ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যাম্পিয়ন রংপুরকে হারিয়ে চিটাগংয়ের শুভসূচনা

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

চ্যাম্পিয়ন রংপুরকে হারিয়ে চিটাগংয়ের শুভসূচনা

মিথুন আশরাফ ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার রবার্ট ফ্রাইলিঙ্ক কি অসাধারণ অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখালেন। বল হাতে তার গতির ঝড়ের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে শনিবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) ষষ্ঠ আসরের প্রথম ম্যাচেই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের হার হয়েছে। ফ্রাঙ্কলিঙ্কের (৪/১৪) অসাধারণ বোলিংয়ের পর অপরাজিত ১২ রানে সদ্য সংসদ সদস্য হওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজার দল ৩ উইকেটে হারে। চ্যাম্পিয়নদের যেখানে হার দিয়ে শুরু হয় এবারের আসর, সেখানে মুশফিকুর রহীমের চিটাগং শুভসূচনা করে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন চিটাগংয়ের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। সঠিক সিদ্ধান্তই নেন। রংপুরকে ১০০ রানও করতে দেয়নি চিটাগং। ৪ উইকেট নেয়া ফ্রাঙ্কলিঙ্কের সঙ্গে ২ উইকেট করে নেয়ার পেসার আবু জায়েদ রাহি ও স্পিনার নাঈম হাসানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৯৮ রানেই গুটিয়ে যায় মাশরাফির দল। অবশ্য ২০ ওভার পুরোই খেলে দলটি। রবি বোপারা (৪৪) যদি হাল না ধরতেন, সোহাগ গাজী (২১) রবির সঙ্গে তাল না মেলাতেন তাহলে আরও আগেই অলআউট হয়ে যেত রংপুর। এত কম রানে বেঁধে গেলে কী আর ম্যাচ জেতা যায়? অলৌকিক কিছু না ঘটলে তা সম্ভব নয়। তা ঘটতেও যাচ্ছিল। কিন্তু স্কোরবোর্ডে রান কম যোগ হওয়ায় জেতার আশা জাগিয়েও হারে রংপুর। ৭ উইকেট হারিয়ে ১৯.১ ওভারে ১০১ রান করে জয় তুলে নেয় চিটাগং। রংপুরের মতো চিটাগংও বিপদে পড়ে। ১৯ রানেই ক্যামেরুন ডেলপোর্ট ও ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত থাকায় নিষিদ্ধ হয়ে আবার পাঁচ বছর পর বিপিএলে ফেরা মোহাম্মদ আশরাফুলের উইকেট হারায় চিটাগং। আশরাফুল প্রথম ম্যাচে হতাশ করেন। ৩ রান করে শফিউলের বলে আউট হয়ে যান আশরাফুল। ডেলপোর্টকে আউট করে দেন মাশরাফি। এরপর আফগানিস্তান উইকেটরক্ষক, ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ ও মুশফিক মিলে দলকে ৫১ রানে নিয়ে যান। এমন সময় শাহজাদকে এলবিডাবলিউ করে দেন হাওয়েল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি শাহজাদ। প্রথমবারের মতো বিপিএলেও রিভিউ রাখা হয়। প্রথম রিভিউয়েই ব্যর্থ হন শাহজাদ। ৯ রান যোগ হতেই সিকান্দার রাজা রান আউটের শিকার হন। ৬০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে চিটাগংও। দলের যখন ৪৮ বলে ৩৭ রান দরকার, এমন মুহূর্তে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে আউট করে দেন ফরহাদ রেজা। খেলায় তখন কোন দল শেষ পর্যন্ত জিতবে? সেই প্রশ্ন উঠে যায়। মাশরাফি নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে দ্বিতীয় বলে যখন ১০ রান করা নাঈম হাসানকে বোল্ড করে দেন তখন চিটাগংয়ের ২৮ বলে জিততে লাগে ২২ রান। হাতে থাকে ৪ উইকেট। পেন্ডুলামের মতো যেন দুলতে থাকে ম্যাচ। কখনও রংপুরের, আবার কখনও চিটাগংয়ের জেতার সম্ভাবনা দাঁড়ায়। যখন দলের ৮৫ রান হয়, ৩১ বলে ২৫ রান করে নাজমুল ইসলাম অপুর বলে মুশফিকও আউট হন। তখন ২০ বলে