ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুরুতেই হোঁচট খেল রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

শুরুতেই হোঁচট খেল রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকার সড়কে চালু হওয়া রিমোট কন্ট্রোল ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ৬টি ট্রাফিক সিগন্যাল হস্তান্তর করা হলেও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। পরীক্ষামূলক চালুর পরপরই ফের নানা ত্রুটি দেখা দিয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে, বৃষ্টি ও কারিগরি ত্রুটির কারণে সমস্যাটি দেখা দেয় যা এরই মধ্যে সমাধান করা হয়েছে। অপরদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনও টাইমিংয়ে সমস্যা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যানজট নিরসনে ২০০১-০২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২টি ট্রাফিক ইন্টারসেকশনের ৮৮টি আধুনিক কাউন্টডাউন ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের মাধ্যমে সিগন্যাল বাতিগুলো স্থাপন করে সিটি কর্পোরেশন। পরবর্তীতে এগুলোকে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের আওতায় আনা হয়। কিন্তু নানা ধরনের ত্রুটির কারণে নির্মাণ শেষে এগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। এতে যে সময় নির্ধারণ করে দেয়া ছিল তার সঙ্গে বাস্তব যানবাহনের পরিসংখ্যানের কোন সামঞ্জস্য ছিল না। সে কারণে কয়েকবার পরীক্ষামূলকভাবে ট্রাফিক বাতি চালু করা হলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। এর আগে গত ৪ নবেম্বর, প্রকল্প পরিচালক ও ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম নগরীর ৬টি ট্রাফিক সিগন্যালের রিমোট কন্ট্রোল পরিচালনার জন্য বুঝে নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারকে (ট্রাফিক) চিঠি দেন। ওই স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ইন্টারসেকশন, কদম চত্বর ইন্টারসেকশন, মৎস্য ভবন ইন্টারসেকশন, কাকরাইল মসজিদ ইন্টারসেকশন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ইন্টারসেকশন ও শাহবাগ ইন্টারসেকশন। এছাড়া আরও চারটি সিগন্যাল বাতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত ৫ ও ৬ ডিসেম্বর চূড়ান্তভাবে ৬টি সিগন্যাল বাতি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পরেও এর কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ পুলিশের। রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থার মাধ্যমে মূলত দুটি বিষয় ঘটবে, তা হচ্ছে সময় ও বাতি নিয়ন্ত্রণ। গাড়ির চাপ অনুযায়ী দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সিগন্যালের সময় ডিজিটাল ডিসপ্লেতে দেখানো হবে। ফলে চালকরা বুঝতে পারবেন কতক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করতে হবে। আরেকটি হলো, রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থাতেই সিগন্যালের বাতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এতদিন পর্যন্ত এগুলো যেভাবে সেট করে দেয়া হতো সেভাবেই চলতো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকার পর রাজধানীর সিগন্যাল বাতিগুলো মেরামত করে পুরো সিগন্যাল ব্যবস্থাটি রিমোটের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে যানবাহন চালানোর উদ্যোগ নেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এজন্য পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। সে কারণে সংস্থা দুটি কাজও শুরু করেছে। এর আগে কয়েকটি পয়েন্টে পরীক্ষামূলক স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতিতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা সফলতার মুখ দেখেনি। এবার যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের জন্য এরই মধ্যে কন্ট্রোলারের ডায়াগ্রামের পরিবর্তন আনা হয়েছে। রিমোট সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডায়াগ্রামের পরিবর্তন করা হয়। এজন্য বিদেশ থেকে ইতোমধ্যেই সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৪টি রিমোট কেনা হয়েছে। প্রতিটি ইন্টারসেকশনের জন্য থাকছে দুটি রিমোট। কয়েকটি যন্ত্রও পরিবর্তন করতে হচ্ছে। জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার, ট্রাফিক (দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিগন্যালগুলো আমরা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছি। তবে ত্রুটির কারণে সিগন্যালগুলো থেকে এখনও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল ছয়টি সিগনালের মধ্যে পাঁচটিই নষ্ট ছিল। দুই-একদিনের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে। তিনি জানান, মূল সমস্যা কন্ট্রোল প্যানেলে। এছাড়া সিগনালগুলোতে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করা হবে সে বিষয়ে কিছুই বলা নেই। লাল, সবুজ সিগন্যাল বাতিগুলো কত সময় জ্বলবে এবং কীভাবে পথচারী পারাপার হবে সে বিষয়গুলোও সিগন্যালে সংযুক্ত করা হয়নি। প্রকল্প পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে মৎস্য ভবন ইন্টারসেকশনে হলুদ বাতি জ্বলেছিল, কদম চত্বর ইন্টারসেকশনে লাইন আর্থিং হয়েছিল এবং কাকরাইল মসজিদের কাছে একটি তার বিচ্ছিন্ন ছিল। এটি একটি মেকানিক্যাল ও টেকনিক্যাল সমস্যা। ঠিকাদারদের দিয়ে দ্রুত লাইনগুলো ঠিক করে দিয়েছি।’ এ বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রিমোটের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা একটি বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ। কোন পরিকল্পনা ছাড়া এগুলো করলে তা মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ এটি পরিচালনার জন্য লোকবল নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়া দরকার, যার কোনটিই এখানে করা হয়নি। তাই প্রকল্প শেষে এ বিষয় কারও কোন আগ্রহ থাকবে না। এ কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এ পদক্ষেপ থেকে কোন সুফল আসবে না। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে রাজধানীর সিগন্যাল বাতিগুলো চালু করার উদ্যোগ নেয় সিটি কর্পোরেশন। এতে সময়ের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ট্রাফিক পুলিশের কাছে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রিমোটের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এজন্য সিগন্যালগুলোতে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্তমানে দুই সিটি কর্পোরেশনের ৬২টি ট্রাফিক ইন্টারসেকশনের ৮৮টি সিগন্যাল রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনায় আনার কাজ চলছে।
×