ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাল শপথ গ্রহণ

মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ কারা- সবার দৃষ্টি শেখ হাসিনার দিকে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ কারা- সবার দৃষ্টি শেখ হাসিনার দিকে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অপেক্ষার পালা শেষ। আগামীকাল সোমবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বঙ্গভবনে শপথ নেবেন ভূমিধ্বস বিজয়ী আওয়ামী লীগের নতুন মন্ত্রিসভা। পুরো দেশবাসীর দৃষ্টি এখন গণভবনে। ইতিহাসের নজির সৃষ্টি করে টানা তিনবার বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী পাঁচ বছরে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে কেমন মন্ত্রিসভা আনছেন, তা দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় পুরো দেশের মানুষ। সবাই মন্ত্রী হতে চান। এত চাহিদার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কাকে কাকে বেছে নেবেন, আর কাকেই বা বাদ দেবেন, এ নিয়ে আলোচনার যেন শেষ নেই। অন্যদিকে বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যেমন অধিক আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন কখন আসবে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে শপথ নেয়ার সেই কাক্সিক্ষত টেলিফোন। তেমনি মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা সাবেক মন্ত্রী ও মনোনয়নবঞ্চিত নেতারাও অপেক্ষা করছেন হয়ত এবার তাদের ভাগ্য খুলবে। আগামীকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় শপথ নেবেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা। বঙ্গভবনে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে রেকর্ডসংখ্যক চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর সহকর্মী হিসেবে বেছে নেয়া পূর্ণমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা একে একে শপথ নেবেন রাষ্ট্রপতির কাছে। শপথের জন্য পুরো প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে বঙ্গভবন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও মন্ত্রিসভার শপথের কাগজপত্র তৈরির কাজও শেষ করেছে। শনিবার সরকারী ছুটির দিনও শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে এ বিভাগের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ। কাল সোমবার সকাল থেকেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় স্থান পাওয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের কাছে শপথ নেয়ার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হবে। পাঠানো হবে মন্ত্রীদের ব্যবহারের জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড লাগানো সরকারী গাড়ি। শপথ গ্রহণ শেষে পতাকা উড়িয়ে বঙ্গভবন থেকে বের হবেন ভাগ্যবান মন্ত্রীরা। প্রবীণের অভিজ্ঞতা এবং নবীনের প্রতিভার সংমিশ্রণ ঘটিয়েই চমক সৃষ্টির মতো করা মন্ত্রীপরিষদ জাতিকে উপহার দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার মহাজোটের সরকার নয়, চৌদ্দ দলের সরকার গঠন করছেন তিনি। কেননা জাতীয় পার্টি দশম জাতীয় সংসদের মতো সরকারের মন্ত্রিসভায় কেউ থাকছেন না। দ্বিতীয়বারের মতো এবার দলটি স্বাধীন বিরোধী দল হিসেবেই জাতীয় সংসদে দেখা যাবে। দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চৌদ্দ দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার আকার এবার একটু বাড়তে পারে। এ নিয়ে দলের হাতে গোনা কিছু সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথাও বলছেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসীর ঐতিহাসিক গণরায়ের প্রতি সম্মান রেখে প্রবীণ নেতাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নবীনদের মেধার সমন্বয় ঘটিয়েই বঙ্গবন্ধুর কন্যা তৈরি করছেন নতুন মন্ত্রিসভা। এক্ষেত্রে কিছু সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যেমন বাদ পড়ার আভাস পাওয়া গেছে, তেমনি চমক দেয়ার মতো বেশকিছু নবীন সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন। তবে দলটির নানা সূত্রই আভাস দিয়েছেন, দলের প্রবীণ ও সিনিয়র মন্ত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই পুনরায় মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন। তবে কয়েকজনের মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করা হতে পারে। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় বড় চমক থাকছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সেই আভাসই দিয়েছেন। চমকের একটি অংশ হচ্ছে দফতর বদল; অপর অংশ হচ্ছে বাদ পড়া এবং নতুন অন্তর্ভুক্তি। দশম সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভাও এ ধরনের চমক ছিল। গত পাঁচ কিংবা দশ বছরে যেসব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর ‘পারফরম্যান্স’ সন্তোষজনক নয় তাদের মধ্যে কয়েকজনের দফতর বদল এবং কয়েকজনকে বাদ দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে টানা তিন থেকে চারবার সংসদ সদস্য হয়েও মন্ত্রী হতে পারেননি কিংবা নবম জাতীয় সংসদে মন্ত্রিত্ব পেলেও দশম জাতীয় নির্বাচনের পর মন্ত্রিত্ব হারান- এমন অনেককেই এবার নতুন মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে। এছাড়া তরুণদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেও চমক দেখাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে নানা সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে, নতুন মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পরিবর্তন না আসলেও মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে ১০ থেকে ১৫ জন নতুন মুখ। শুরুতে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা নাও গঠন করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামীকাল সোমবার ৪০ থেকে ৫০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী শপথ নিতে পারেন। পরবর্তীতে মন্ত্রিসভার আকার আরও কিছুটা বাড়তে পারে। পরবর্তী সময়ে বা বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতেই ৮ থেকে ৯টি মন্ত্রীর পদ ফাঁকা রয়েছে। দশম জাতীয় সংসদে টেকনোক্র্যাট কোঠায় মন্ত্রী হওয়া অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং নুরুল ইসলাম বিএসসি নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। এছাড়া ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। জাতীয় পার্টির বর্তমান মন্ত্রিসভায় তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। দলটির প্রধান এইচ এম এরশাদ শুক্রবার ঘোষণা দিয়েছেন, তার দল জাতীয় পার্টি এবার বিরোধী দলের আসনে বসবে। এবার তার দলের কেউ মন্ত্রিত্ব নেবে না। এছাড়া বর্তমানে অন্তত তিনজন মন্ত্রী রয়েছেন, যারা বয়সের ভারে ন্যূব্জ। তাই আগামী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অধিক বয়সের কারণে অধিক চাপ নিতে পারা এসব মন্ত্রীরা এবার বাদ পড়তে পারেন। আর সর্বশেষ বর্তমান জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন। এই অবস্থায় ১১ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদ এমনিতেই ফাঁকা রয়েছে। ফলে এই দশটি মন্ত্রণালয়ে এবার নতুন মুখ আসতে পারে। তবে বাদ পড়া কয়েকজন মন্ত্রীর মধ্যে দু’একজনকে টেকনোক্র্যাট কোঠায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলেও সূত্রগুলো আভাস দিয়েছেন। জানা গেছে, আজ রবিবার থেকেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীদের ফোন দেয়া শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদে থাকা মন্ত্রীদের আগে ফোন দেয়ার পর নতুনদের শপথ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হবে। নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী কে হচ্ছে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোমধ্যে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মত থাকলে আরও এক বছর অর্থমন্ত্রী পদে থাকার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন তিনি। আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে আরও অন্তত তিনজনের নাম আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। তবে এবারের মন্ত্রিসভা সম্পর্কে দলের সকল শীর্ষ নেতাই কথা বললেও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দেননি। মোটামুটি সবার একই কথা- কে মন্ত্রী হবেন, কে বাদ পড়বেন, কী চমক থাকবে- এসব দলের প্রধান শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদী সরকার প্রধানের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নারী সরকার প্রধানের স্থান অর্জন করতে যাচ্ছেন। চতুর্থবারের মতো (টানা তৃতীয়বার) প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ তিনিই পড়াবেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংবিধানের চতুর্থ ভাগের (নির্বাহী বিভাগ) ২য় অনুচ্ছেদের দফা (১)-এ বলা আছে- ‘একজন প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকিবেন।’ এছাড়া দফা (২)-এ বলা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদিগকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করিবেন।’ দফা (৩)-এ বলা আছে- ‘যে সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হইবেন, প্রধানমন্ত্রী তাহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন’। সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীদের সংখ্যার অন্যূন নয়-দশমাংশ সংসদ-সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মনোনীত হতে পারবেন, যা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল ১২ জানুয়ারি। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধান করে ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল। পরে কয়েক দফা রদবদল এনে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যে। উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের ফলে ২৯৮ আসনের মধ্যে এককভাবেই ২৫৭টি আসনে জয় পায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে (মহাজোট) তারা পায় ২৮৮ আসন। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ২২, ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, জাসদ দুই অংশে তিনটি, বিকল্পধারা দুইটি, তরিকত ফেডারেশন একটি ও জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) একটি আসনে জয়ী হয়। মহজোটের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোট সঙ্গীরা সব মিলিয়ে পায় সাতটি আসন। আর স্বতন্ত্র তিনজন এবার বিজয়ী হয়ে সংসদে এসেছেন।
×