ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শোকার্ত কিশোরগঞ্জবাসী

সৈয়দ আশরাফ বিউটি অব পলিটিক্স

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

 সৈয়দ আশরাফ বিউটি অব পলিটিক্স

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফকে হারিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো শোকে মুহ্যমান কিশোরগঞ্জ জেলাবাসীও। এছাড়া, এই জনপ্রিয় ও নির্লোভ নেতার মৃত্যুতে দলমত নির্বিশেষে গোটা জাতি শোকাহত। জাতীয় রাজনীতিতে সৎ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী এই নেতার মৃত্যু শুধু তার নিজ দল ও জেলাবাসীকেই শোক সাগরে ভাসিয়ে দেয়নি, তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বরিশাল ও ঝালকাঠীতে বিরাজ করছে শোকের আবহ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের (৬৭) মৃত্যুতে শোকের ছায়া বইছে তার নিজের জেলা কিশোরগঞ্জে। দলের দুর্দিনের কা-ারি মহান এ নেতাকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। দলমত নির্বিশেষে এলাকার মানুষেরা বলছেন, সৈয়দ আশরাফ ছিলেন একজন বিরল রাজনীতিবিদ। তার মতো নির্মোহ, সৎ ও সাহসী রাজনীতিবিদ বারবার জন্মান না। ব্যতিক্রম গুণাবলির অধিকারী সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবরে জেলাবাসীর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতোই। যেন কিছুতেই তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তারা। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বলা হয়ে থাকে ‘বিউটি অব পলিটিক্স’। দলের সাংগঠনিক কর্মকা-, প্রশাসনিক দায়িত্বে দৌড়ঝাঁপ দৃশ্যমান নয় অথচ দলের ভেতরে-বাইরে জনপ্রিয়তায় ঈর্ষণীয় এমন রাজনীতিবিদ কোন দলেই সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি। সৈয়দ আশরাফের এই কারিশমার রহস্য কারো জানা নেই। বিষয়টি সবার কাছেই বিস্ময়কর! কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত এমপি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ অবস্থাতেই গেল নির্বাচনে আবারও তাকে দলীয় মনোনয়ন দেন শেখ হাসিনা। আর তার অনুপস্থিতেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুরবাসী। নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন এখনো ঝুলছে তার সংসদীয় এলাকায়। এখনও শেষ হয়নি আনন্দের রেশ। এরই মধ্যে শোকের ছায়া পুরো শহরজুড়ে। প্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফকে হারিয়ে শোকে কাতর কিশোরগঞ্জবাসী। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এম.এ আফজাল বলেন, সৈয়দ আশরাফ লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে দলের হাল ধরেছেন। এ ক্ষতি কোন অবস্থাতেই পূরণ হওয়ার নয়। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে দেশ একজন মহান নেতাকে হারাল। তিনি সকল দলের নেতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তার সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তিতে রাজনীতি করতে পেরেছেন। জেলা সিপিবির সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এনামুল হক তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সৈয়দ আশরাফের মতো নির্মোহ ব্যক্তি এ যুগে সত্যিই বিরল। তিনি শুধু দেশের নয়, ছিলেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন রাজনীতিবিদ। তার মৃত্যুতে দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর স্ত্রী শীলা ইসলামের মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর একই বছরের ৩ জুলাই ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি হন। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি জাতীয় সংসদ থেকে তিন মাসের ছুটি নেন। এ অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। কিন্তু শপথ নেয়ার আগেই চিরবিদায় নেন সৈয়দ আশরাফ। দু’বছর আগে জেলা আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টিতে অংশ নিতে কিশোরগঞ্জ এসেছিলেন। এত বড় মাপের একজন রাজনীতিবিদ হলেও কিশোরগঞ্জ শহরে তার নিজের কোন বাড়ি নেই। কিশোরগঞ্জে এলে উঠতেন শহরের খড়মপট্টি এলাকায় চাচার বাসায়। প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান আত্মীয়স্বজনও। স্ত্রী শীলা ইসলামের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই প্রিয় নেতাকে হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিবারের লোকজন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৯৬ সাল থেকে টানা পাঁচবার কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার একমাত্র মেয়ে সৈয়দা রীমা ইসলাম লন্ডনে একটি ব্যাংকে কর্মরত। মৃত্যুকালে তিনি তিন ভাই ও দুই বোন রেখে গেছেন। আজ শনিবার বিকেলে থাইল্যান্ড থেকে তার মরদেহ দেশে আনার কথা রয়েছে। চট্টগ্রামে শোকের ছায়া ॥ চট্টগ্রাম অফিস জানায়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনেও শোকের ছায়া নেমে আসে। সজ্জন ও মিতভাষী এই রাজনীতিকের প্রয়াণে দলমত নির্বিশেষে সকলেই শোকাহত। সকলেই মানছেন যে, সৈয়দ আশরাফ ছিলেন দেশের রাজনীতিতে বিশুদ্ধ একজন মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এক বিবৃতিতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কা-ারি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি আজীবন মানুষ ও দেশের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করেছেন। তার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ একজন প্রজ্ঞাবান নেতাকে হারাল, আর দেশ হারিয়েছে একজন দেশপ্রেমিককে। এ ক্ষতি কখনই পূরণ হবার নয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসন থেকে নির্বাচিত সকল সংসদ সদস্যই এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া অত্যন্ত সৎ এই রাজনীতিবিদদের মৃত্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও শোকাহত মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে পুরোদিন মানুষের আবেগে ও মুখে মুখে ছিল সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নামটি। সকলেরই এক কথা, সততার উদাহরণ এমন রাজনীতিবিদ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্লভ। বরিশালের এমপি ও মেয়রের শোক ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বরিশালের সংসদ সদস্যগণ ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। যৌথ বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশাল-২ আসনের সাংসদ মোঃ শাহে আলম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনের সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৪ আসনের সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ, বরিশাল-৫ আসনের সাংসদ কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামিম, বরিশাল-৬ আসনের সাংসদ নাসরিন জাহান রতনা গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন। ঝালকাঠিতে ছাত্রলীগের দোয়া ও মিলাদ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ঝালকাঠি থেকে জানান, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে ঝালকাঠিতে দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় শহরের টাউন হলের দলীয় কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে এখানে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচী স্থগিত করে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে দোয়া অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম জাকির, হাফিজ আল মাহামুদ ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আল-আমিন। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বাদ জুমা শহরের বিভিন্ন মসজিদে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।’
×