ফিরোজ মান্না ॥ চালু হচ্ছে আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) সেবা। ইন্টারনেট প্রটোকল নম্বর ব্যবহার করে গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা, আইপি টেলিফোন, আইপি টিভি, ভিডিও অন ডিমান্ডসহ (ভিওডি) বিভিন্ন ধরনের সেবা পাবেন। আইএসপিগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সেবাটি চালু করার। গত ১৩ ডিসেম্বর আইপি ভিত্তিক সেবার বিষয়ে বিটিআরসি নির্দেশ জারি করেছেÑকোন লাইসেন্স ছাড়াই সেবাটি চালু করতে পারবে বৈধ আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রটোকল)। কারণ, তারা আগেই ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য বিটিআরসির কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছে। এ জন্য তাদের আর কোন লাইসেন্স লাগবে না। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, এতদিন এই সেবাদানে আইএসপির ওপর বিধিনিষেধ ছিল। সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ২২১তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে আইএসপি স্ট্রিমিং সেবা, আইপি, টিভি ও ভিডিও অন ডিমান্ড সেবা দিতে পারবে। ফলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্ট্রিমিং সেবা, আইপি, টিভি ও ভিডিও অন ডিমান্ড সেবা দেয়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। এতদিন সেবাদানে প্রতিটি খাতের জন্য আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হতো। নতুন নিয়মের ফলে তা আর থাকল না। সেবাটি পুরোপুরি চালু হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বাড়বে। গ্রাহককে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব হবে। যদিও বিটিআরসির রেগুলেশন ছিল, যে কোন ধরনের টেলিকম সেবা দিতে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। নতুন নিয়মে আইএসপিদের লাইসেন্স নিতে হবে না।
সূত্র জানিয়েছে, আইএসপি ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স নিয়েছে। এর পরও প্রতিষ্ঠানগুলো আইপি টেলিফোনিক সেবা দিতে চাইলে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হতো। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আইপি, টিভি সেবা দিতে চায়, সেক্ষেত্রেও নতুন করে লাইসেন্স নিতে হতো। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সংগঠন আইএসপিএবি এই ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে আইপি, টিভি সেবা দিতে যেন লাইসেন্স না নিতে হয়, সেজন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে বহুদিন আগেই আবেদন করেছিল। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন পর তারা এই সেবা দেয়ার অনুমোদন পেয়েছে।
এ বিষয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা আইএসপিএবির এক কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসির এই নির্দেশের ফলে এখন ট্রিপল প্লে (এক কেবলে তিন সেবা) চালু করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে, কেবল টিভি (ডিশ সংযোগ) অপারেটরের দৌরাত্ম্য কমবে, টিভির ছবির মান ভাল হবে, বিশেষ কোন কাজে ব্যস্ত থাকলে ওই সময় সম্প্রচারিত পছন্দের অনুষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড করে রাখার ব্যবস্থাও চালু থাকবে। এই সেবা চালু হলে টিভিতে এইচডি (হাই ডেফিনেশন) ও ফোরকে রেজুলেশন পাওয়া যাবে। সম্প্রতি সেবাটি চালু করার অনুমোদন পাওয়া গেছে। এই সেবা পুরোপুরি চালু করতে দুই মাসের মতো সময় লাগতে পারে। সেবা চালু হলে মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে। বর্তমানে দেশে সাড়ে ৯ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। সেবাটি চালু হলে এই হার অনেক বেড়ে যাবে। ট্রিপল প্লে চালু করা গেলে গ্রাহক সাশ্রয়ী দামে ইন্টারনেট সেবা পাবেন।
এদিকে, এই সেবা (স্ট্রিমিং সেবা, আইপি, টিভি ও ভিডিও অন ডিমান্ড) চালু হলে মোবাইল ফোনেও আইপি ফোনের সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে। এতদিন মোবাইলে আইপি ফোন ব্যবহার করা যেত না। নতুন এই সেবা চালু করা হলে একটি এ্যাপের মাধ্যমে (স্মার্টফোনে আইপি এ্যাপ ব্যবহার করে) মোবাইলেও আইপি ফোন ব্যবহার করা যাবে। এরই মধ্যে চারটি আইএসপিকে বিটিআরসি আইপি সেবা চালুর অনুমতি দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠান যে কোন সময় আইপি সেবা চালু করতে প্রস্তুতি নিয়েছে। উল্লেখ্য, বিটিআরসি ২০১৬ সালে আইপি সেবার নির্দেশটি বাতিল করেছিল। দীর্ঘ সময় পর বিটিআরসি সেবাটি চালু করার জন্য আইএসপিকে অনুমোদন দিয়েছে। একটা কেবলের মাধ্যমে ভয়েস (ল্যান্ডফোন), ডাটা (ইন্টারনেট) ও ভিডিও (আইপি টিভি) সেবা পাওয়া যাবে। এই সেবা দিতে আলাদা কোন ফি দিতে হবে না গ্রাহককে। একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বিনিময়ে সেবাটি পাওয়া যাবে।
