরোধ বাধে। তবে নির্বাচনের মধ্যেই সেই বিরোধ মিটেছে। এক কাতারে এসে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন সবাই। উপজেলা নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে তারা বিরোধ মিটিয়ে মাঠে নামবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ইসহাক আলী বিএনপির সমর্থনে গতবার নির্বাচিত হলেও এখন তিনি আওয়ামী লীগের নেতা। ফলে এবার কপাল পুড়তে পারে একেএম আসাদুজ্জামান আসাদের। তবে এ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও দুই একজন এবার দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। এলাকায় তারা ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে সবার কাছে দোয়া চাইছেন। তানোর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গতবার দলীয় সমর্থন পেয়েও পরাজিত হন মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানি। এমপির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে এবার তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। সেক্ষেত্রে কপাল খুলতে পারে উপজেলার কলমা ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনও রয়েছে এই কাতারে। ইতোমধ্যেই তাদের মধ্যে একজনকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। পবায় এবারও মনোনয়ন চাইতে পারেন মুনসুর রহমান। তবে এবার তার সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল, জেলা পরিষদের সদস্য ও পবা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এমদাদুল হক এমদাদ এবং জেলা আওয়ামী লীগ দফতর সম্পাদক ফারুক হোসেন ডাবলু। আর মোহনপুরে এবার আব্দুস সালাম ছাড়াও উপজেলা নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলফোর হোসেন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ইকবাল হোসেনসহ আরও কয়েকজন নতুন মুখ। বাগমারায় এবার মনোনয়নে টান পড়তে পারে বর্তমান চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুর। এখানে এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অনিল কুমারসহ আরও কয়েকজন নতুন মুখ। অনিলের সঙ্গে স্থানীয় এমপির অত্যন্ত সুসম্পর্ক। আর সান্টুর সঙ্গে গেল পাঁচ বছর ধরেই চলছিল বিরোধ। দুর্গাপুরে আবারও মনোনয়ন চাইবেন নজরুল ইসলাম। তবে এবার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ও পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জাল হোসেনসহ আরও কয়েকজন নতুন মুখ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন। পুঠিয়ার আহসানুল হক মাসুদ এমপিতে মনোনয়ন না পেলেও তালিকার সামনের সারিতে ছিলেন। এবার তিনি উপজেলায় মনোনয়ন চাইবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক এবং শাহরিয়ার রহিম কনক দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। চারঘাটে এবারও উপজেলায় মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম। আর বাঘায় এবার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাঘার সাবেক মেয়র আক্কাস আলী ছাড়াও আরও দু’তিনজন এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন। অন্যরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, সিনিয়র সহ-সভাপতি আজিজুল আলম, বাঘা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাঘা পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, যে কোন নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি রাখতে হয়। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। উপজেলায় প্রার্থী হতে চান, এমন দলীয় অনেক নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অবশ্যই যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য আমরা দলের কাছে সুপারিশ করব। তবে এখনও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই বিএনপির। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব আসনেই শোচনীয় পরাজয়ের পর বিএনপি নেতারা চুপ রয়েছেন। মাঠেও নেই তাদের কোন কার্যক্রম।
×