ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এমপিদের শপথ অনুষ্ঠানে মুহিতের অনুপস্থিতি দাগ কেটেছে সিলেটে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

এমপিদের শপথ অনুষ্ঠানে  মুহিতের অনুপস্থিতি দাগ কেটেছে সিলেটে

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুপস্থিতিতে বার বার মনে ধাক্কা লেগেছে। এ রকম অনুষ্ঠানে তিনি সাংসদ হিসেবে আর কোনদিন আসবেন সেটাও আশার বাইরে। বয়সই তাকে অবসরের দিকে দ্রুত ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। দাপটের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের উন্নয়ন, জাতির উন্নয়ন, সমাজ উন্নয়ন নিয়ে সদা উজ্জীবিত। এমপিদের শপথ গ্রহণ আর মন্ত্রিসভা গঠনের প্রাক্কালে তাকে বড় বেশিই মনে করছেন সিলেটবাসী। কি দিয়েছেন সেটা থেকে নয়। এমন দৃঢ়চেতা গুণী মানুষের প্রয়োজন। তিনি স্পষ্টবাদী। বিভিন্ন সময়ে তার বিভিন্ন বক্তব্য আলোচনায় এসেছে। তিনি রস করে কথা বলেন। রসের কারণে অনেক সময় তার কঠিন কথাও সহজে নেয়া যায়। বাংলায় অসংখ্য শব্দের মধ্যে রাবিশ একটি শব্দ। সুধীমহলে এই ‘রাবিশ’ শব্দটি অধিক পরিচিতি পেয়েছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কারণে। তার স্বভাবসুলভ আচরণে ‘রাবিশ’ শব্দটি আলাদা রূপ পেয়েছে। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে না থাকলে হয় তো এমন কথা শুনার ক্ষেত্র তৈরি হবে না। মন্ত্রীর ‘রাবিশ’ শব্দটি খারাপ অর্থে নয় বরং রস করার ক্ষেত্রেই এখন মাঠে-বন্দরে উচ্চারিত হয়। বিভিন্ন সময়ে সুধী মহলে কখনও কোন ক্ষেত্র তৈরি হলে একে অপরের প্রতি রাবিশ শব্দ ব্যবহার করেন। পরক্ষণেই যেন মনে হয় এই শব্দের মালিক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শুধু তিনিই সেটা ব্যবহার করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপযুক্ত সম্মান দিয়ে তাকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তিনিও দায়িত্ব পালন করেছেন সুচারু রূপে। তার সময়ে সিলেটে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের সফল অর্থমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সরকারে তিনি একজন দাপুটে মন্ত্রী। সিলেটবাসী তাকে নিয়ে গর্ব করে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করবেন এটাই সিলেটবাসীর প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটবাসীর প্রতি সব সময় আন্তরিক। ৭৫ পরবর্তী কাল থেকে অধিকাংশ সময়েই অর্থ মন্ত্রণালয় ছিল সিলেট অঞ্চলের হাতে। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর দায়িত্বভার গ্রহণের মধ্যদিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যাত্রা শুরু হয়। জানুয়ারি ৭২ থেকে ১৬ মার্চ ৭৩ পর্যন্ত তাজউদ্দীন, তারপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৬ মার্চ থেকে ২৬ অক্টোবর ৭৪ পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২৬ অক্টোবর ৭৪ থেকে ২৬ নবেম্বর ৭৫ পর্যন্ত ড. এ আর মল্লিক ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৭৫ থেকে ৮০ পর্যন্ত বিএনপির ড. মির্জা নুরুল হুদা দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ৮২ পর্যন্ত সাইফুর রহমান ও মধ্যে ৩ মাসের মতো ড. ফসিহ উদ্দিন মাহতাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত ৩১ মার্চ ৮২ থেকে ৯ জানুয়ারি ৮৪ পর্যন্ত এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৯৬ থেকে ২০০১ আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী ছিলেন শাহ এমএস কিবরিয়া। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সাইফুর রহমানের হাতে আসে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর ৬ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে আজ পর্যন্ত পথ চলে যাচ্ছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারে আসার পর অর্থ মন্ত্রণালয় সিলেটীদের হাতছাড়া হয়নি। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলে সবচেয়ে আনন্দিত। সিলেটী প্রবাসীদেরও প্রত্যাশা তাই। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে সিলেটে অর্থমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ মন্ত্রী কোটা বর্ধিত করার দাবি জানানো হচ্ছে। সিলেটের ৬ আসনের মধ্যে ৫টি আসনই আওয়ামী লীগের দখলে। সিলেট-১ আসনে একে আবদুল মোমেন এবারই প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে জয় পেয়েছেন। সিলেট-৩ আসনে মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী কয়েস, সিলেট-৫ আসনে হাফিজ মজুমদার, সিলেট-৬ আসনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তৃতীয় বারের মতো ও সিলেট-৪ আসনে ষষ্ঠবারের মতো ইমরান আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সিলেট-৪ আসনসহ উত্তর সিলেট জোড়ে ইমরান আহমদকে মন্ত্রিসভায় রাখার স্বপক্ষে দাবি উঠছে। ১৯৮৬ সালে সিলেট-৪ আসনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইমরান আহমদ। এরপর তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সর্বশেষ এমপি হিসেবে সিলেট-৪ আসনে তিনি বেশ কিছু জননন্দিত মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। তার বাস্তবায়িত উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে এ আসনের ৩ উপজেলা জোড়ে অগণিত নতুন বিদ্যাপিটের যাত্রা, অগণিত বিদ্যালয়সমূহে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কমপ্লেক্স, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাড়ি নির্মাণ, নতুন রাস্তাঘাট তৈরি, চিকিৎসা সেবায় অগণিত কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় এ্যাম্বোলেন্স প্রদানসহ জটিলতা নিরসন, জাফলং সেতু, বাংলাদেশের মধ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে গৃহীত সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়ক, হাইটেক পার্ক, গোয়াইনঘাট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরণ, গোয়াইনঘাট কলেজকে সরকারীকরণ, জৈন্তাপুর ইমরান আহমদ মহিলা কলেজকে সরকারীকরণ, তিন উপজেলাজুড়ে প্রায় ঘরে ঘরে বিদ্যুত সরবরাহ, আইনী এবং প্রশাসনিক জটিলতায় আবদ্ধ থাকা অত্রাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের কর্মস্থান পাথর কোয়ারীর অচলাবস্থা নিরসন, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লালাখালসহ পর্যটন বেষ্টিত সিলেট-৪ আসনের পর্যটন সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে তার চিন্তাভাবনা প্রশংসিত হচ্ছে।
×