ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীকে ৮৩ রানে হারাল সাকিবের দল

জাজাই ধামাকায় উড়ন্ত সূচনা ঢাকার

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

জাজাই ধামাকায় উড়ন্ত সূচনা ঢাকার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কি অসাধারণ ব্যাটিংটাই না করলেন আফগানিস্তান ওপেনার হযরতুল্লাহ জাজাই। তার ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত সূচনাও করেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। জাজাই ধামাকায় বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের প্রথমদিনে রাজশাহী কিংসকে ৮৩ রানে উড়িয়ে দিয়েছে সাকিব আল হাসানের ঢাকা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ৪১ বলে ৫ চার ও ৭ ছক্কায় জাজাইয়ের করা ৭৮ রানের ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮৯ রান করে ঢাকা। শুরুতে জাজাই দেখান ব্যাটিং ঝলক। শেষে ১৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় শুভাগত হোম চৌধুরীর অপরাজিত ৩৮ রানে বড় স্কোর গড়ে ঢাকা। এই রান অতিক্রম করতে গিয়ে ১৮.২ ওভারে ১০৬ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় রাজশাহী। রাজশাহী শুরুতেই বিপদে পড়ে যায়। দলের ২৯ রানেই ২ উইকেট হারানোর পর ৫৬ রানেই আরও ৩ উইকেট হারিয়ে বসে রাজশাহী। মোহাম্মদ হাফিজ (২৯) আউটের পরতো হারা যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এরপরও ১০৬ রান পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয় রাজশাহী। টি২০’র ব্যাটিং ধামাকা কি, তা যেন প্রথমদিনেই বুঝিয়ে দিলেন আফগানিস্তানের ওপেনার হযরতুল্লাহ জাজাই। দিনটি নিজের করে নেন। একের পর এক ছক্কা হাঁকাতে থাকেন ঢাকা ডায়নামাইটসের এ ব্যাটসম্যান। যে বোলারই তার সামনে এসেছেন, ব্যাটিং ঝড় তুলেছেন। খালি মাঠের বাইরে বল পাঠিয়েছেন। রাজশাহী কিংসের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ যখন নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে আসেন, জাজাইতো ৩টি ছক্কা হাঁকান। আলাউদ্দিন বাবুর প্রথম ওভারে এক ছক্কা ও টানা তিন চার মারেন জাজাই। ৬ ওভারেই ৬৮ রান করে ফেলে ঢাকা। জাজাই একাই ২১ বলে ৫ ছক্কা ও ৩ চারে ৪৯ রান করে ফেলেন। আরেকদিকে সুনীল নারাইন উইকেট আঁকড়ে খেলেন। এই সময়ে ১৫ বলে ১৩ রান করে নারাইন। সপ্তম ওভারেই ২২ বলে হাফ সেঞ্চুরি হতেই মোহাম্মদ হাফিজের বলে আকাশে তুলে মারেন জাজাই। অনেক ওপরে ওঠে বলটি। কিন্তু উইকেটরক্ষক জাকির হাসানের কাছেই থাকে। ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন জাকির। তখন রাজশাহীর সবার মাথায় যেন হাত ওঠে। জাজাই যে বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে থাকেন। সুযোগটি পেয়ে জাজাইয়ের ব্যাট আরও ঝলসে ওঠে। জাজাইকে আউট করতে ‘রিভিউ’ নিয়েও ব্যর্থ হয় রাজশাহী। ৯ ওভারেই ১০০ রান ঢাকার স্কোরবোর্ডে যোগ হয়ে যায়। জাজাইয়ের সঙ্গে এবার নারাইনও আতঙ্ক হয়ে ওঠেন। নারাইন ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। দলের ১০০ রান যখন হয়, জাজাই ৩০ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ৬২ ও নারাইন ২৪ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩২ রান করে ফেলেন। রাজশাহী বোলাররা যেন অসহায় হয়ে পড়েন। ১০ ওভারেই যখন ১১৩ রান হয়ে যায়, কোন উইকেটও পড়েনি, তখন মনে হয়েছে বিপিএলে দলীয় সর্বোচ্চ ২১৭ রানের রেকর্ডটিও ভেঙ্গে যাবে। যেটি গত আসরে রংপুরের বিপক্ষে ঢাকা করেছিল। কিন্তু ১১৬ রানে গিয়ে অবশেষে নারাইনকে (৩৮) আউট করতে সক্ষম হন পাকিস্তান স্পিনার হাফিজ। তাতে রানের গতি কিছুটা কমে। আর ৮ রান যোগ হতেই মিরাজ যখন ৪ চার ও ৭ ছক্কায় ৪১ বলে ৭৮ রান করা জাজাইকেও সাজঘরে ফেরান, রানের গতি একেবারেই কমে যায়। শুধু কি কমে, ১১৬ রান পর্যন্ত যেখানে কোন উইকেট পড়েনি। সেখান থেকে ১৩৬ রানেই নেই ৫ উইকেট। নারাইন, জাজাইয়ের পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, কাইরন পোলার্ড, নুরুল হাসান সোহানতো হতাশ করেন। ব্যাট হাতে নামেন, আর আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ১০ ওভারে যেখানে ১১৩ রান ছিল, সেখানে পরের ৫ ওভারে ২২ রান হয়। আবার ৫ উইকেটও হারায় ঢাকা। এরপর আবার বদলে যায় ঢাকার ব্যাটিং। এই ধস থামান আন্দ্রে রাসেল ও শুভাগত হোম চৌধুরী। ধস থামিয়ে ঢাকার স্কোরও ওপরে উঠান। শেষ পর্যন্ত রেকর্ড রান হয়নি। তবে ১০ রানে একবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া রাসেলের অপরাজিত ২১ ও ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং উপহার দেয়া শুভাগত’র ১৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় করা অপরাজিত ৩৮ রানে ২০ ওভারে ১৮৯ রান করে ফেলে ঢাকা। দুইজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ৫৩ রানের জুটি গড়েন। শেষ ৫ ওভারে ৫৪ রানও যোগ হয়। তাতেই এগিয়ে যায় ঢাকা। আরাফাত সানির এক ওভারে ১১ ও শেষ ওভারে আলাউদ্দিন বাবুর করা ওভারে ১ ছক্কা, ৩ চার ও ২ রান নিয়ে ২০ রান নেন। শুভাগত’র এ ঝড়ো ব্যাটিংয়েই ঢাকার স্কোর এত মজবুত হয়। তাতে জয়ের ভিতও মিলে। জয়ও পায় ঢাকা। লীগে তাদের সূচনাটাও হয় অসাধারণ। স্কোর ॥ ঢাকা ডায়নামাইটস ইনিংস- ১৮৯/৫; ২০ ওভার (জাজাই ৭৮, নারাইন ৩৮, পোলার্ড ৩, সাকিব ২, রাসেল ২১*, সোহান ১, শুভাগত ৩৮*; আরাফাত ২/২৩)। রাজশাহী কিংস ইনিংস- ১০৬/১০; ১৮.২ ওভার (হাফিজ ২৯, মুমিনুল ৮, সৌম্য ৪, ইভানস ৯, জাকির ২, জোঙ্কার ১, মিরাজ ১, বাবু ৭, কাইস ৯, আরাফাত ১৮, মুস্তাফিজ ১১*; রুবেল ৩/৭)। ফল ॥ ঢাকা ডায়নামাইটস ৮৩ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ হযরতুল্লাহ জাজাই (ঢাকা ডায়নামাইটস)।
×