জিততে ১৪ রান লাগে। চিটাগংয়ের যেন হারের সম্ভাবনা ভালভাবেই জেগে যায়। ৮৯ রানে ফ্রাইলিঙ্কের ক্যাচটি সোহাগ গাজী ধরতে পারলে হয়তো ম্যাচ জিততে পারতো রংপুরই। কিন্তু ফ্রাইলিঙ্ক (১২*) ও সানজামুল ইসলাম (৭*) মিলে ম্যাচ জেতান। মিরপুরের ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ উইকেটে প্রথম ম্যাচটিই হয় লো স্কোরিং। টি২০ আমেজ মিলেনি। ৫ বল বাকি থাকতে জিতে চিটাগং। রংপুরের ব্যাটিং যতটাই শক্তিশালী, বোলিংটা তত নয়। প্রথম ম্যাচেই দুর্বলতা ধরা পড়ে গেল। তাতে প্রশ্নও উঠলো, রংপুর কী শিরোপা ধরে রাখতে পারবে? প্রতিপক্ষ দলের বোলাররা যদি শক্ত হয়ে ওঠেন তাহলে ব্যাটিংটাও যে গেইল, ভিলিয়ার্স ছাড়া নড়বড়ে, তাওতো বোঝা গেল। ব্যাটিংয়ে রংপুরের দুর্দশা শুরু থেকেই দেখা যায়। ক্রিস গেইল দলে আছেন। রয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। এ্যালেক্স হেলস, বোপারা, বেনি হাওয়েল, রাইলি রুশোদের মতো ব্যাটসম্যানরাও দলে আছেন। কিন্তু গেইল শনিবার সকালে এসে পৌঁছালেও খেলতে পারেননি। ভিলিয়ার্সতো সিলেট পর্বের আগে খেলতে পারবেন না। ব্যাটিংয়ে ভরসা তাই হয়ে ওঠেন দেশী ক্রিকেটার মেহেদী মারুফ, মোহাম্মদ মিঠুন, ফরহাদ রেজার সঙ্গে হেলস, বোপারা, হাওয়েল, রুশোরাই। কিন্তু কেউই নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। শুরু থেকেই টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। ফ্রাইলিঙ্ক, রাহি, নাঈমদের বলগুলোই যেন বুঝতে পারেননি রংপুর ব্যাটসম্যানরা। দলের ৩ রানের মধ্যেই হেলস, মিঠুনকে সাজঘরে ফেরান ফ্রাইলিঙ্ক। দলের ১৪ রানের মধ্যে আবার রাহি ও ফ্রাইলিঙ্ক তোপে রুশো, মারুফ আউট হয়ে যান। ৯ রান যোগ হতেই হাওয়েলকে আউট করে দেন নাঈম। দেখতে দেখতে ৩৫ রানেই ৭ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ফরহাদ রেজা ও মাশরাফি ব্যাট হাতে নামেন, আর আউট হন। তবে বোপারা ঠিকই এগিয়ে যেতে থাকেন। ৭ উইকেট পড়ার পর বোপারা ও সোহাগ গাজী মিলে দলকে একটু ভরসা দেন। তবে এই দুইজনও খুব বেশিদূর যেতে পারেননি। অষ্টম উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়েন। দলের ৮৪ রান হতেই আবার ফ্রাইলিঙ্ক তোপে সোহাগ সাজঘরে ফেরেন। ১১ রান যোগ হতেই বোপারাকেও একই পথের পথিক বানান রাহি। দলের ৯৮ রানে গিয়ে নাজমুল ইসলাম অপু রান আউট হওয়ায় অলআউট হয়ে যায় রংপুর। রংপুরের স্কোরবোর্ড মজবুত না হওয়াতে জিতে চিটাগং। টি২০তে মারমুখী ব্যাটিং দেখার অপেক্ষায় থাকেন সবাই। অথচ প্রথম ম্যাচটিতে তার ছিটফোঁটাও মিলেনি। রংপুরের বোপারা তিন চার ও দুই ছক্কা হাঁকান। সোহাগ ৩টি চার মারেন। চিটাগংয়ের শাহজাদ চারটি ৪ হাঁকান। মুশফিক ২টি, নাঈম ও ম্যাচসেরা ফ্রাইলিঙ্ক ১টি করে চার মারেন। ডেলপোর্ট একটি ছক্কা হাঁকান। এই হচ্ছে প্রথম ম্যাচে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ের ছিটেফোঁটা আঁচ! স্কোর ॥ রংপুর রাইডার্স ইনিংস- ৯৮/১০; ২০ ওভার (মারুফ ১, হেলস ০, মিঠুন ০, রুশো ৭, বোপারা ৪৪, হাওয়েল ৮, রেজা ৩, মাশরাফি ২, সোহাগ ২১, নাজমুল ৪, শফিউল ১*; ফ্রাইলিঙ্ক ৪/১৪, রাহি ২/৩০, নাঈম ২/১০)। চিটাগং ভাইকিংস ইনিংস- ১০১/৭; ১৯.১ ওভার (শাহজাদ ২৭, ডেলপোর্ট ৮, আশরাফুল ৩, মুশফিক ২৫, সিকান্দার ৩, সৈকত ২, নাঈম ১০, ফ্রাইলিঙ্ক ১২*, সানজামুল ৭*; মাশরাফি ২/২৪, রেজা ১/১০, হাওয়েল ১/১৩)। ফল ॥ চিটাগং ভাইকিংস ৩ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ রবার্ট ফ্রাইলিঙ্ক (চিটাগং ভাইকিংস)।
×