ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটকেন্দ্রে না যেতে চিরকুটের কথা প্রকাশ করায় চোখ ঝলসে দিল সন্ত্রাসীরা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

ভোটকেন্দ্রে না যেতে চিরকুটের কথা প্রকাশ করায় চোখ ঝলসে দিল সন্ত্রাসীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা, ৫ জানুয়ারি ॥ নির্বাচনের আগের দিন চিরকুট দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছিল সন্ত্রাসীরা। কিন্তু চিরকুটের কথা গোপন না রেখে আশপাশের লোকজনকে জানিয়ে দেন প্রতিমা রানী। আর এ কারণে দাহ্য পদার্থ দিয়ে ঝলসে দেয়া হয় তার চোখ। নির্বাচনের আগের দিন রাতে কেন্দুয়া উপজেলার আইথর গ্রামে ঘটে এ সহিংসতার ঘটনা। অতিদরিদ্র পরিবারের সদস্য প্রতিমা রানী এখন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ হতে তার আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। এদিকে গ্রাম্য মাতুব্বররা ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আস্তে আস্তে তা জানাজানি হয়ে যায়। জানা গেছে, নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যায় নারায়ণ চন্দ্র সূত্রধরের স্ত্রী প্রতিমা রানী সূত্রধর তুলসিতলা থেকে ঘরে ফিরে একটি চিরকুট দেখতে পান। সেটি হাতে নিয়ে দেখেনÑ তাতে লেখা ‘আপনার শ্বশুর সাধন আমাদের লোক ছিলেন। তাই আমাদের কথায় চলতে হবে। যদি ভাল চান তবে কেউই আগামীকাল ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।’ এমন লেখা দেখার পর প্রতিমা রানী ও বাড়ির লোকজন বিষয়টি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সেলিমসহ স্থানীয়দের জানান। এতে ক্ষিপ্ত হন সন্ত্রাসীরা। ঘণ্টা তিনেক পর (রাত ৯টার দিকে) প্রতিমা রানী টয়লেটে গেলে হঠাৎ সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে তার চোখ-মুখে কাপড় দিয়ে ঘষে দাহ্য পদার্থ লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। গোঙানির শব্দ শুনে বাড়ির লোকেরা প্রতিমা রানীকে উদ্ধার করে প্রথমে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুক্রবার কেন্দুয়া উপজেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কল্যাণী হাসান, মানবাধিকার নারী সমাজের সভাপতি মেহেরুন্নেছা নেলী, রেহেনা বেগম ও রিপন আক্তারসহ কয়েকজন নারী অধিকার কর্মী আহত প্রতিমা রানীকে দেখতে যান। এ সময় তিনি ঘটনাটি খুলে বলেন। কল্যাণী হাসান জানান, প্রতিমা রানীর চোখ মুখ এখনও ফোলা। আশপাশে আঠাল পদার্থ লাগানোর চিহ্ন রয়েছে। চোখে ব্যথাও হচ্ছে। সুস্থ হতে কয়েকদিন সময় লাগবে। কল্যাণী হাসান বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেন। এদিকে ঘটনার পর পরই স্থানীয় কিছু মাতুব্বর ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা শুরু করে। কেন্দুয়া থানা থেকে পুলিশ গেলে তারা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করবেন বলে জানিয়ে দেন। এ কারণে প্রতিমা রানীর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় কোন অভিযোগ করেননি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কেন্দুয়া থানার ওসি ইমারত হোসেন গাজী জনকণ্ঠকে জানান, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে আমরা থানায় একটি জিডি করেছি। এছাড়া ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি।’ স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সেলিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘চিরকুটটি আমি নিজে পড়েছি। ওই পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছিল। আমি তাদের বাড়ির দিকে যেতে না যেতেই পরে ঘটনাটি ঘটে। পরে প্রতিমা রানীকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং কিছু টাকা দিয়ে সহযোগিতা করি।’ ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।
×