ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন আকিমুন রহমান

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন আকিমুন রহমান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব কিছুতেই সাধনার কোন বিকল্প নেই। লেখালেখির ক্ষেত্রেও বিষয়টা একইরকম। লিখে যেতে হয় অবিরাম। সেই সাধনার পথ ধরে আজ পেলাম অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার। আরও অনেকটা পথ আমি যেতে চাই। এই পুরস্কার আমার মধ্যে সৃষ্টি করল সেই চাঞ্চল্য। আর ভাল লেখক হতে হলে রাজনীতির উত্থান-পতনকে পড়ার সমান্তরালে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার আলোকে পড়তে হবে পুরুষের মনস্তত্ত্বকে। কারণ আমি মনে করি অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা নারীর চেয়েও বেশি। পুরুষতন্ত্র সব সময় ধাবিত হয় বাকাচোরা ও জটিল পথে। এভাবে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২৫ প্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করলেন নারীর বঞ্চনা ও প্রতিবন্ধকতার কথা বলা কথাসাহিত্যিক ড. আকিমুন রহমান। প্রবন্ধ, গবেষণা ও কথাসাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি তাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। শনিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই কথাশিল্পী, গবেষক ও শিক্ষকের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয় নারী সাহিত্যিকদের মূল্যায়নে ১৪০১ সালে প্রবর্তিত পঁচিশতম অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারটি। পাক্ষিক অনন্যা আয়োজিত এ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। সভাপতিত্ব করেন পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। আয়োজনের শুরুতেই পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ড. আকিমুন রহমানের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর লেখককে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি পুরস্কারের স্মারক, অর্থমূল্যে চেক ও মানপত্র তুলে দেন অতিথিরা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদ চৌধুরী বলেন, আকিমুন রহমান শুধু নারী নয়, সমাজ, দেশ ও মানুষ সম্পর্কে প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিস্তৃতভাবে লিখেছেন। তিনি নিছক বিনোদনের জন্য লেখেন না, চিন্তা ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে লেখেন। তার লেখাটাও হয় খুব নির্মোহ। তিনি সুন্দর পৃথিবী নির্মাণের জন্য লিখে চলেছেন। লেখনীর মাধ্যমে নারীর প্রতি পুরুষের ধারণা বদলে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার এই পুরস্কাপ্রাপ্তি মানে থেমে যাওয়া নয়, বরং নতুন উদ্যোমে লেখালেখি শুরু হওয়া। ভবিষ্যতে আরও ভাল লিখবেনÑ তার এই পুরস্কারপ্রাপ্তি সেই বার্তাই দেয়। একসময় আকিমুন রহমানের শিক্ষক ছিলেন বেগম আকতার কামাল। সেই সূত্র টেনে আকতার কামাল বলেন, আমার ছাত্রী বলে বলছি না, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারটি আকিমুনের প্রাপ্য ছিল। নারীর প্রতি পুরুষের যে প্রচলিত ধারণাÑলেখনীর মাধ্যমে তিনি সেই সমাজকে ভাঙতে চান। তিনি মনের খোরাক মেটাতে নয়, দায়িত্ব নিয়ে লেখেন। সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা থেকে লেখেন। একইসঙ্গে তার গদ্যের ভাষা ঝরঝরে ও প্রাঞ্জল। তার লেখার মাঝে উচ্ছ্বাস নেই, আছে কোমলতা। তিনি আরও বলেন, গত ২৫ বছর ধরে নারী সাহিত্যিকদের সামনে তুলে আনার কাজটি নিরবচ্ছিন্নভাবে করে যাচ্ছে পাক্ষিক অনন্যা। তাসমিমা হোসেন বলেন, এই পুরস্কারের জন্য বিচারকদের কাছ থেকে প্রথম যখন আকিমুন রহমানের নামটি এলো তখন তার লেখা ‘পুরুষের পৃথিবীতে একমাত্র মেয়ে’ বইটি পড়লাম। বইটি পড়ার পর মনে হলো, এই লেখিকা আমার আমার মনের কথাগুলোই বলছে। নারীকে কে কবে অধিকার দিয়েছে? নারীর অধিকার ছিনিয়ে আনতে হয়Ñএ বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে এসেছে আকিমুন রহমানের লেখায়। ড. আকিমুন রহমানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘নিরন্তর পুরুষ ভাবনা’, ‘বিবি থেকে বেগম’, ‘আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ’, ‘সোনার খড়কুটো’, ‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’, ‘রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি’, ‘এইসব নিভৃত কুহক’, ‘জীবনের পুরোনো বৃত্তান্ত’, ‘পৌরাণিক পুরুষ’, ‘বাংলা সাহিত্যে বাস্তবতার দলিল (১৩১৮-১৩৫০ বঙ্গাব্দ)’, ‘সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন’:আদিপর্ব’, ‘যখন ঘাসেরা আমার চেয়ে বড়’, ‘অচীন আলোকুমার’ ও ‘নগণ্য মানবী’ ইত্যাদি। ১৪০১ বঙ্গাঙ্গ (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছে। প্রতি বছর একজন নারী-সাহিত্যিককে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী লেখকরা হলেন সন্জীদা খাতুন, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম (মরণোত্তর), সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, নীলিমা ইব্রাহিম, দিলারা হাশেম, রাবেয়া খাতুন, নূরজাহান বেগম, রাজিয়া খান, রুবী রহমান, পূরবী বসু, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মকবুলা মনজুর, ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ, সালেহা চৌধুরী, নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, কাজী রোজী, নিয়াজ জামান, জাহানারা নওশিন, সোনিয়া নিশাত আমিন, বেগম আকতার কামাল ও বেগম মুশতারী শফি।
×