ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারা আরও বেগবান হবে

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারা আরও বেগবান হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সংসদনেতা নির্বাচিত হওয়ায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদের স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় তাকেও অভিনন্দন জানান জাপা চেয়ারম্যান। এদিকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বিরোধী দলের চীফ হুইপ করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে-পরে নানা নাটকীয়তার মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেস উইং থেকে এরশাদের স্বাক্ষরে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পদাধিকার বলে’ তিনিই হবেন জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি পার্টির সভাপতি ও প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় ছোট ভাই পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের উপনেতার দায়িত্ব দিয়েছেন এরশাদ। তবে এরশাদের স্ত্রী দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ভূমিকা এবার কি হবে- সে বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু জানানো হয়নি। যদিও বৃহস্পতিবার দলের ২২ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে রওশনও শপথ নিয়েছেন। শুধু শপথ নেননি এরশাদ নিজেই। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে তার শপথ নেয়ার কথা আছে। এদিকে এরশাদ নিজের মন্ত্রী পদমর্যাদার কোন পদে এবার থাকতে চান না বলে জানা গেছে। শনিবার এক অভিনন্দন বার্তায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, শেখ হাসিনার চারবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কৃতিত্ব শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়Ñ গণতান্ত্রিক বিশ্বেও বিরল। এটা গণতন্ত্রের জন্যও সম্মানের বিষয়। বার্তায় তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে উন্নয়নের ধারা আরও বেগবান হবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ তাঁর বার্তায় আরও বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে বিরোধী দল সব সময় সরকারকে সহযোগিতা করবে। স্পীকারকে অভিনন্দন ॥ ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদের স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায়Ñ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এক অভিনন্দন বার্তায় এরশাদ আশা প্রকাশ করেন, ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিগত আমলে যে অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে সংসদ পরিচালনা করেছেন তার ধারাবাহিকতা এবারও বহাল থাকবে। রাঙ্গা প্রধান বিরোধী দলের চীফ হুইপ ॥ জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোঃ মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপিকে (রংপুর-১) প্রধান বিরোধী দলের চীফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শনিবার তাকে এ দায়িত্ব দেন। শক্তিশালী বিরোধী দল হতে চায় জাপাÑ জিএম কাদের ॥ জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দেশ ও জনগণের কথা বলতেই সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হতে চায় জাতীয় পার্টি। সংসদ পরিচালনায় যেন কোন ঘাটতি না থাকে, সে কথা বিবেচনা করেই জাতীয় পার্টি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা রাখবে। শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে এক অনির্ধারিত ব্রিফিংয়ে তি এসব কথা বলেন। জি এম কাদের বলেন, সংসদীয় দল ও প্রধান বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করবেন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলীয় চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদে জাতীয় পার্টির কোন সদস্য থাকবে না। দেশের স্বার্থে যে কোন সংস্কার ও সংশোধনে জাতীয় পার্টি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। জি এম কাদের বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভাল আছেন। স্পীকারের সঙ্গে সময় নির্ধারণ করে মুহম্মদ এরশাদ দ্রুতই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিবেন। এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সুনীল শুভ রায়, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, সোলায়মান সামি, রেজাউল করিম, আবু নাসের বাদল, জেসমিন নুর প্রিয়াংকা, আবদুস সাত্তার প্রমুখ। ‘বিরোধী দল নাকি সরকারে’ নির্বাচনের পর থেকে এ সিদ্ধান্ত নিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতারা। টানা কয়েকদিন এই ইস্যুতে হইচই চলার পর অবশেষে গত শুক্রবার মুখ খুলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ না দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন তিনি। যদিও তার এ সিদ্ধান্তের পর জাপায় নানামুখী আলোচনা চলছে। দলের অনেক সংসদ সদস্য ও তিনজন মন্ত্রীর সবাই সরকার ও বিরোধী দলে থাকার পক্ষে। তারা চান এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে চূড়ান্ত ফয়সালা হোক। দশম সংসদে একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থেকে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ আখ্যা পাওয়া জাতীয় পার্টির কোন সংসদ সদস্য এবার মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত হবেন না বলে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত এসেছে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ। বিএনপি ও শরিকরা দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ৩৪টি ও সংরক্ষিত মিলিয়ে ৪০ আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় বসে। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ হন বিরোধীদলীয় নেতা। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি থেকে একজনকে মন্ত্রী এবং দুজনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে তিনি করে নেন নিজের ‘বিশেষ দূত’। পরস্পরবিরোধী ওই অবস্থানের কারণে সংসদের মেয়াদের পুরোটা সময় সমালোচনায় বিদ্ধ হয় জাতীয় পার্টি। এরশাদের কথাতেও এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ পায় বিভিন্ন সময়ে। এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৯টি আসন পায়। আর তাদের জোটসঙ্গীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ২২টি এবং শরিক অন্য দলগুলো আটটি আসন পায়। অন্যদিকে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সব মিলিয়ে সাতটি আসন পাওয়ায় তাদের সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়। তবে সংবিধান অনুযায়ী যে দল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাবে তারাই বিরোধী দল গঠন করতে পারবে। এক্ষেত্রে আসন সংখ্যার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তৃতীয় জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনে মহাজোটে অংশ নেয়ায় সরকার ও বিরোধী দলে থাকতে কোন সমস্যা নেই।
×