ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যমেলাকে আকর্ষণীয় করতে একগুচ্ছ নতুন উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

বাণিজ্যমেলাকে আকর্ষণীয় করতে একগুচ্ছ নতুন উদ্যোগ

কাওসার রহমান ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০১৯। এবারের মেলাকে আকর্ষণীয় করতে একগুচ্ছ নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মূলত দেশীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি বিদেশীদের আকৃষ্ট করে নতুন বাজার তৈরি করাই মেলার অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় এবারও মেলার গেট সাজানো হবে সরকারের উন্নয়ন চিত্র দিয়ে। এবার মূলত মেট্রোরেলের আদলে নির্মিত হচ্ছে মেলার প্রধান ফটক। সঙ্গে থাকবে লাল সবুজের মেট্রোরেল কোচ। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্রও তুলে ধরা হবে। অনেক বেশি বিদেশী ক্রেতা মেলায় যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। এরই অংশ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠিও দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া মেলায় বিদেশী ক্রেতা টানতে এবং করণীয় ঠিক করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনা চাওয়া হচ্ছে। বিদেশী মিডিয়ায় বিজ্ঞাপণের পাশাপাশি ডিজিটাল প্লাটফর্মে ক্যাম্পেনও চালানো হবে। মেলা প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বাংলাদেশে হাজারও মানসম্মত পণ্য তৈরি হচ্ছে। কাপড়, চামড়াজাত পণ্য থেকে ফার্নিচার পর্যন্ত। এসব পণ্যের প্রচার করব। বাণিজ্য মেলায় বেশি বেশি বিদেশী ক্রেতা অংশ নেবেন এটাই প্রত্যাশা। এর জন্য যা কিছু করণীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সব করব। সূত্র জানায়, প্রতিবারের মতো এবারের মেলায় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেলায় থাকবে ফায়ার ইউনিটি ও মেডিক্যাল টিম। বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা থাকবে। মেলার ঠিক মাঝখানে বসার জন্য কংক্রিটের আসন তৈরি করা হবে। নানা স্থানে থাকবে সিরামিকের বেঞ্চ। মেলায় ধুলা বড় সমস্যা। ধুলা কমাতে পানি ছিটানো হবে। যদিও মেলাটি শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এবার ৯ জানুয়ারি মেলাটির উদ্বোধন করা হচ্ছে। এদিকে, শেষ সময়ে এসে মাত্র শুরু হয়েছে মেলার দুই প্রান্তে সুন্দরবন ইকোপার্ক নির্মাণ কাজ। মেলায় এবার মা ও শিশু কেন্দ্র, শিশুপার্ক, ই-পার্ক, এটিএম বুথ থাকবে। এবারের মেলায় স্থান পাবে সংরক্ষিত নারী স্টল ২০টি, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ৬০টি, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ৩৮টি, সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৮, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়িন ২৯টি, প্রিমিয়ার স্টল ৬৭টি, রেস্টুরেন্ট তিনটি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন নয়টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ছয়টি ও বিদেশী প্যাভিলিয়ন ২৬টি। আর এসবের কাজ অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। শুরু হয়েছে ২০১টি সাধারণ স্টল ও ২২টি ফুড স্টলের কাজ। এখানে রেডিমেড গার্মেন্টস, হোমটেক্স, ফেব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্পজাত, পাটজাত, গৃহস্থালি ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক, পলিমার পণ্য, কসমেটিক্স হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি এবং নির্মাণসামগ্রী ও ফার্নিচার এসব স্টল থাকবে। দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়ন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫০০ প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে বাণিজ্যমেলায়। এবার নতুন করে চার থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। তবে আমাদের দেশীয় প্যাভিলিয়ন মাত্র ২৬টি। তাই এবার একক দেশগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে। দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, চীন, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ভুটান, নেপাল, মরিশাস, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, রাশিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, সোয়াজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, হংকংসহ বিভিন্ন দেশ। এক মাসব্যাসী এ আন্তর্জাতিক মেলা চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সময় ঘনিয়ে এসেছে বাণিজ্য মেলার, তাই চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দিন রাত কাজ করে চেষ্টা চলছে স্টল বানানোর। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নতুনত্ব রাখার চেষ্টা চলছে স্টল আর প্যাভিলিয়ন নির্মাণে। এবারের মেলায় নতুন নতুন পণ্য আর সেবার পাশাপাশি বিশেষ ছাড় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অংশগ্রহণকারীরা। এছাড়া ক্রেতা বা দর্শনার্থীদের জন্য বিশ্রামাগারের ব্যবস্থাও থাকবে। মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, এবারের মেলা হবে আরও গোছানো। মেলায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন থাকবে। দুর্ঘটনা এড়াতে থাকবে ফায়ার ব্রিগেডের ব্যবস্থা। আর চারপাশে ঘিরে থাকবে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা। এবার ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করবেন কে ? রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- এখনও তা চূড়ান্ত করতে পারেনি আয়োজক সংস্থা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রেওয়াজ অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি দেশের প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধান এই মেলার উদ্বোধন করেন। তবে এবার ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীসহ এই মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। ফলে নির্বাচনের একদিন পর এই আয়োজনের উদ্বোধন করা অনেকটাই অসম্ভব হবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য। তাই ইপিবির বোর্ড সভায় উদ্বোধনের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে এই তারিখ পিছিয়ে ৯ জানুয়ারি ঠিক করা হলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তা এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে সোমবার মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ গ্রহণ করবেন। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এবারের বাণিজ্য মেলাও উদ্বোধন করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, এই মেলা প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন ধরে নিয়েই আয়োজন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে তিনি সময় দিতে না পারলে হয়ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি উদ্বোধন করবেন, সেভাইে এগুচ্ছে ইপিবি। ইতোমধ্যেই চিঠিপত্র দেয়া শুরু হয়েছে। কারণ এই মেলায় দেশী বিদেশী ব্যবসায়ী ছাড়াও অন্যান্য মেহমানরাও উপস্থিত থাকবেন। সে কারণেই মাসব্যাপী এই মেলার তারিখ আর বেশি পেছনো ঠিক হবে না। এবার এই বাণিজ্য মেলা ৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে তা শেষ হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। অথচ ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই দেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বাংলা একাডেমির বই মেলা, যা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মেলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খুব দ্রুত এগুচ্ছে। কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। স্টল নির্মাণের কাজ অনেকটাই শেষ হয়েছে। এখন চলছে সাজগোছের প্রস্তুতি। স্টলে চলছে রং মারার কাজ, আর ধুলা থেকে রেহাই পেতে মাঠে চলছে পানি ঢালার কাজ। প্রতিবছরের মতো এ বছরও রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের গণপূর্ত বিভাগের ৩১ দশমিক ৫৩ একর জমির খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের বাণিজ্য মেলা। আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, অতীতের মতো এবারের মেলায়ও তৈরি পোশাক, হোমটেক্সটাইল, ফেব্রিক্স পণ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি ও উপহার সামগ্রী, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিকের তৈজসপত্র, প্লাস্টিক পণ্য, কসমেটিক্স হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, জুয়েলারি, নির্মাণ সামগ্রী ও আসবাবপত্রের স্টল থাকছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলার গেট। মেলার আয়োজক হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
×