ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে নতুন সরকারকে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে নতুন সরকারকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি নতুন সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, দুর্নীতি সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে না পারলে সুশাসন নিশ্চিত করা কঠিন হবে। তারা বলেন, ’৭৫-এর মতো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলমান। যে কোন সময় ষড়যন্ত্রকারীরা আঘাত হানতে পারে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনার মধ্য দিয়ে যারা এদেশে কলুষিত রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেছিল এখন চ্যালেঞ্জ হলো তাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করা। ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘সম্প্রীতির নির্বাচন, নতুন সরকার ও আগামী দিনের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিশিষ্টজনরা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপশক্তিকে রুখে দিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ১৯৭০ সালের মতো জাগরণ তৈরি হয়েছিল। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সামরিক বিশেষজ্ঞ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সূচনা বক্তব্যে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা ঘুরেছি। আমরা চেয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, মানবিক দর্শনের মানুষ এবারের নির্বাচনে জঙ্গীবাদী- সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দেয়। আমরা এবারের নির্বাচনে তা পেয়েছি। এতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিজয় হয়েছে। বিশ^বাসী জেনেছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল। সচেতন তরুণ সমাজ। তারা জেনে শুনে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। প্রমাণ হয়েছে এখানে সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদী গোষ্ঠীর কোন ঠাঁই নেই। আলোচনায় অংশ নিয়ে মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব) বলেন, এবারের নির্বাচনে সব চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র পরাজিত করে এক এসিড টেস্টে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে, তার বিরোধী রাজনীতি করে, তাদের সেই রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। এবারের নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’এর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি যে প্রার্থী তালিকা দিয়েছিল, তা আইএসআই মনোনীত ও লন্ডন থেকে অনুমোদিত। ২৮৮টি আসনে বিশাল জয়ে ‘আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই’ জানিয়ে তিনি সতর্ক করে দেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পঁচাত্তরের কথা ভুলে গেলে চলবে না। দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে। পঁচাত্তরের পর এরা বাংলাদেশে কলুষিত রাজনীতি শুরু করেছিল। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো, এদের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা।’ সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, “দুর্নীতি হয়ত পুরোপুরিভাবে সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হবে না। তবে এটাকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। না হলে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি নতুন সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আওয়ামী লীগ ঘোষিত ইশতেহার সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে নতুন সরকারকে আহ্বান জানিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, ‘আমি প্রথম কথায় বলব, ইশতেহারের প্রতিটি ধারা বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং টিম, চেক আউট লিস্ট থাকতে হবে। ৫০ দিনের কাজ, ১০০ দিনের কাজ সব ঠিক করে নিতে হবে’। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ, যুবলীগের নাম ধরেই বলব এদের ছেড়ে দিলে চলবে না। এদের কন্ট্রোল করা প্রয়োজন। আমি চাই, তারা মানুষ হোক। তারা অন্তত বিবেকবান মানুষ হোক।’ একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের পাশাপাশি নারী, শিশু ও যুব নীতি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান অধ্যাপক মাহফুজা খানম। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, নারী নেত্রী রোকেয়া কবির, উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠক এ্যারোমা দত্ত, অর্থনীতিবিদ আর এম দেবনাথ, অধ্যাপক ড. অসীম কুমার সরকার, অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, মতিউর রহমান লালটু, অধ্যাপক অরুণ গোস্বামী, ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, সাংবাদিক শরীফ শাহাবুদ্দীন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাংবাদিক রহমান মুস্তাফিজ প্রমুখ।
×