ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট কিনতে টাকা ছড়ানোর স্বীকারোক্তি অপুর

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

ভোট কিনতে টাকা ছড়ানোর স্বীকারোক্তি অপুর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার কোটি কোটি টাকা খরচ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের ভোট কেনা এবং নাশকতা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের সাবেক এপিএস মিয়া নুরুদ্দীন আহম্মেদ অপুকে কড়া নিরাপত্তায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ (ডামুড্যা- ভেদরগঞ্জ-গোসাইরহাট) আসনে বিএনপির এই প্রার্থীকে চিকিৎসা শেষে র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‌্যাব তাকে এ সংক্রান্ত মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত মানিলন্ডারিং মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের কাছে হস্তান্তর করবে। এ মামলার অপর তিন আসামিকে ইতোমধ্যেই পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিদায়ী বছরের ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে র‌্যাব-৩ মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় অভিযান চালিয়ে ইউনাইটেড কর্পোরেশন নামের একটি আমদানি-রফতানি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হায়দার (২৪), তার সঙ্গে থাকা গুলশানের আমেনা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) জয়নাল আবেদিন (৪৫) ও আমেনা এন্টারপ্রাইজের ঝালকাঠি অফিসের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেনকে (৩৮) গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে নগদ ৮ কোটি টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০ কোটি টাকার চেক উদ্ধার হয়। টাকার সঙ্গে লন্ডনে পলাতক একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন, হাওয়া ভবনের কর্ণধার লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ও তারই এপিএস শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী নুরুদ্দীন অপুর নির্বাচনী লিফলেট উদ্ধার হয়। এছাড়া টাকার সঙ্গে ঢাকার একটি আসনের সব ভোটারের নাম-ঠিকানা সম্বলিত একটি তালিকাও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিঝিল থানার এসআই ফারুক খান তিন আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে হাজির করলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার র‌্যাব-১ এর একটি দল গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুদ্দীন অপুকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জনকণ্ঠকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুদ্দীন অপু ভোট কেনা ও নির্বাচনে নাশকতা চালানোর জন্য টাকা ছড়ানোর কথা স্বীকার করেছেন। চিকিৎসা শেষে তাকে হেফাজতে নেয়া হবে। এরপর তাকে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হবে। শনিবার মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন মোল্যা জনকণ্ঠকে জানান, শুক্রবার মামলাটির তদন্তভার সিআইডির হাতে চলে গেছে। মামলার যাবতীয় কাগজপত্র সিআইডিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ও সিআইডির মুখপাত্র মোল্যা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, মামলাটির তদন্তভার তারা পেয়েছেন। ইতোমধ্যেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতারকৃত নুরুদ্দীন অপু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে মুক্ত করে দেয়ার পর তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রসঙ্গত, নির্বাচনী সহিংসতার সময় আহত হয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে নুরুদ্দীন অপু হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন আছেন। মতিঝিল থেকে তিন জনকে গ্রেফতারের পর পরই র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মতিঝিল থেকে উদ্ধারকৃত টাকাগুলো নুরুদ্দীন অপুর পক্ষে ভোট কেনার জন্য ও সারাদেশে নাশকতা চালিয়ে নির্বাচন বানচাল করার জন্য দুবাই থেকে অবৈধভাবে হুন্ডি এবং ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। গত দুই মাসে মতিঝিলের অফিস থেকে চারশ কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা চালানোর জন্য ছড়ানো হয়েছে। যেসব এলাকায় টাকা পাঠানো হয়েছে, সেসব এলাকায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস ঘটনা ঘটেছে।
×