ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চুরির অপবাদে যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ॥ গ্রেফতার ২

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

চুরির অপবাদে যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ॥ গ্রেফতার ২

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ, ৫ জানুয়ারি ॥ ঝিনাইদহে টেলিভিশন চুরির অপবাদ দিয়ে রানা (২৮) নামে এক যুবককে উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর হরিণাকু-ু উপজেলার শ্রীপুর বাজারে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি বেশ কিছুদিন চাপা থাকলেও এ ঘটনার ভিডিও শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ভাইরাল হয়) ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন সন্ধ্যারাতে রানার বাবা ওমর আলী বাদী হয়ে হরিণাকু-ু থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থলে যান। তিনি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। এরপরই হরিণাকু-ু থানা পুলিশ মধ্যরাতে মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহীনুর রহমান তুহিন ও বাবলু কাজীকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শ্রীপুর গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে হরিণাকু-ু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয় খোলা হয়। ওই কার্যালয় থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর একটি টেলিভিশন চুরি হয়ে যায়। পরদিন সকালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর রহমান তুহিন গ্রামের কৃষক ওমর আলীর ছেলে রানাকে চোর সন্দেহে মাঠ থেকে ধরে আনে। পরে শ্রীপুর বাজারের একটি কাঁঠাল গাছে পা উপরের দিকে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করেন। পরে তাকে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ হরিণাকু-ু থানায় এনে তাকে নিয়ে টিভি উদ্ধারে গেলেও উদ্ধার করতে পারে না। পরে পুলিশ রানাকে তার পরিবারের জিম্মায় ফেরত দেয়। রানা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) ওই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী। নির্যাতিত রানার বাবা ওমর আলী জানান, আমার ছেলে নির্দোষ। সে টেলিভিশন চুরির সঙ্গে জড়িত নয়। সন্দেহ করে তাকে মাঠ থেকে ধরে এনে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। রানার মা আনোয়ারা বেগম জানান, আমার ছেলে মাঠে কাজ করছিল। সেখান থেকে তুহিন ধরে নিয়ে আসে। তারা তার পা উপরের দিকে দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। খবর পেয়ে আমি সেখানে যেয়ে দেখি কেউ দড়ি এগিয়ে দিচ্ছে, কেউ মারপিট করছে। আমি তুহিনের হাত-পা ধরি, মারতে নিষেধ করি। তারপরও মারতে থাকে। আমার ছেলে বারবার বলতে থাকে, মা আমি চুরি করিনি। তাও তারা মারপিট থামায় না। এক পর্যায়ে ছেলের নাক-মুখ দিয়ে গেজলা বের হতে থাকে। রানার চাচি (বড়মা) মনু বেগম বলেন, চোর হলেও এভাবে মারা উচিত নয়। তাকে সাত বার গাছে ঝুলালো আর সাত বার নামাল। আমি ঠেকাতে গেলাম, আমাকে ওরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। ছেলে যতবার বলছে টিভি চুরি করিনি, ততো মারছে। এমন নির্যাতন দেখা যায় না। তাহেরহুদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনজুর আলম বলেন, আমি ঘটনার দিন বাড়ি ছিলাম না। পরে শুনলাম এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। একজন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে চোরের অপবাদ দিয়ে উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে মারপিট করা হয়েছে, যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে।
×