ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ দুই নারীর মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ দুই নারীর মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ৫ জানুয়ারি ॥ রংপুরে শীতের তা-ব থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে গত বছরের মতো এবারও মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৩ দিনে ২ নারীর মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার রাজিয়া বেগম (২৭) এবং আদিতমারীর মোমেনা বেগম (৩২)। হাসপাতালে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ১২ জন। এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গুরুতর দগ্ধ একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রংপুর অঞ্চলে গত এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৪ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পরেন তারা। বিশেষ করে আগুন পোহানোর সময় অসাবধানতাবশত শাড়ির আঁচলে কিংবা কাপড়ে আগুন ধরে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট চিকিৎসাধীন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী এলাকার অগ্নিদগ্ধ লাবণ্য বেগম জানান, তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচতে ধানের খড় দিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে পরনের কাপড়ের পেছনে আগুন লেগে যায়। এতে করে তার কোমরের নিচ থেকে পা পর্যন্ত ঝলসে যায়। প্রায় একই ধরনের কথা জানালেন রংপুরের মমিনপুর গ্রামের এলাকার জরিনা বেগম। হাসপাতালের বার্ন ইউনিট আগুনে দগ্ধ রোগী ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মারুফুল ইসলাম জানান, বার্ন ইউনিটে বেড রয়েছে ২টি। কিন্তু বর্তমানে এখানে ৫০ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন রোগী আসছে। এদের অনেককে অন্য ওয়ার্ডে রেফার্ড করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, গত বছর শীতের হাত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে ১৬ জন মারা গেছে। এছাড়া দগ্ধ হয়েছিল কমপক্ষে ৫০ জন। এই আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেতে নারী ও শিশুদের সচেতনতা ও সাবধনতা প্রয়োজন। দিনমজুরের মৃত্যু ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুড়িগ্রামে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে মানুষ ও গবাদী পশু। অসুস্থ হয়ে পড়ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। অত্যধিক ঠাণ্ঠার কারণে কৃষক ও দিনমজুররা মাঠে নামতে না পাড়ায় ব্যাহত হচ্ছে বোরো রোপণ। গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগ বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের। প্রচ- ঠাণ্ঠার কারণে এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। মৃত অছর আলীর বাড়ি সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে। অছর আলীর ছেলে আব্দুল গফুর জানান, শুক্রবার রাতে তিনি সুস্থ অবস্থায় ঘুমালেও সকালে তাকে মৃত পাওয়া যায়। প্রতিবেশীরা জানান, হতদরিদ্র অছর আলীর বাড়ি ধরলা নদীর তীরে। একটি ভাঙ্গা ছাপড়া ঘরে থাকলেও প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাব আর প্রচ- হিমেল বাতাসে কাবু হয়ে রাতে মারা যান তিনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য জানান, সরকারীভাবে এখনও এই এলাকায় কম্বল বিতরণ শুরু হয়নি। কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মাগুরায় সাধারণ মানুষ বিপাকে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মাগুরায় শীত পড়ায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। শীতে ঠাণ্ঠাজনিত কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে জ¦র, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে । ফলে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। মাগুরা সদর হাসপাতালের ১০ বেডের শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিনই ১০০ শিশু ভর্তি থাকছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ শিশুকে নিয়ে তাদের অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন চিকিৎসা নিতে। এছাড়া অনেকে ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্ত শিশুদের বয়স ৩ মাস থেকে ৫ বছরের মধ্যে ।
×